প্লেবয় ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতার চিরবিদায়
বিশ্বখ্যাত ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা হিউ হেফনার কিছুদিন আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন৷ তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর৷ কেউ তাঁকে ভালোবাসে, কেউ হয়ত ঘৃণা করে – তবে বাস্তবতা হচ্ছে, প্রকাশনায় আধুনিকতা এনেছিলেন তিনি৷
মেরিলিন মনরোকে দিয়ে শুরু
১৯৫৩ সালে প্লেবয় ম্যাগাজিনের উদ্বোধনী সংখ্যার প্রচ্ছদে মেরিলিন মনেরোর একটি পুরনো ছবি স্থান পায়৷ ষাটের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যৌন বিপ্লব ঘটিয়েছে এই ম্যাগাজিন৷
নতুন ধারার সাংবাদিকতা
অনেকে মজা করে বলেন যে, মানুষ প্রতিবেদন পড়ার জন্য ‘প্লেবয়’ পড়েন, যদিও ম্যাগাজিনটি নগ্ন ছবি প্রকাশের জন্য বিখ্যাত৷ তবে এতে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, তা দীর্ঘ এবং ভালোভাবে সম্পাদিত৷ যাঁরা এতে স্বনামে লিখতেন, তাঁদের মধ্যে হান্টার এস. টম্পসন (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) এবং ট্রুম্যান ক্যাপোট বিখ্যাত৷
লেখকদের স্বপ্ন
প্লেবয় ম্যাগাজিনের জনপ্রিয়তা বাড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছিলেন মার্গারেট অ্যাটউড এবং হারুকি মুরাকামির মতো নামী লেখকরা৷ ম্যাগাজিনটির জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এতে লিখতে আগ্রহী লেখকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে৷ অনেকের কাছে সেখানে লেখা প্রকাশ ছিল স্বপ্ন সত্য হওয়ার মতো ব্যাপার৷
যুগান্তকারী ফটোগ্রাফি
৬৩ বছর ধরে ম্যাগাজিনটি বিক্রি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এতে প্রকাশিত নারীদের নগ্ন ছবি৷ ম্যাগাজিনটির প্রতিষ্ঠাতা হিউ হেফনার এক অনন্য জীবনযাপন করতেন৷ তিনি অনেক যুবতীর সঙ্গে ডেটিং এবং সহবাস করেছেন, যাদের ছবি বিভিন্ন সময় ‘প্লেবয়ে’ প্রকাশিত হয়েছে৷ অ্যানি লিবোভিৎস এবং হেলমুট নিউটনের (যার তোলা একটি ছবি উপরে দেখা যাচ্ছে) মতো আলোকচিত্রীরা ম্যাগাজিনটির জন্য কাজ করেছেন৷
ছবি সম্পাদনার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন
ইলেক্ট্রনিক ছবি সম্পাদনার এক প্রতীকে পরিনত হয় প্লেবয়-এর ১৯৭২ সালের নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত এই ছবিটি৷ কেটে ছোট করা লেনা স্যোডারব্যার্গের এই ছবিটি ভুল করে ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল৷ অথচ সেটি কিনা কম্পিউটারের ইতিহাসে অন্যতম ব্যবহৃত ছবিতে পরিনত হয়ে গেল!
গ্যুটেন টাগ, ক্যাথরিনা!
বেশ কয়েকটি ভাষায় প্রকাশিত ‘প্লেবয়’ ম্যাগাজিনের জার্মান ভাষায় যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে৷ নগ্নতা নিয়ে যেহেতু জার্মানদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন, তাই মার্কিন মুল্লুকে প্লেবয় যতটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে, জার্মানদের কাছে ততটা পায়নি৷ জার্মানিতে ম্যাগাজিনটির অন্যতম সফল একটি সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে৷ এতে তখনকার ওয়ার্ল্ড ফিগার স্কেটিং চ্যাম্পিয়ন কাটারিনা ভিটের একটি নগ্ন ছবি প্রকাশ হয়েছিল৷
সমালোচনার জবাবে নতুন ম্যাগাজিন
শুধুমাত্র মেয়েদের নগ্ন ছবি প্রকাশ করা হয় বলে ম্যাগাজিনটির বিরুদ্ধে মেয়েদের ‘পণ্য’ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে৷ সেই অভিযোগের জবাবে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৩ সালে ‘প্লেগার্ল’ প্রকাশ শুরু করে, যেখানে শুধু পুরুষের নগ্ন ছবি প্রকাশ করা হতো৷ কামোদ্দীপক নগ্ন ছবি প্রকাশের ক্ষেত্রে নতুন এক ধারার সূচনা করে নারীদের জন্য প্রকাশিত ম্যাগাজিনটি৷
নগ্নতা থেকে সরে যাওয়া, ফিরে আসা
২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে এক বিশেষ ঘোষণা প্রকাশ করে প্লেবয়৷ ম্যাগাজিনটিতে আরো কোনো পূর্ণাঙ্গ নগ্ন ছবি প্রকাশ করা হবে না৷ মালিকপক্ষ চাচ্ছিল ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’-এর মতো ম্যাগাজিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে৷ কিন্তু কিছুদিন আগে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে ম্যাগাজিনটি৷ এটির প্রতিষ্ঠাতা হিউ হেফনার বুধবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন৷