1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু কমার নেপথ্যে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৪ জুন ২০২১

গত দেড় বছরে পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমেছে৷ তাই কোভিড পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগের কারণও বিশেষ ঘটছে না৷ অথচ বর্ষায় জল জমার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলেনি৷ তবে কী কারণে ডেঙ্গুর এমন পতন?

https://p.dw.com/p/3vUYI
পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচি
ছবি: Payel Samanta/DW

কোভিডের আগমনে রাজ্যের স্বাস্থ্য মানচিত্রের চেহারাটাই বদলে গিয়েছে যেন৷ কয়েক বছর আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বহু মানুষ৷ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল৷ কিন্তু কোভিড আগমনের পর থেকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নগণ্য৷ পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতেও ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য রক্তপরীক্ষার চাপ নেই৷ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সূত্র থেকে স্বস্তিদায়ক তথ্য মিলেছে৷ ২০১৯ সালে রাজ্যে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজারের বেশি৷ ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারের কিছু বেশি৷ আর এ বছর এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত আড়াইশোর কম৷ নিরক্ষীয় অঞ্চলে ১০ থেকে ৪০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন৷ বছরের পর বছর ধরে এটাই ছবি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সবচেয়ে ভয়ংকর মশাবাহিত ভাইরাস ডেঙ্গু৷ তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারত নয়, সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে, বিশেষ করে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বর্ষা এলেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটে৷  

সচেতনতা বৃদ্ধি?

কোভিডের বাড়বাড়ন্তে ডেঙ্গুর প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ কয়েক বছর আগেও ছবিটা এমন ছিল না৷ কোভিডের কারণেই কি তা হলে ডেঙ্গুর দাপট কমল রাজ্যে? রাজ্য ডেঙ্গু টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডাঃ জ্যোতির্ময় পাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোভিডকালে লকডাউন চলছে৷ অর্থনৈতিক কাজকর্ম, নির্মাণ থমকে গিয়েছে৷ রাস্তার ধারে যেসব কাজকর্ম হয়, সেগুলি কমে গিয়েছে৷ গণপরিবহণ বন্ধ রয়েছে৷ টায়ারে জল জমতে পারেনি৷ এলাকায় এলাকায় সচেতনতাও ছিল৷ তাই ডেঙ্গু কম হচ্ছে৷’’ সত্যিই কি মানুষ সচেতন হয়েছে? বাস্তব বলছে, রাস্তায় ডাবের খোলা, থার্মোকলের বাক্স ফেলে দেওয়া থেকে শুরু করে চৌবাচ্চায় জল জমিয়ে রাখার প্রবণতা বিন্দুমাত্র কমেনি৷ উল্টে করোনার সঙ্গে লড়তে গিয়ে পাড়ায় পাড়ায় মশা দমনের ধোঁয়া বা কীটনাশক ছড়ানোর কাজ ব্যাহত হয়েছে৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সদস্য ডাক্তার পুণ্যব্রত গুণ মনে করেন, "যে সব কারণে ডেঙ্গু কমতে পারে, সেসব দেখা যাচ্ছে বলে আমার জানা নেই৷ স্যানিটাইজেশনের কোনো উন্নতি হয়নি৷ হয়তো করোনা নিয়ে মাতামাতির কারণে ডেঙ্গুর রেকর্ড ঠিকঠাক রাখা হয়নি৷” ভাইরোলজিস্ট ডাঃ অমিতাভ নন্দী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, মশার জ্বালায় থাকা যাচ্ছে না, কিন্তু অসুখগুলো নেই৷ সচেতনতা যদি হত, তাহলে মশা এত থাকত না৷ সরকারের তরফ থেকে মশাবাহিত রোগ নির্মূলের পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি৷’’

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী?

কোভিডের জেরে বিধিনিষেধ বা রেকর্ডে গরমিল, এর আড়ালে থেকে যাচ্ছে ডেঙ্গু-পতনের বৈজ্ঞানিক কারণ৷ এক্ষেত্রে ডাঃ অমিতাভ নন্দী অনুমান করেছেন, রোগ দমনে ন্যাচারাল ইমিউনিটি ও ক্রস ইমিউনিটির প্রভাব আছে৷ তিনি বলেন, ‘‘হতে পারে প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে৷ দু এক বছর পর আবার প্রতিরোধ কমে গেলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে৷ যেমন, কালাজ্বর এ দেশে ২০-২৫ বছর পরপর আসে৷’’

হতে পারে প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে: ডাঃ অমিতাভ নন্দীo

এর পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘কোভিড ভাইরাসের শারীরিক গঠনের সঙ্গে অনান্য ভাইরাসের কিছুটা হলেও সাদৃশ্য থাকা অসম্ভব নয়৷ সেই কারণে কোভিডের প্রতি ইমিউনিটি তৈরি করার পাশাপাশি কোভিড সংক্রমিত মানুষগুলির মধ্যে অনান্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও ইমিউনিটি তৈরি হয়ে থাকতে পারে৷ এটাকে ক্রস ইমিউনিটি বলা হয়৷ অর্থাৎ এ জন্য ডেঙ্গু ও কোভিড ভাইরাসের মধ্যে অ্যান্টিজেনিক সাদৃশ্য থাকতে পারে৷ কোভিড এত বেশি মানুষের মধ্যে হয়েছে যে তাদের মধ্যে একটা ডেঙ্গু প্রতিরোধের ইমিউনিটি গড়ে উঠেছে৷’’

তবু প্রশ্ন একাধিক

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ডেঙ্গুর পরীক্ষা সঠিকভাবে হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ চিকিৎসকদের একাংশের মতে, অনেক রোগী একইসঙ্গে কোভিড ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন৷ কিন্তু এদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোভিডের উল্লেখ করা হয়েছে৷ এতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সঠিক হিসেব অধরা থেকে গিয়েছে৷ ডেঙ্গুর দাপট কমায় স্বস্তি এলেও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বর্ষার জল জমে যাতে এডিস ইজিপ্টাই মশার বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে৷ দমদম ও দক্ষিণ দমদমের মতো ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় নজরদারিতে ফাঁক রাখা হচ্ছে না বলে দাবি করছেন পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্যরা৷ দমদমের প্রাক্তন উপপুরপ্রধান ও পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য বরুণ নট্ট বলেন, ‘‘সচেতনতার প্রচার চলছে৷ মশার তেল ও জীবাণুনাশক ছড়ানো হচ্ছে৷ কোভিডের জন্য ঢিলেমি দেওয়া হয়নি৷’’