1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজপাকিস্তান

পাকিস্তানে নারীদের বিবাহবিচ্ছেদ কেন বাড়ছে?

১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

পাকিস্তানে ডিভোর্স নারীদের জন্য একটি সামাজিক ট্যাবু৷ তারপরও দেশটিতে নিজেই বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা বাড়ছে৷

https://p.dw.com/p/4GvfU
Pakistan Internationaler Frauentag in Pakistan
ছবি: Rahmat Gul/ASSOCIATED PRESS/picture alliance

অধিকারকর্মীরা বলছেন, পাকিস্তানের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের পক্ষ থেকে বিবাহবিচ্ছেদ করার বিষয়টি মূলত নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া এবং দাম্পত্য জীবনে নিগ্রহের শিকার হওয়ার বাস্তবতা তুলে ধরছে৷      

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানে শরিয়া আইন অনুযায়ী, একজন নারী ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদের  জন্য আবেদন করতে পারেন না৷ তবে শরিয়া আইন অনুযায়ী, স্বামীর অনুমতি ছাড়া তারা বিয়ে ভেৃঙে দিতে পারেন৷  বিয়ে ভেঙে দেওয়ার এই রীতিকে বলা হয় ‘খুলা’৷ এটি সাধারণত পারিবারিকবাবেই হয়ে থাকে, অর্থাৎ, পারিবারিক আদালত বসিয়ে এ ধরনের বিষয়ের মীমাংসা করা হয়৷ তবে বিয়ে ভেঙে দেওয়া বা খুলার আবেদনের জন্য একজন নারীকে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখাতে হয়৷ যেমন, নির্যাতন, স্বামীর চলে যাওয়া, স্বামীর মানসিক রোগ সংক্রান্ত বিষয় ইত্যাদি৷

পাকিস্তান জুড়ে কতজন নারী এভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে মুক্তি নিয়েছেন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও এমন নারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷   

২০১৯ সারে পাকিস্তানের গালুপ অ্যান্ড গিলানি নামে একটি সংগঠনের জরিপে দেখা গেছে, পাতিস্তানের শতকরা ৫৮ ভাগ মানুষ মনে করেন যে, দেশে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে৷ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি পাঁচ জনের দুইজন মনে করেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কারণেই বেশিরভাগ সময় এমন বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে৷    

স্বাধীণতা চান নারীরা

এক বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন ৪১ বছরের সাজিয়া৷ দাম্পত্য জীবনে নির্যাতনের শিকার হতেন বালে দাবি তার৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও রান্নায় পারদর্শী সাজিয়া নিজে খাবার সরবরাহের ব্যবসা করেন৷ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পর সাজিয়া বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘রান্নার ব্যবসা দাঁড়ানোর পর বুঝলাম, আমি অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি৷ আর তখন প্রাক্তন স্বমীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাই৷’’   

সাজিয়া বাতুল: পোলিওর বাধা ডিঙিয়েছেন যে পাকিস্তানি নারী

 এমন কিছু উদাহরণ দিয়ে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা বলছেন, পাকিস্তানে ‘খুলা'র আবেদন করা বা বিবাহবিচ্ছেদ করা নারীর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে৷ পাকিস্তানের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস প্রোটেকশন সেন্টারের অ্যাটর্নি আতিকা হাসান রাজা বলেন, ‘‘পাকিস্তানে ধীরে ধীরে নারীরা বুঝতে পারছেন যে, শারীরিক নির্যাতন ছাড়া অন্য কারণেও, যেমন মানসিক নির্যাতন ইত্যাদির কারণে নারীরা বিয়েবিচ্ছেদ করতে পারে৷’’

এ আইনজীবী জানান, নারীদের পক্ষ থেকে বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়ার বিষয়টিতে যেহেতু পারিবারিক আদালত, অর্থাৎ পারিবারিক রীতি মেনে নেওয়ার বিষয় জড়িত, তাই ‘খুলা'র জন্য প্রয়োজনীয় পারিবারিক আদালতের সংখ্যা বাড়ছে৷

পাকিস্তানে বিয়ের রীতি

ইসলামাবাদের  নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হানিয়া  (ছদ্মনাম)  ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন৷ একটি ভালো চাকরি করার স্বপ্ন তার৷ এদিকে পরিবার চাইছিল, হানিয়া তার চাচাতো ভাইকে বিয়ে করুক৷ কিন্তু এ বিয়েতে মত নেই হানিয়ার৷ এরই মধ্যে বিয়ের চুক্তিপত্র তৈরি হয়ে গেছে৷ কিন্তু বিয়ের দিন পালিয়ে যান হানিয়া৷ পরে ‘খুলা’, অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করবেন৷

নিজের পছন্দের মানুষকে বিয়ে করে এখন ইসলামাবাদে থাকেন হানিয়া৷ পরিবার থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে৷ আর তাই বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে পারছেন না তিনি৷

নিজের পছন্দে বিয়ে করার বিষয়টি পাকিস্তানের সমাজে ‘লাভ ম্যারেজ’ হিসেবে পরিচিত৷ বাবা-মায়ের পছন্দে বিয়ে করাই পাকিস্তানে বেশি প্রচলিত৷ তবে পশ্চিমা দেশগুলোর মতো বিয়ের আগে  ছেলে ও মেয়ের একসাথে থাকার রীতি প্রচলিত নয়৷  

আইনজীবী মোমিন আলি খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরাই সাধারণত বিবাহবিচ্ছেদ বা ‘খুলা’র জন্য আবেদন করে থাকেন৷ 

তার মতে, সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা গ্রামের নারীদের জন্য নিজের ইচ্ছায় বিবাহ বিচ্ছেদ করা অনেক কঠিন৷ কারণ, জীবন যাপনের জন্য তাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা দরকার৷  

বি. মারি/আরআর

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য