প্রবাসে থেকেও বাংলার প্রেমে পাগল কবি সালেহা
২৩ নভেম্বর ২০১১লেখিকা সালেহা চৌধুরীর জন্ম রাজশাহী জেলায়৷ তবে পিতার চাকুরির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় কেটেছে তাঁর শৈশব-কৈশর৷ হলিক্রস কলেজে পড়া শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ বাংলায় বিএ এবং এমএ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ ১৯৭২ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান সালেহা৷ সেখানে এভারহিল কলেজে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন৷ এরপর থেকে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগৎ নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন নেশায় ও পেশায় লেখিকা শিল্পী সালেহা৷ এখন পর্যন্ত তাঁর ৫৪ টি বই প্রকাশিত হয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে ১৬ টি উপন্যাস, ১৫ টি অনুবাদ বই, সাতটি ছোটগল্পের বইসহ রয়েছে বেশ কিছু কবিতা, প্রবন্ধ, সমালোচনাগ্রন্থ৷
এ বছর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বই মেলায় আসেন সালেহা চৌধুরী৷ বই মেলায় ঘোরার এক ফাঁকে ডয়চে ভেলের সাথে আলাপচারিতায় যোগ দেন৷ লেখালেখির শুরু কীভাবে - এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘লেখালেখির শুরু বলে তেমন কোন বিরাট ঘটনা নেই৷ সেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতোই ব্যাপার৷ যেমন হয়তো বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হয়তো একটা কবিতা মাথায় আসল৷ এভাবেই লিখতে থাকি৷ তাছাড়া আমার অনেকগুলো ছোট ছোট ভাগ্নে-ভাগ্নি ছিল যাদেরকে আমার গল্প বলে শোনাতে হতো৷ অথচ আমি খুব বেশি গল্প জানতাম না৷ ফলে তাদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে আমাকে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে হতো৷ এভাবে গল্প বলার অভ্যাস গড়ে ওঠে৷ পরে সেগুলো লেখার চেষ্টা করি৷''
তাঁর উল্লেখযোগ্য বই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘গত বছর একটি বই আমি প্রকাশ করেছি ‘সাহিত্যে ১২ জন নোবেল বিজয়ী নারীর জীবন ও সাহিত্য' শিরোনামে৷ এটা আমার একটা বড় কাজ বলে মনে করি যে, এই বারো জনকে খুঁজে বের করে তাঁদের জীবনী ও সাহিত্যকর্ম সংগ্রহ করেছি৷ এছাড়া তাদের নোবেল বক্তৃতাগুলোর অনুবাদ করেছি এবং বিশ্বে ১৯০১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এতো দীর্ঘ সময়ে কেন মাত্র বারো জন নারী সাহিত্যে নোবেল পেল সেটা নিয়েও কিছু বলার চেষ্টা করেছি সেখানে৷ বলতে গেলে এটা একটা গবেষণাকর্ম হয়ে গেছে৷ এছাড়া আমি ‘নোবেল বিজয়ীদের দুই ডজন' করেও আনন্দ পেয়েছি৷ আরেকটি বই প্রকাশ করেছি আমি৷ সেটা হলো একশ'টি গল্পের সংকলন৷ এর নাম দিয়েছি ‘শতগল্প'৷''
আফ্রিকার পটভূমি নিয়ে নিজের লেখা একটি উপন্যাসের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরলেন সালেহা৷ তাঁর কথায়, ‘‘আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দেশ লেসোথো৷ সেখানকার পটভূমি নিয়ে আমি একটি উপন্যাস লিখেছি৷ এটির নাম ‘থাবিজুর বাবা'৷ এটা যখন ‘শৈলী'তে ছাপা হয় তখন কায়সুল হক বলেন যে, বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম আফ্রিকার উপন্যাস৷''
তিনি দীর্ঘদিন লন্ডনে বাংলা সাহিত্য পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্ট ও শরৎ একাডেমির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং আরো অনেক সমাজসেবামূলক সংগঠনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ তবে বর্তমানে পড়া এবং লেখার মধ্যেই ডুবে থাকতে পছন্দ করেন তিনি৷ ফ্রাঙ্কফুর্ট বই মেলা সম্পর্কে সালেহার অভিব্যক্তি, ‘‘এটি একটি বিশাল বড় আয়োজন৷ চমৎকার বই প্রদর্শনীর আসর৷ তবে এখানে আমার যে বইটি পছন্দ হচ্ছে, সেটি কিনতে পারছি না ভেবে খারাপ লাগলো৷ আসলে এটি বই ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন৷ কে কোন বই প্রকাশ করবে, অনুবাদ করবে এসব বিষয় ঠিক করা হয় এই বই মেলায়৷ তবে আমরা এই মেলায় এসে অনেক বইয়ের নাম জানতে পারি এবং সেগুলোর বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি৷''
সাক্ষাৎকার: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক