1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশ ব্যর্থ, মেনেছেন পুলিশ কমিশনার, দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের

৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আরজি করে পুলিশের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন বিনীত গোয়েল, পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করার পর দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের।

https://p.dw.com/p/4kD9N
লালবাজারের কাছে জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল। সেখানে প্রতীকী মেরুদণ্ড নিয়ে একজন জুনিয়র চিকিৎসক।
প্রতীকী মেরুদণ্ড হাতে নিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ছবি: Subrata Goswami./DW

আরজি কর হাসপাতালে ১২ ও ১৪ অগাস্ট পুলিশি ব্যর্থতার কথা বিনীত গোয়েল স্বীকার করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে পুলিশ কমিশনার নিজের কাজে খুশি। তাই তিনি ইস্তফা দিতেও অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি তাকে সরিয়ে দেন, তাহলে তিনি বিদায় নিয়ে চলে যাবেন। 

জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের স্মারকলিপি পুলিশ কমিশনারের হাতে তুলে দেন। সেখানে বিনীত গোয়েলের ইস্তফার দাবি রয়েছে। তাকে ইস্তফা দেয়ার জন্যও তারা অনুরোধ করেন। 

পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলার পর জুনিয়র ডাক্তাররা লালবাজারের কাছে তাদের অবস্থান বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তবে আন্দোলন থেকে তারা সরে আসছেন না। বুধবার তারা রাতে একঘণ্টা আলো বন্ধ করে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বেলে পথে নামবেন। 

এর আগে জুনিয়র ডাক্তারদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয় পুলিশ। যাবতীয় ব্যারিকেড তুলে নেয়া হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের লালবাজারের কাছে মিছিল করে আসতে দেয়া হয়। তারপর তাদের ২২ জনের একটি প্রতিনিধিদলকে পুলিশ বাসে করে লালবাজারে নিয়ে যাবে। সেখানে তারা পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেবেন। 

এরপরই বৌবাজারে পুলিশ যাবতীয় ব্যারিকেড তুলে নেয়। ফলে ২২ ঘণ্টা ধরে কলকাতার রাস্তায় বিক্ষোভ দেখানোর পর জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মানা হলো। 

এরপর জুনিয়র ডাক্তাররা হাতে হাত রেখে 'উই শ্যাল ওভারকাম' ও তার বাংলায় 'আমরা করব জয়' গাইতে গাইতে লালবাজারের দিকে এগোতে থাকেন। গান শেষ হওয়ার পর শুরু হয় স্লোগান, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'। 

জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, স্মারকলিপির পাশাপাশি  প্রতীকী মেরুদণ্ডও তারা পুলিশ কমিশনারের হাতে তুলে দেবেন। তারা আরজি করের ঘটনার দায় নিয়ে পুলিশ কমিশনারকে পদত্যাগ করতে বলবেন। 

আগের খবর

শুরু হয়েছিল সোমবার বিকেলে৷ লাল গোলাপ, রজনীগন্ধার মালা ও প্রতীকী মেরুদণ্ড নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ৷ তাদের একটাই দাবি ছিল, আরজি কর কাণ্ডের দায় নিয়ে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে পদত্যাগ করতে হবে৷

লালবাজারের কাছে রাস্তায় অবস্থান করে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ।
রাতে জুনিয়র ডাক্তাররা গান গেয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ছবি: Satyajit Shaw/DW

লালবাজারের কাছে যেতে দেয়া হয়নি জুনিয়র ডাক্তারদের৷ প্রায় এক কিলোমিটার আগে রাস্তায় ব্যারিকেড লাগিয়ে পুলিশ জানায়, তাদের আর যেতে দেয়া হবে না৷ তাদের একটি প্রতিনিধিদল লালবাজারে যেতে পারে৷ কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, তারা ওখানেই বসে বিক্ষোভ দেখাবেন৷ সঙ্গীদের এতদূরে রেখে তারা লালবাজারে যাবেন না৷

পরে পুলিশকে তারা তিনটি বিকল্প দেন৷ প্রথম বিকল্প, পুলিশ কমিশনারকে তাদের কাছে আসতে হবে এবং তারা স্মারকলিপি পড়ে শোনাবেন এবং তার হাতে তুলে দেবেন৷ সেখানে পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের দাবি রয়েছে৷ দ্বিতীয় বিকল্প, পুলিশ কমিশনার পদত্যাগ করলে তারা বিক্ষোভ শেষ করবেন৷ তৃতীয় বিকল্প, মিছিলকে লালবাজারের কাছাকাছি যেতে দিতে হবে৷ সেখান থেকে প্রতিনিধিদল পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়ে তার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেবেন৷

