ফুটবল এবার অস্ট্রেলিয়াও জয় করতে চলেছে
২০ এপ্রিল ২০১৩এককালে ইউরোপের নামি-দামি ফুটবল খেলোয়াড়রা ক্যারিয়ারের শেষের দিকে ভালো পারিশ্রমিক পেলে মার্কিন মুলুক কি জাপানে যেতে রাজি থাকতেন৷ তারপর চীন অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের মুখ দেখবার পর সেদেশও ঐ মহাজনপন্থা অনুসরণ করতে শুরু করেছে: ইউরোপ থেকে ভালো, পুরনো প্লেয়ার লোভনীয় পারিশ্রমিক দিয়ে ধরে এনে নিজেদের ক্লাব ফুটবলের মান ও জনপ্রিয়তা বাড়ানো৷ তা চীনে যদি সেটা করা সম্ভব হয়, তাহলে অস্ট্রেলিয়াই বা বাদ যাবে কেন?
অস্ট্রেলিয়ার মুশকিল অনেক৷ প্রথমত তার ভৌগোলিক অবস্থান, ইংরিজিতে যাকে বলে ‘ডাউন আন্ডার' – পৃথিবীর মানচিত্রের তলার দিকে কোথাও একটা! দ্বিতীয়ত, অস্ট্রেলিয়ায় যে তিনটি খেলা বড় মাপে চালু আছে, সেগুলি হল মার্কিন ফুটবল, রাগবি এবং ক্রিকেট৷ তাহলে ফুটবলের জায়গা হবে কোথা থেকে?
ব্যাপারটা অন্যরকম দাঁড়ায় যখন থিয়েরি অঁরি কিংবা আলেস্সান্দ্রো দেল পিয়েরোর মতো সাবেক চৌম্বক-শক্তিদের ডাউন আন্ডারে মাঠে নামানো হয়৷ তখন প্রমাণ পাওয়া যায় যে, অস্ট্রেলিয়াতেও স্পোর্ট-পাগল জনতাকে অ্যামেরিকান ফুটবল, রাগবি ও ক্রিকেটের মোহ কাটিয়ে ফুটবল স্টেডিয়ামে আনা সম্ভব৷
আনা? ফুটবল স্টেডিয়াম ভরানো, বলা চলতে পারে৷ তবে তার কারণ থিয়েরি-দেল পিয়েরোদের পায়ের খেলই নয়৷ বস্তুত অস্ট্রেলীয়রা নিজেরাই ফুটবল খেলাটাকে ভালোবেসে ফেলেছে৷ আজ যতো অস্ট্রেলীয় রাগবি কি ফুটবল খেলে, তাদের চেয়ে বেশি সংখ্যক অস্ট্রেলীয় ফুটবল খেলে৷ অর্থাৎ স্কুল-কলেজে, মাঠেঘাটে অপেশাদারি ফুটবল খেলা অস্ট্রেলীয়দের সংখ্যা রাগবি আর ক্রিকেট মিলিয়ে যা হয়, তার চেয়ে বেশি!
এটা ঘটল কি করে? অস্ট্রেলিয়ার জনগণের একটা বড় অংশ এখন এশীয়৷ তাদের ঝোঁক এমনিতেই ফুটবলের দিকে৷ দ্বিতীয়ত, রাগবি খেলার জন্য যে ধরনের দশাসই চেহারা চাই, সেটা আছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলির বাসিন্দাদের – কিন্তু হাল্কা-পল্কা, ছোটখাট এশীয়দের নয়৷ তাই ফুল-কনট্যাক্ট রাগবি খেলতে গিয়ে হাড়গোড় ভাঙার চাইতে এশীয় বাবা-মায়েরা তাদের কচিকাঁচাদের হাফ-কনট্যাক্ট ফুটবল খেলতে দিতেই বেশি পছন্দ করেন৷
বাকি রইল স্টেডিয়ামে দর্শক টানার প্রশ্ন৷ অস্ট্রেলিয়ার এ-লিগের বয়স আজ সাকুল্যে আট বছর৷ তাদের খেলার মান কিন্তু দেল পিয়েরোকেও চমকে দেওয়ার মতো৷ দেল পিয়েরোর নিজের ক্লাব সিডনি এফসির খেলাগুলিতে এ মরশুমে মাঠে গড়ে দর্শক ছিল ১৮ হাজারের বেশি৷ দশটি টিমের এ-লিগ ধরলে সেই গড় দাঁড়ায় ১২ হাজারের কিছু বেশিতে৷ মনে রাখতে হবে, অনেক ত্রিশ বছরের পুরনো রাগবি ক্লাবের খেলাতেও এমন দর্শকের ভিড় হয় না৷ টেলিভিশনে এ-লিগের ম্যাচগুলি দেখে খেলা প্রতি প্রায় আট লাখ দর্শক৷
সব মিলিয়ে এটাই প্রমাণ হয় যে, বিশ্ব যতো ছোট হচ্ছে, ফুটবল ততোই বড় হচ্ছে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ)