প্লিজ, ন্যাকামি করবেন না, ফলাফল ভয়ংকর!
কাউকে দেখে একটু হাসি বা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে সবারই ভালো লাগে৷ তবে তা যদি শুধু লোক দেখানো, কৃত্রিম বা জোর করে হাসা বা অন্য কোনো মেকি কাজ করা হয়, তাহলে তার ফল হতে পারে ভয়ংকর৷ এমনটাই বলেছেন মনোবিজ্ঞানীরা৷
শুধুই কি পেশার কারণে?
বিভিন্ন পেশা, অর্থাৎ ব্যাংক, দোকান, হাসপাতাল, গাড়ি চালক, ওয়েটার, টিভি ব্যক্তিত্ব – সোজা কথায় যাঁদের খদ্দেরদের সঙ্গে কাজ করতে হয়, তাঁদের সব সময়ই হাসিমুখ রাখতে হয়৷ অনেকে নিজের পেশার কথা চিন্তা করে হয়ত নিজের অজান্তেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হাসেন বা অতিরিক্ত ভদ্রতা বা বাড়াবাড়ি করেন৷ এতে করে তাঁরা যে মানসিকভাবে নিজেরই ক্ষতি করছেন, তা তাঁরা জানেনই না৷
ন্যাকামি কিন্তু ভদ্রতা নয়!
নিয়মিত ন্যাকামি বা জোর করে অতিরিক্ত ভদ্রতা মানুষকে অসুস্থ করতে পারে৷ কোনো কারণে মন বা শরীর খারাপ, তারপরও অতিরিক্ত ভদ্র সাজা, ঢং বা ন্যাকামি করায় শরীর-মন আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ নিজের আসল অনুভূতিকে চাপা দিয়ে অভিনয় করার কারণেই এমন হয়, বলেন জার্মান মনোবিজ্ঞানী হাইকে স্ট্যুভেল৷
ন্যাকামি যখন অসুখ!
ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী প্রফেসার ডিটার সাফ-এর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ন্যাকামি বা অভিনয় করার সময় যতটা দীর্ঘ হয়, অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও ততটাই বেশি থাকে৷ প্রফেসার সাফের ভাষায়, ‘‘আমাদের আবেগকে আমরা চালাই, আর আবেগকে বেশি দিন চেপে রাখলে তা ভয়ংকর আকার নেয়৷ ফলে যে কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারেন৷’’
মাথাব্যথা, নার্ভাসনেস, ঘুমের সমস্যা
অনেকেই অকারণে ভদ্রতা বা বেশি ভালোমানুষি দেখাতে গিয়ে পরে এমন পরিস্থিতিতেও হেসে ফেলেন, যা পরিস্থিতির সাথে মানায় না৷ তখন আরো সামস্যা হয়, অর্থাৎ মাথাব্যথা, নার্ভাসনেস এবং ঘুমের সমস্যা দেখা যায়৷ আর এভাবে নিয়মিত কম ঘুমের কারণে ধীরে ধীরে শরীর এবং মনে নানা সমস্যা দেখা দেয়৷
কর্মক্ষেত্রে ন্যাকামি কি সময়ের দাবি?
আজকের এই প্রতিযোগিতার যুগে জীবন হয়ে গেছে কঠিন৷ চাকরি পাওয়া, চাকরিতে টিকে থাকা, কর্মজীবনে নিজেকে জাহির করতে অনেক সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধেও ন্যাকামি করতে হয়, যার কোনো ভিত্তি বা প্রয়োজন নেই৷ অর্থাৎ নিজে যা নন, তা দেখাতে হয়৷ জোর করে কিছু করা মানেই কিন্তু মনের ওপর চাপ দেওয়া, অর্থাৎ সেক্ষেত্রে পরবর্তিতে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়৷
বন্ধুত্বেও ন্যাকামি?
আজকের যুগে কম-বেশি সর্বত্রই নিজেকে জাহির করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যার, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও৷ ফেসবুকে কি কম ন্যাকামি করছে মানুষ? আজকের যুগে ‘প্রাইভেসি’ যেন মানুষের জীবন থেকে উড়াল দিয়েছে৷ পছন্দ না হলেও ‘পছন্দ’ করতে হবে এটাই যেন স্বাভাবিক৷ যোগাযোগ রাখতে ন্যাকামি নয়, যেটুকু ভালো লাগে সেটুকুই যথেষ্ট৷ ‘‘অন্যরা করছে, আমাকেও করতে হবে’’ – এ ভাবনাও আপনাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করতে পারে৷
কর্মক্ষেত্রে
কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপের সঙ্গে রয়েছে বসের চোখ রাঙানো৷ এতে কাজের ‘মোটিভেশন’ কমে গিয়ে ঘন ঘন অসুস্থ হতে পারেন কর্মীরা৷ আর তাঁরা অসুস্থ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোম্পানিটিই৷ জার্মানির একটি স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানির করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা চাপের মধ্যে জোর করে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করেন, তাঁরাই পরে বিষণ্ণতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং কার্ডিওভাসকুলার সমস্যায় ভোগেন৷
স্বাভাবিক থাকুন
পেশাগত জীবনে সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা অবশ্যই ভদ্রতা৷ এতে কোনো সন্দেহ নেই, যা খদ্দের বা কাস্টোমাররাও বোঝেন৷ তবে তা কৃত্রিম হলে কাস্টোমার বেশি দিন ধরে রাখা সম্ভব নয়৷ তাই ন্যাকামি না করে নিজেকে সহজ, স্বাভাবিক রেখে স্বাভাবিক আচরণ করলে মানসিক ও শরীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়, জানান মনোবিজ্ঞানী হাইকে স্ট্যুভেল৷