পা, পাঞ্জা, থাবার দুনিয়া
লিওনার্দো দা ভিঞ্চি মানুষের পা’কে ‘সেরা শিল্পকর্ম’ বলে উল্লেখ করেছেন৷ কিন্তু অন্য প্রাণীদের পা-ও বেশ দুর্দান্ত৷ বিশেষ করে যাদের পায়ে অন্যরকম কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷
পা কেটে গেছে? ক্ষতি নেই৷
‘মেক্সিকান হাঁটা মাছ’ নামে পরিচিত ‘অ্যাক্সোলট’ একটি উভচর প্রাণী৷ বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং অনন্য স্যালামেন্ডার বলে পরিচিত এই প্রাণী৷ ব্যাঙাচি থেকে পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ হওয়ার পথে আকার ও আকৃতিতে পরিবর্তন হয়৷ কিন্তু অন্য বেশিরভাগ পতঙ্গ ও উভচরের মতো অ্যাক্সোলট এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় না৷ ফলে অ্যাক্সোলটের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থেকে যায়, এরা যে-কোনো অঙ্গ হারালেও আবার গজাতে পারে৷ অনেকটা টিকটিকির লেজের মতো৷
ছোট্ট বনাম বিশাল
ছবিতে বিশাল আকারের নর্দার্ন লুজোন ক্লাউড ইঁদুরের পাশে পিগমি ক্লাউড ইঁদুরের পা দেখা যাচ্ছে৷ দুটোরই বাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, প্রধানত ফিলিপাইনসে৷ অবশ্য ইঁদুর বলা হলেও এরা আসলে ইংদুর না৷ এরা গাছে বাস করা এক ধরনের তৃণভোজী প্রাণী৷ আচরণে অনেকটা কাঠবেড়ালির সঙ্গে এদের মিল রয়েছে৷ শিকারের হাত থেকে পালাতে খুব দ্রুত গাছে চড়ার মতোই এদের পা৷
শিকারী ‘স্পাইডারম্যান’
গেকো দেখতে অনেকটা টিকটিকির মতোই৷ পৃথিবীর সবখানেই এদের বিচরণ৷ পোকামাকড় ও মাকড়শা এদের খুব প্রিয় খাবার৷ পায়ের আঙুলে আঠালো তন্তু থাকায় স্পাইডারম্যানের মতোই সবচেয়ে পিচ্ছিল খাড়া দেয়াল বেয়েও নিমেষে উঠে যেতে পারে তারা৷
দে দৌড়, পানির ওপর
যিশু খ্রিষ্ট পানির ওপর হেঁটেছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে৷ কিন্তু এই ব্যাসিলিক নামের প্রাণী পানির ওপর দৌড়াতেও পারে৷ শিকারের হাত থেকে পালাতে পেছনের দুই পায়ে ভর দিয়ে আনায়াসে পানির ওপর দৌড়াতে পারে এই প্রাণী৷ এদের পায়ের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম আঙুলের পাশে বাতাসের ছোট্ট ছোট্ট পকেট রয়েছে৷ পানিতে প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত দৌড়াতে এদের কোনো সমস্যাই হয় না৷
এক কাঠি সরেস
ওয়াটার স্ট্রাইডারদের আবার পানিতে দৌড়াতেও হয় না৷ এরা দিব্যি পানির পৃষ্ঠটান কাজে লাগিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে৷ এদের পায়ের নীচে হাজার হাজার আণুবীক্ষণিক চুল রয়েছে৷ এতো চুলের কারণে এদের পা প্রায় পানিনিরোধী৷
খুরওয়ালা পর্বতারোহী
ছাগল তো ছাগলই৷ মনে মনে তাই তো ভাবছেন? কিন্তু খুরওয়ালা প্রাণীদের মধ্যেও ছাগল একটু অন্যরকম৷ এদের খুরে মানুষের হাতের মতো আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা রয়েছে৷ ফলে প্রায়ই দেখবেন, এরা পাহাড় তো বটেই, অনায়াসে ছোটখাট গাছেও চড়ে বসে থাকে৷
দৌড়বিদ
আরেক খুরওয়ালা প্রাণী ঘোড়া৷ একেকটি প্রাপ্তবয়স্ক ঘোড়ার ওজন ৪০০ থেকে ৯০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে, দৌড়াতে পারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে৷ এই বিশাল ওজন নিয়ে দ্রুত দৌড়ানোর সময় শরীরে যে ধাক্কাটা লাগে, ঘোড়ার খুরই তার ৭০-৮০ শতাংশ বহন করতে পারে৷ প্রচণ্ড শক্ত এই খুর ঘোড়ার পা রক্ষা করে এবং রক্ত চলাচলেও সহায়তা করে৷
‘আই অ্যাম ব্যাটম্যান’
অন্ধকারেও বিশেষ সোনার সিস্টেম ব্যবহার করে পরিষ্কার দেখতে পায় বাদুড়৷ কিন্তু তাদের পা-ও কিন্তু বেশ মজার৷ এরা সাধারণত সোজা বসে থাকার চেয়ে ঝুলে থাকতে পছন্দ করে৷ কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকার জন্য এদের পায়ে শক্তিশালী পেশীর কোনো প্রয়োজন হয় না৷
এত কেন!!!
ল্যাটিন ভাষায় ‘সেন্টিপিড’ অর্থ শতপদী, অর্থাৎ একশ পা৷ অবশ্য নাম যা-ই হোক, কোনো কোনো সেন্টিপিডের ৩০টা পা থাকে, কোনোটার আবার ৩৫৪৷ সেন্টিপিডরা অমেরুদণ্ডী প্রাণী৷ অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বাকি সব মহাদেশেই এদের দেখা মেলে৷
মোজা? দরকার নেই৷
সারাক্ষণ বরফে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার ওপর দাঁড়িয়ে থাকলেও পেঙ্গুইনদের কখনো ঠান্ডা লাগে না৷ এদের রক্ত চলাচল ব্যবস্থা খুব অন্যরকম৷ জটিল ধমনীর মাধ্যমে দ্রুতই পায়ে নতুন রক্ত পৌঁছে দিয়ে পা গরম রাখে এরা৷ আবার পানিতে নামলে এদের পা কাজ করে মাছের পাখনার মতো৷ এর সাহায্যে পানির নীচে ঘণ্টায় ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে সাঁতরাতে পারে এরা৷