প্লাস্টিক আবর্জনার পাহাড় জমছে পশ্চিম বলকানে
ইউরোপে পরিবেশ সমস্যা যে কোথায় পৌঁছাতে পারে, তার নমুনা হল পশ্চিম বলকানের দেশগুলি৷ কয়লা-থেকে-বিদ্যুৎ, অবাধে গাছ কাটা আর প্লাস্টিক আবর্জনার ফলে পরিবেশ বিপন্ন৷
বেআইনি ময়লা ফেলা চলেছে সর্বত্র
মধ্য বসনিয়ার রাদুসা অঞ্চলটি মনোরম হতে পারত – যদি না সেখানে প্লাস্টিক আবর্জনার পাহাড় জমত৷ প্রায় দশ হাজার ছোট-বড় বেআইনি ল্যান্ডফিল বা গারবেজ ডাম্প, অর্থাৎ ময়লা ফেলার জায়গা আছে এখানে, বলে অনুমান করা হয় – যার মধ্যে শুধু পাঁচটি নাকি লাইসেন্স প্রাপ্ত এবং পরিবেশ সুরক্ষা সংক্রান্ত সরকারি রীতিনীতি মেনে চলে৷ বসনিয়ায় মোট আবর্জনার মাত্র তিন শতাংশ রিসাইকেল করা হয়৷ প্রায় সমগ্র বলকান অঞ্চলে একই পরিস্থিতি৷
আগুন লাগলে পর...
২০১৭ সালের গ্রীষ্মে ড্যানিউব নদীর তীরে ভিংকা শহরের ময়লা ফেলার জায়গাটিতে আগুন লাগে৷ এক মাস ধরে সেই আগুন জ্বলতে থাকে৷ প্লাস্টিক, গাড়ির টায়ার আর ইলেকট্রিকের সাজসরঞ্জাম পোড়ার বিষাক্ত ধোঁয়া কাছের বেলগ্রেড শহরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে – বেলগ্রেড হল সার্বিয়ার রাজধানী৷ ভিংকায় প্রতিদিন ২,৭০০ টন ময়লা ফেলা হয়৷ আবর্জনার পাহাড়ের তলায় মিথেন গ্যাস জমে, পরে সেই গ্যাসে যখন আগুন ধরে, তখন দমকলও অসহায়৷
প্লাস্টিকের নদী
অগুনতি প্লাস্টিকের বোতল নদীনালায় গিয়ে পড়ে, যেমন এখানে দক্ষিণ সার্বিয়ার মোরাভা নদীতে৷ এছাড়া রয়েছে পয়ঃপ্রণালী আর কলকারখানার ময়লা পানি: তা-ও গিয়ে পড়ে নদীর জলে৷ সার্বিয়ায় ময়লা পানির মাত্র আট শতাংশ সিউয়েজ প্ল্যান্টে পরিষ্কার করা হয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য সার্বিয়াকে তার পরিবেশ সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে অর্থাৎ হাজার কোটি ইউরো বিনিয়োগ করতে হবে – যা কিনা তার বাৎসরিক সরকারি বাজেটের চেয়ে বেশি!
ময়লা কুড়িয়ে জীবনধারণ
উত্তর-পশ্চিম ম্যাসিডোনিয়ার গোস্তিভার শহরের ময়লা ফেলার জায়গাটিকে দেখলে বেআইনি বলে মনে হতে পারে৷ এখানে সব ধরনের ময়লা এসে পড়ে – তারই মধ্যে এটা-সেটা কুড়িয়ে ও বেচে দিন গুজরান করেন কিছু মানুষ৷ এবার নাকি আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর অর্থানুকুল্যে এই ল্যান্ডফিলটিতে ৫০ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করা হবে – তবে আবর্জনা রিসাইক্লিংয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই৷
শুধু কাচের বোতলের উপর ডিপোজিট
পশ্চিম বলকান প্লাস্টিক আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে কেন (যেমন ছবিতে ম্যাসিডোনিয়ার রাজধানী স্কোপিয়েতে), সে প্রশ্নের একটি উত্তর হলো: এখানে শুধুমাত্র কাচের বোতলের ওপর ডিপোজিট নেওয়া হয়৷ ম্যাসিডোনিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলিতেও শুধুমাত্র কাচের তৈরি বিয়ারের বোতলের উপর ডিপোজিট নেওয়া হয়৷
প্লাস্টিকের বোতলের পরেই আসে প্লাস্টিকের ব্যাগ
গোটা বলকান জুড়ে দোকানে কিছু কেনাকাটা করলে, তা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে প্লাস্টিকের ব্যাগ পাওয়া যায় – ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করতে হলে প্রথমেই যা বদলাতে হবে৷ আলবেনিয়া ২০১৮ সালের পয়লা জুলাই থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করছে৷ কিন্তু গোটা বলকান জুড়ে তা ঘটা অবধি আইওনিয়ান সাগরের তীরে হিমারার উপকূলে সম্ভবত এই দৃশ্যই বজায় থাকবে৷
সাগর যা বয়ে আনে
স্থানটি ক্রোয়েশিয়ার পর্যটকপ্রিয় দুব্রোভনিক শহরের প্রাচীন অংশ৷ কিন্তু সেখানে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যে টন টন প্লাস্টিক ভেসে আসে, তার অধিকাংশই এসেছিল আলবেনিয়া থেকে – এড্রিয়াটিক সাগরের ঢেউয়ের দোলায় ভেসে ভেসে৷
এক ঝাঁক গাংচিল
ডালমেশিয়ায় পর্যটকদের প্রিয় স্প্লিট শহরের কাছেই এলাকার একমাত্র বৈধ ল্যান্ডফিল৷ ইইউ-এর সদস্যদেশ ক্রোয়েশিয়া অধিবাসী প্রতি ৪০৩ কিলোগ্রাম আবর্জনা সৃষ্টি করে থাকে, যা কিনা ইইউ-এ দেশগুলির গড়, বাসিন্দা প্রতি ৪৮০ কিলোর চেয়ে বেশ কিছুটা কম৷ পশ্চিম বলকানে এক মন্টেনিগ্রো (৫৩৩ কিলো) ছাড়া বাকি সবাই ইইউ গড়ের নীচে (আলবেনিয়া ৩৯৬ কিলো, বসনিয়া ৩১১ কিলো ও সার্বিয়া ২৬৮ কিলো) – বলছে ইউরোস্ট্যাট-এর পরিসংখ্যান৷
পথিকৃৎ
ক্রোয়েশিয়ার কৃক দ্বীপটিতে কিন্তু ইতিমধ্যেই আবর্জনার ৬০ শতাংশ রিসাইকেল করা হয়ে থাকে – যার জন্য বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা পৃথক পৃথকভাবে জমা করা প্রয়োজন৷ কৃক দ্বীপের লক্ষ্য হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপের একমাত্র জ্বালানি-স্বনির্ভর দ্বীপ হওয়া৷