‘পাপ ছাড়ে না বাপকে'
২০ মে ২০১৪সামহয়্যার ইন ব্লগে ‘জীবনে একটা ভালো কাজ করলাম...' শিরোনামে ব্লগার রাজু জানিয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক মাদ্রাসা ছাত্রের পাশে দাঁড়ানোর কথা৷
তাঁর বর্ণনা থেকে উঠে এসেছে বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে অনেক সময় বহু লোকের সমাগম হলেও যে সদিচ্ছা, সাহস এবং উপস্থিত বুদ্ধি নিয়ে কখনো কখনো দু-একজনই এগিয়ে আসেন৷ ব্লগার রাজু সেই প্রশংসনীয় এবং মানবিক ভূমিকাই রেখেছেন ঢাকার রাজপথে৷ তাঁর বর্ণনা অনুযায়ী, মিরপুরের রাস্তায় গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে এক মাদ্রাসা ছাত্র গুরুতর আহত হয়৷ এক বন্ধুর সঙ্গে রাজু তখন সেই পথেই হাঁটছিলেন৷ সেই কিশোরকে একজন সিঅ্যান্ডজি-তে তুলে নিলেও হাসপাতালে নিয়ে যাননি৷ অথচ সেই অবস্থায় সেটাই ছিল সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন৷
দেড় ঘণ্টা পর হাঁটতে হাঁটতেই রাজু দেখেন, রাস্তায় অনেক মানুষের ভিড়৷ সামহয়্যার ইন ব্লগের ব্লগার তখনকার পরিস্থিতির কথা জানাতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘এগিয়ে গিয়ে দেখি অ্যাক্সিডেন্ট করা সেই বাচ্চাটিকে রাস্তার নীচে ঘাসের উপর শুইয়ে এক মহিলা পাখা দিয়ে বাতাস করছেন৷ এটা দেখে আমাদের মাথায় বাজ পড়ে গেল৷ আমি ওই বাচ্চার পালস চেক করে দেখলাম সে এখনও জীবিত৷ আমি বললাম, একে হাসপাতালে নিয়ে যাবো৷ এই কথা শুনে কেউ কেউ বলে উঠল: পুলিশের ঝামেলা হবে৷ হাসপাতালের বিল দেবে কে? একে নিয়ে যাওয়ার রিকশা ভাড়া দেবে কে?''
মানুষের জীবন যখন বিপন্ন তখন এ সব প্রশ্ন কতটা অবান্তর, অযৌক্তিক রাজু তা বুঝেছেন৷ তাই সেখানে উপস্থিত সবাইকে তিনি বলেছেন, ‘‘দেড় ঘণ্টা ধরে ওকে রাস্তায় শুইয়ে রেখেছেন, যে কোনো সময় ও মারা যেতে পারে৷ নাক একদম ফেটে গেছে, মাথা, চোয়াল দিয়ে রক্ত ঝরছে৷ টাকা লাগলে আমরা দেব৷ কেউ একটা কথাও বলবেন না৷ পুলিশে খবর দিলে দিন, তাও আমরা একে হাসপাতালে নেব৷''
তারপর আহত ছেলেটিকে রাজু আর তাঁর বন্ধু সিএমএইচ-এ নিয়ে চিকিৎসাই করাননি, কালশি কবরস্থানের পাশের একটা বাসা থেকে ছেলের বাবাকে খুঁজে বের করেছেন৷ ছেলেটির বাবা গার্মেন্টসে চাকরি করেন৷ রাতে তিনি এসেই নিয়ে যান ছেলেকে৷ সেই মুহূর্তেই অপার্থিব আনন্দ পেয়েছিলেন রাজু৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘ছেলের বাবা আমার হাত ধরে বললেন, বাবা অনেক বড় উপকার করছেন আপনারা, আমার ছেলেকে বাঁচাইছেন, আমি কোনোদিন আপনাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না (তাঁর চোখের কোণায় তখন এক ফোঁটা জল)৷''
আমার ব্লগে কাজি মাসুদ নিজের কোনো সুকর্মের খবর জানাননি৷ সুকর্ম করার সুযোগ বা সৌভাগ্য ক'জনেরই হয়! কুকর্ম থেকে নিজেকে দূরে রাখাও তাই পৃথিবীর জন্য কম কল্যাণকর নয়৷ অথচ এই ব্লগারও জানেন, ‘পাপ' করেও অনেকেই সদর্পে ঘুরে বেড়ান৷ তাঁদের জন্যই প্রচলিত একটি কথা লিখেছেন মাসুদ৷ কথাটি হলো, ‘পাপ ছাড়েনা বাপকে৷' লেখার শিরোনামও তাই৷
ছাত্রজীবনে এক শিক্ষকের মুখে বহুবার কথাটি শুনেছেন আমার ব্লগের এই ব্লগার৷ পরে অতীত ইতিহাসে বহু প্রতাপশালীকেও দেখেছেন জীবদ্দশাতেই তাঁর ভাষায় ‘পাপ'-এর শাস্তি পেতে৷ পলাশির যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘পাপ করলে তার শাস্তি থেকে কারো নিস্তার নেই৷ আমরা পলাশীর যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর, মীর কাসিমের কথা জানি৷ নামে মাত্র রাজত্ব পেলেও কী অবস্থা হয়েছিল তাদের শেষ পর্যন্ত৷''
তারপর শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গেও মিলিয়েছেন বহুশ্রুত এক আপ্তবাক্যকে৷ কাজি মাসুদ লিখেছেন, ‘‘১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর হত্যাকারীরা সারা দেশে লাফিয়ে বেড়িয়েছিল৷ ভেবেছিল, কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না৷ কিন্তু ‘সময়' বলে একটা কথা আছে৷ পাপ পাপীকে তাড়া করে বেড়ায় আজীবন৷ পার পেলো না কেউ৷ একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীরাও ভেবেছিল, কিছুই হবে না তাদের৷ কিন্তু না, পার পাওয়া আর হলো না৷''
কাজি মাসুদের লেখার শেষাংশ এরকম, ‘‘কিছু করার সময় হয়ত ভাবি কেউ দেখছেনা, কিছু হবে না৷ কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে৷ কিছুই চাপা থাকবে না৷ কে কীভাবে কোন পাপের শাস্তি হিসেবে কোথায় ধরা খাবে সেটা আগে থেকে কেউ জানে না৷ সো, সময় থাকতে সাবধান৷''
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