দুর্যোগ মোকাবিলায় অসহায়ত্ব
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩গত গ্রীষ্মের বন্যায় জার্মানির দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে আট জনের মৃত্যু হয়৷ অন্যদিকে ২০১০ সালের গ্রীষ্মের বন্যায় পাকিস্তানে ১৭০০ জন প্রাণহানি হয়েছে৷ অথচ দুটি দেশেরই কোনো কোনো এলাকা প্রায় একই রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মুখে৷ এমন ধরনের অঞ্চলে বসবাস করেন ১১ শতাংশ জার্মান ও সমসংখ্যক পাকিস্তানি৷
আপৎকাল কাটিয়ে ওঠা নির্ভর করে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর
বন্যা, ভূমকম্প, ঝড়, খরা এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোন দেশ কী ভাবে কাটিয়ে উঠবে সেটা নির্ভর করে মূলত সেসব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার এবং সংকটময় অবস্থায় কী ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় তার ওপর৷ বলেন পাঁচটি জার্মান সাহায্য সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ‘আলিয়ান্স ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কস'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পেটার মুকে৷ উদাহরনসরূপ তিনি কলেরা মহামারির উল্লেখ করেন৷ যেসব অঞ্চলে স্বাস্থ্যের পরিকাঠামো সমস্যা জর্জরিত, সেসব জায়গায় দুর্যোগের সময় কলেরা মহামারির আকারে দেখা দিতে পারে৷ হাইতিতে যে তা মারাত্মক ফলাফল বয়ে এনেছিল, তা লক্ষ্য করা গেছে দুর্যোগের সময়৷ ভূমিকম্পের আগে হাইতি কলেরামুক্ত এলাকা বলে গণ্য ছিল৷ আজ সেখানেই এই রোগের সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি৷
এইসব রোগব্যাধি প্রতিরোধ করা কিন্তু খুব কঠিন নয়৷ ‘‘কেনিয়ার স্কুলে একটি টয়লেট তৈরির খরচ পড়ে ৪৭৫ থেকে ৯৫০ ইউরোর মতো৷ ইথিওপিয়ায় একটি টিউবওয়েলের জন্য খরচ হয় ১৯০০ ইউরো৷ যা থেকে ৮০টি পরিবার উপকৃত হতে পারে৷''
পরিষ্কার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন অত্যন্ত জরুরি
পরিষ্কার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাস্থ্যরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭৭০ মিলিয়ন মানুষ পরিষ্কার পানি থেকে বঞ্চিত৷ প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষের জন্য উপযুক্ত স্যানিটারির সুযোগ-সুবিধা নেই৷
এক বিলিয়ন মানুষ কোনো টয়লেট ব্যবহার করে না৷ এর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ বাস করে ভারতীয় উপমহাদেশে৷ বলেন বন ইউনিভার্সিটির ‘ইন্সটিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ'-এর টমাস কিসটেমান৷ বিশেষ করো গ্রামাঞ্চলে নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মলমূত্রের সংস্পর্শে এসে লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ দূষিত হয়ে পড়ে পরিবেশ, পানি, বাতাস ও খাদ্যদ্রব্য ৷ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া বা হাত ধোয়ার সুযোগও নেই সেখানে৷ একারণে পানি সরবরাহ ও পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি৷
বড় সমস্যা হলো অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা
উন্নয়নশীল দেশের আরেকটি বড় সমস্যা হলো অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা৷ ‘‘এজন্য প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ আর্থিক দিক দিয়ে ধ্বংসের মুখে পড়ে৷ কেননা নিজের ও পরিবার পরিজনের চিকিত্সার খরচ অনেকাংশে ব্যক্তিগতভাবেই বহন করতে হয়৷ তাই অনেকেই ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে৷ আর এই চক্র থেকে বের হয়ে আসাও সহজ হয় না৷'' বলেন সাহায্য সংস্থা মেডিকো ইন্টারনেশনালের টমাস গেবাউয়ার৷
জার্মানিতে যেখানে স্বাস্থ্যখাতে ব্যক্তিগত খরচ পড়ে মাত্র ১২ শতাংশের মতো৷ সেখানে নাইজেরিয়া, ভারত বা বাংলাদেশের মতো দেশগুলিতে চিকিত্সাখাতে অর্ধেকেরও বেশি খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হয়৷
‘‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেও সমস্ত জনসাধারণের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলির পক্ষে আর্থিক দিক দিয়ে সম্ভব নয়'', জানান টমাস গেবাউয়ার৷ তাই তাঁর পরামর্শ, বিশ্বে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ধনী দেশগুলিরই এগিয়ে আসতে হবে৷ দরিদ্র দেশগুলির দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত৷