1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘প্রাপ্য' মহার্ঘভাতা নয় মুখ্যমন্ত্রী দেন হুমকি

পায়েল সামন্ত (কলকাতা)
১৯ জানুয়ারি ২০২৪

বকেয়া মহার্ঘভাতা নিয়ে আন্দোলন করছেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ। এরই মধ্যে কর্মীদের উদ্দেশে কার্যত বরখাস্তের হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর।

https://p.dw.com/p/4bT5b
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়
পঞ্চায়েতের কাজকর্মে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়ছবি: Dipa Chakraborty/Pacific Press/picture alliance

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্য সরকারের বিশেষ জনসংযোগ কর্মসূচি। সরকারি কর্মীদের দ্বারা জেলায় জেলায় শিবির পরিচালিত হবে। তার আগে সরকারি কর্মীদের বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

২০ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির বিশেষ জনসংযোগ কর্মসূচিতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কৃষকবন্ধুসহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্যবাসীর নাম নথিভুক্ত করা হবে। এর পাশাপাশি এসব সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে কোনো অসুবিধা হলে, তার সমাধান মিলবে।

বড় আকারের এই কর্মসূচির কথা মঙ্গলবার ঘোষণা করেছিলেন মমতা। এর প্রস্তুতিতে বুধবার নবান্ন থেকে জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক সূত্রে খবর, সেখানেই তিনি কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দেন। তোলেন বরখাস্তের প্রসঙ্গ।

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী আইনের ৫৬জে ধারা অনুসারে কোনো কর্মীকে বরখাস্ত করার সুযোগ রয়েছে। এই ধারা বলে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে বাধ্যতামূলক অবসরের দিকে ঠেলে দিতে পারে সরকার। এই কঠোর আইন ব্যবহার করে প্রায় শ'খানেক শীর্ষ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, কর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব পালন না করলে এই আইন ব্যবহারের সতর্কবাণী শুনিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিন সপ্তাহের বেশি সরকারি কর্মসূচি চলবে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই রাজ্যের সবচেয়ে বড় জনসংযোগ কর্মসূচি। এটিকে সফল করতে কর্মীদের ছুটি বাতিল করার কথাও বলেছেন মমতা। প্রতি সপ্তাহে শনি ও রবিবার সরকারি কর্মীদের ছুটি থাকে। মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনে ছুটির দিনেও কর্মসূচিতে থাকার কথা বলেছেন।

প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অজস্র অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে নিচুতলায় পঞ্চায়েতের কাজকর্মে সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এ নিয়ে বৈঠকে কড়া কথা শুনিয়েছেন মমতা। সূত্রের খবর, দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না, এ কথা বলে জেলা প্রশাসনকে কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

কর্মীদের প্রতিক্রিয়া

রাজ্যের বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন রাজ্যের মনোভাবের প্রতিবাদ জানিয়েছে। করণিকদের সংগঠন, ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ (নবপর্যায়)-এর রাজ্য সম্পাদক অমরকুমার দে বলেন, "রাজ্য সরকার নিজেই আইন মানে না। তারা কীভাবে ৫৬জে ধারা প্রয়োগ করবে! এই আইন কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যায়। আমরা অনেক কম ডিএ নিয়ে কাজ করছি। তারপর শাস্তির হুঁশিয়ারি কেন?"

কাজের গাফিলতি সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে একমত নন কর্মীরা। তাদের মতে, অধিকাংশ কর্মচারী তৎপর বলেই দপ্তরের কাজ ঠিকঠাক চলে। অর্থ দপ্তরের করণিক শ্রীবাস তিওয়ারি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "দুয়ারে সরকার প্রকল্প শুধু নয়, করোনার সময় সরকারি কর্মচারীরা যেভাবে এই সরকারকে উদ্ধার করেছে, তা গাফিলতি থাকলে সম্ভব হতো না। এর বিনিময়ে আমরা ডিএ কম পাচ্ছি ৩৬ শতাংশ।"

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দপ্তরে চাকরি করেন অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রাজ্য সরকার দাবি করে তাদের ৯০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে, সব প্রকল্প দারুণ সফল। রাজ্য উন্নতির শিখরে আছে। সেটা সরকারি কর্মচারীদের অবদান ছাড়া কি সম্ভব? তাহলে গাফিলতির প্রশ্ন আসে কী করে?"

রাজ্য সরকার নিজেই আইন মানে না: অমরকুমার দে

তৃণমূল সাংসদ ও মুখপাত্র শান্তনু সেনের প্রতিক্রিয়া, "সরকারি কর্মচারীদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। তারা মাসের শুরুতে বেতন নেবেন, কিন্তু কাজ করবেন না, সেটা হয় না। তা হলে বলুন, কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন চালাচ্ছেন যখন, বেতন নেবেন না।"

তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, কেন্দ্র প্রদেয় অর্থ বকেয়া রাখায় নির্দিষ্ট হারে ভাতা দেয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।

কর্মীদের ভাবমূর্তি

দুই সরকারেরই বিভিন্ন দপ্তরে সরকারি কর্মীদের কাজকর্ম সম্পর্কে জনমানসে একটা বিরূপ ধারণা রয়েছে। কর্মীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘসূত্রতা থেকে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগও ওঠে।

আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "কাজ না করলে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। সেটা মুখ্যমন্ত্রী এতদিন কেন নেননি? যিনি নিজেই আইন প্রয়োগ করেননি, তার কথা কর্মীরা শুনবেন কেন?"

সরকারি দপ্তরে কর্মসংস্কৃতির চেহারা বদল করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, 'ডু ইট নাও'। অর্থাৎ এখনই কাজ শেষ করতে হবে। তার উত্তরসূরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও একথা শোনা গিয়েছে।

তামিলনাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী, প্রয়াত জয়ললিতা ২০০৩ সালে বিশেষ আইন 'এসমা' জারি করেন। অনেক কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়।  যদিও পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে তামিলনাড়ু সরকার মামলা হেরে যায়। বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে পুনর্বহাল করতে হয়।

তাই সতর্কবাণী শোনালেও সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে মনে করেন না কর্মীদের বড় অংশ।

নিশানায় কারা?

সরকারি কর্মচারীদের একাংশের ধারণা, তারা নন, উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাই মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় রয়েছেন। মহার্ঘভাতার দাবিতে আন্দোলনকারী সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতাদের এমনটাই মত।

রাজ্য সরকারের অধীন সরকারি কর্মীদের সংখ্যা দেড় লক্ষের আশপাশে। এর পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী, পুরসভা ও পঞ্চায়েতের কর্মীদের বেতন দেয় রাজ্য। ভাতা বকেয়া থাকলে কি কর্মসংস্কৃতি ঠিক থাকবে, এই প্রশ্ন উঠছে।

বকেয়ার মহার্ঘভাতা মেটানোর দাবি তুলেছে বিভিন্ন ধরনের কর্মীদের কয়েকটি সংগঠন। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতৃত্বে একটানা অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

এই মঞ্চের নেতা ভাস্কর ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "৫৬জে ধারা সাধারণ কর্মীদের উপর কার্যকর হবে না। এই ধারা আধিকারিকদের জন্য। তৃণমূল সরকার চালাচ্ছে উচ্চপদস্থ আমলাদের মাধ্যমে, যেহেতু দলের নেতাদের উপর শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থা কম। তাহলে কি এবার আইএএস, আইপিএসদের ভরসা করতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী?