1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাহাড়ে পরিকল্পিত হত্যা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ জুলাই ২০২০

বান্দরবানে ছয় জনকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর সংস্কারপন্থিদের জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে গুলি করে হত্যার করা হয়৷ হামলায় রতন তঞ্চঙ্গ্যাও নিহত হয়েছেন৷ স্থানীয়রা মনে করেন এটা পরিকল্পিত হত্যা৷

https://p.dw.com/p/3etKx
ছবি: bdnews24.com

হামলার জন্য মূল জেএসএস-এর সদস্যদের দায়ী করা হচেছ৷ জানা গেছে, বান্দরবানের রাজবিলার বাঘমারা এলাকায় রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি৷ ওই বাড়িতে সকালে তাদের নেতা-কর্মীরা প্রায়ই খেতে যেতেন, দলীয় বৈঠক করতেন৷ ওই সময় তারা নিয়মিত জড়ো হন জেনেই প্রতিপক্ষ মঙ্গলবার সকাল ৭টার কিছু পরে হামলা চালায়৷ 

‘মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে’

সংস্কারপন্থিদের কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর বড়ুয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করেছেন, বান্দরবানের বোয়াংছড়ি উপজেলার নোয়াপতং ইউনিয়নের বাঘমারা গ্রামে রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে এই হামলা হয়৷ সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন এক দল সন্ত্রাসী সকাল সোয়া ৭টার দিকে হামলা চালায়৷ হামলায় ছয়জন নিহত এবং তিনজন আহত হন৷ নিহতরা হলেন, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিমল কান্তি চাকমা (প্রজিং), উপদেষ্টা কমিটির সদস্য চিংথোয়াইয়াঅং মারমা (ডেভিড), বান্দরবান জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সভাপতি রবীন্দ্র চাকমা, যুব সমিতির সদস্য রিপন ত্রিপুরা ও জ্ঞান ত্রিপুরা৷ জেলা পুলিশ সুপার জেরিন আখতারও ছয় জন নিহত এবং তিন জন আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন৷

পাশের রাজবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্যা অং প্রু মারমা বলেন,‘‘হামলাকারীরা ওই বাড়ির পেছনের একটি বিল (মাঠ) দিয়ে হেঁটে আসে এবং হামলার পর আবার হেঁটেই চলে যায়৷ রতন তঞ্চঙ্গ্যা দ্বিতীয় বিয়ের সূত্রে বাঘমারা গ্রামে প্রায়ই অবস্থান করতেন৷ সেই সময় তার দলের নেতা-কর্মীরাও আসতেন৷ এটা তাদের একটি আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হতো৷’’ 

‘চাঁদা আদায়ের জন্যই তাদের এই আধিপত্যের লড়াই’

ধারণা করা হচ্ছে, নিয়মিত অবস্থানকে অনুসরণ করেই প্রতিপক্ষ হামলাটি চালায়৷ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ হয়েছে বলেও কোনো তথ্য নেই৷ সংস্কারপন্থিদের সবাই নিরস্ত্র ছিলেন বলে তিনি জানান৷ দুই-একজন পালাতে চেষ্টা করেও পারেননি৷

পুলিশ ঘটনাস্থলে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র পায়নি, তবে বেশ কিছু গুলির খোসা উদ্ধার করেছে৷ তাই হামলাকারীদের প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা বা পাল্টা হামলা হয়েছে বলে তারা মনে করে না৷ পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে৷ হামলার কারণ তদন্ত করে জানা যাবে৷ তবে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলোর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়৷’’

রতন তঞ্চঙ্গ্যার এই বাড়িতে দেড় মাস আগেও একবার হামলা হয়েছিল বলে পুলিশ জানায়৷ তবে তখন হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ 

পাহাড়ে চার প্রুপ

পাহাড়ে এখন চারটি পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক গ্রুপ সক্রিয়৷ শান্তি চুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ ইস্যুতে ২০১০ সালে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ভেঙে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামের আরেকটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে৷ এমএন লারমার অংশই জেএসএস সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত৷ এখন এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুধা সিন্ধু খীসা৷

অন্যদিকে, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের দাবিতে গঠিত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ২০১৭ সালের নভেম্বরে দুই ভাগ হয়ে যায়৷ নতুন অংশ ইউপিডিএফ-গণতন্ত্র নামে পরিচিতি পায়৷ তারা পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি থেকে কিছুটা সরে এসে শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করে৷ 

সংঘাত-সংঘর্ষ

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হিসেব অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০১৮ ও ২০১৯ সালেই পাহাড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলের মধ্যে সংঘর্ষে ৮২ জন নিহত হয়েছেন৷ আর গত ৬ মাসে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন৷ ক্যা অং প্রু মারমা বলেন, ‘‘পাহাড়ে এই গ্রুপগুলো আধিপত্য বজায় রাখতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ চাঁদা আদায়ের জন্যই তাদের এই আধিপত্যের লড়াই৷ পাহাড়ি, বাঙালি সবাইকেই চাঁদা দিতে হয়৷ তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে লাশ ফেলে দেয়া হয়৷’’

শান্তি চুক্তির পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি৷ পুলিশ সুপার বলেন,‘‘ তাদের নানা গ্রুপের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ প্রায় নিয়মিত ঘটনা৷ আমরা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি৷’’