প্রতারক ফিঙে!
১৩ মে ২০১৪কালাহারি মরুভূমিতে ৮৭৪ ঘণ্টা ধরে ৬৪টি চামচপুচ্ছ ফিঙের ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এ পাখির ‘মিথ্যে বলার কৌশল' সম্পর্কে বিশদ জানতে পেরেছেন তারা৷
গবেষকরা বলছেন, মরুভূমিতে যে কোনো বিপদে-আপদে পশুপাখিদের মধ্যে ‘বিপদ সংকেত' বিনিময় একটি সাধারণ নিয়ম৷ আগে থেকে সংকেত দিতে পারে বলে আফ্রিকার ফিঙের ওপর অন্য পাখি ও ছোট প্রাণীরা আস্থাও রাখে৷ আর এর সুযোগ নিয়েই মিথ্যে সংকেতে ছোট পশু-পাখিদের ভড়কে দেয় ফিঙে৷ তারপর তাদের জোগাড় করা খাবার নিয়ে সটকে পড়াই এঁদের কৌশল৷
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক টম ফ্লাওয়ার বলেন, এ প্রজাতির ফিঙেরা এমনিতে সৎভাবেই খাবার সংগ্রহ করে৷ তাদের প্রধান শিকার বাতাসে উড়ে চলা ছোটখাট পতঙ্গ৷ কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ায় যখন পোকামাকড় খুঁজে পাওয়া কঠিন, তখনই অন্যের খাবারে নজর পড়ে তাদের৷ একটি ফিঙে প্রতিদিন যে খাবার খায়, তার এক চতুর্থাংশই সে জোগাড় করে ‘মিথ্যে' সংকেতের প্রতারণার মাধ্যমে৷
পাইড ব্যাবলার, গ্লসি স্টারলিং, সোশ্যাল উইভার, ফ্যাকাশে চান্টিং গসহক, এমনকি মিয়ারক্যাটের মতো অন্তত ৫১ ধরনের পশু-পাখির ডাক নকল করতে পারে আফ্রিকার ফিঙে৷ তবে কাউকে ধোঁকা দেয়ার সময় প্রথমে নিজেদের বিপদ সংকেতটিই তাঁরা ব্যবহার করে৷
কাছাকাছি কোনো শিকারী পশু না থাকলেও ফিঙে এমনভাবে ডেকে ওঠে, যেন বিপদ একেবারে ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে৷ সেই সংকেতে ভয় পেয়ে নির্ধারিত পাখি বা প্রাণীটি পালালেই তাঁর খাবার নিজের দখলে নেয় ফিঙে৷ ফিঙের ডাকে কাজ না হলে অন্য প্রাণীর ডাক নকল করে আবারো সংকেত দেয় সে৷ তার পরের পদ্ধতি একই রকম৷
টম ফ্লাওয়ার জানান, ফিঙেরা সাধারণত যে আকারের পতঙ্গ শিকার করে, তার চেয়ে বড় আকারের খাবার – যেমন কাঁকড়াবিছা, গুবরে পোকা, এমনকি বড় আকারের টিকটিকিও সে এই কৌশলে পেয়ে যায়৷ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানী আমান্ডা রিডলি বলেন, ‘‘মনুষ্য সমাজে এমন প্রতারণা ভাল চোখে দেখা হবে না, সেটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু এমন বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল যখন ছোট্ট একটি পাখি ব্যবহার করে, তখন আমরা চমৎকৃত না হয়ে পারি না৷''
কেবল কৌশলে নয়, আফ্রিকার ফিঙে সাহসেও অনন্য৷ আকারে চারগুণ বড় ঈগল বা বাজের সঙ্গেও তাঁরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যেন ভয়ডর বলে কিচ্ছুটি নেই৷
জেকে / এসবি (এএফপি, রয়টার্স)