কিন্তু পুলিশ এখনো পর্যন্ত কোনো বিকল্পই মেনে নেয়নি৷ ফলে সারারাত ধরে অবস্থানের পরেও জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ দুপুরেও তারা সেখানেই বসে আছেন৷ পুলিশ কমিশনার রাতে লালবাজার থেকে বাড়ি ফিরে যান৷ সকাল দশটা নাগাদ তিনি আবার লালবাজার এসেছেন৷

দুপুরে রোদ বাড়লে বিক্ষোভকারীরা ছাতা খুলে নিয়েছেন৷ ত্রিপলও লাগানো হয়েছে৷ জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, তারা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিও করেন৷ ফলে তাদের কোনো অসুবিধা হবে না৷ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন৷ আন্দোলনে নামার পর তারা একবারের জন্যও সহিংস হননি৷ তারা অহিংসভাবে তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ পুলিশের সঙ্গে একবারের জন্যও তাদের কোনো সংঘর্ষ হয়নি৷ উল্টে তারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷ আরজি করে তাদের বিক্ষোভমঞ্চ ভেঙে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা৷

সারা রাতের বিক্ষোভ

রাতে জুনিয়র ডাক্তাররা গান গেয়েছেন, রাস্তায় স্লোগান লিখেছেন৷ কবিতা বলেছেন৷

ভোরের দিকে তারা জাতীয় সংগীত গাওয়া শুরু করেন৷ ব্যারিকেডের ওপারে বসে থাকা পুলিশ কর্মীরা তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ান৷

গানে গানে রাত কাটালেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
সারা রাত রাস্তায় থেকে বিক্ষোভ জুনিয়র ডাক্তারদের।ছবি: Satyajit Shaw/DW

এছাড়া তারা অনেকক্ষণ ধরে স্লোগান দেন৷ রাতে টলিউডের বেশ কিছু তারকা তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন৷

রাত জেগে ক্লান্ত হয়ে অনেকে রাস্তায় চাদর বিছিয়ে শুয়েও পড়েন৷

রাতে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়-সহ অন্য কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন৷

বিধানসভায় অপরাজিতা বিল

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এদিন অপরাজিতা বিল পাস হয়৷ বিরোধীরাও এই বিল সমর্থন করেছে৷ বিলে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে৷ ধর্ষিতার নাম প্রকাশ করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত সাজার বিধান আছে৷

তবে এই বিল পাসের সময় বিধানসভায় রাজনৈতিক তর্কবিতর্ক প্রবল হয়ে ওঠে৷ বিজেপি বিধায়করা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করলে তিনি পাল্টা বলেন, নরেন্দ্র মোদীকে আগে পদত্যাগ করতে বলুন৷ মমতার বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দেশের লজ্জা৷ তিনি মেয়েদের রক্ষা করতে পারেননি৷ আর আমরা অপরাজিতা বিল পাস করে ইতিহাস তৈরি করলাম৷''

বিধানসভায় মমতা জানান, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, কলকাতা সবচেয়ে নিরাপদ শহর৷ উত্তরপ্রদেশে সাত লাখ, গুজরাটে পাঁচ লাখ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের নামে সকলে কুৎসা করছে৷ এতে আরজি করের ঘটনা লঘু হয়ে যাচ্ছে৷''

মমতার বক্তব্য, ‘‘আপনারা যেভাবে আমাকে অপমান করেছেন, আমরা কখনও আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে করিনি৷ কখনও ভেবেছেন, আমরা যদি ওইভাবে প্রধানমন্ত্রীকে বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অসম্মান করি তাহলে কী হবে৷''

বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী আরজি করের পাশাপাশি কামদুনি-সহ রাজ্যের একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার কথা বলেন ও তা নিয়ে সংবাদপত্রের কাটিং জমা দেন৷ শুভেন্দুর দাবি, ‘‘আমরা রেজাল্ট দেখতে চাই৷''

মমতার জবাব, ‘‘রাজ্যপালকে সই করতে বলুন৷ রেজাল্ট দেখাব৷'' তিনি হাথরাস, উন্নাওর কথা টেনে আনেন৷

জিএইচ/জেডএইচ (পিটিআই, এএনআই)