1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কারচুপির নানা নমুনা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ জুলাই ২০২৩

ভোট গণনার পর এক সপ্তাহ কেটে গেলেও নির্বাচনে অনিয়মের নানা নমুনা সামনে আসছে। এ নিয়ে মামলা হচ্ছে অগুনতি। শাসকের অস্বস্তি বাড়িয়ে কালকের মেগা সমাবেশের আগে ফের বিস্ফোরক বিধায়ক হুমায়ুন কবীর।

https://p.dw.com/p/4UBIC
অসহায় ভোটারের কান্না
অসহায় ভোটারের কান্নাছবি: Subrata Goswami/DW

কারচুপির নানারকম

সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণনাতে বিপুল কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার একটি পঞ্চায়েতে আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। মোট ভোটারের থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন জয়ী তৃণমূল প্রার্থী। বুথে মোট ভোটার ১ হাজার ৪৮৮ জন। অথচ সেখানে জয়ী প্রার্থী পেয়েছেন ১ হাজার ৫৩০ ভোট! এই পঞ্চায়েতের আর একটি বুথের পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে একই ধরনের তথ্য।

এমন অনিয়মের নানা অভিযোগে মামলা হচ্ছে আদালতে। কোথাও মোট ভোটারের থেকে বাড়তি ভোট পড়ার অভিযোগ। গণনা কেন্দ্রের ভিতরে শাসকদলের বিধায়কের চাপে ভোটের ফল বদলেরও অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে এক জয়ী বিজেপি প্রার্থীকে তৃণমূলের নামে শংসাপত্র দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় পাওয়া যাচ্ছে ছাপবিহীন ও ছাপযুক্ত ব্যালট পেপার। ভোট গণনার এক সপ্তাহ পর পাওয়া গিয়েছে নির্বাচন কর্মীদের 'সিল' করা ব্যালট বাক্স।

নিশানায় আমলারা

বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এই কারচুপি করেছে শাসক দল। এক্ষেত্রে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বা বিডিওদের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি বিরোধীদের। ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্ট একাধিক বিডিওকে তলব করেছে। এ ব্যাপারে হলফনামা দিতে বলা হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে।

এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আগামীকাল, শুক্রবার বিভিন্ন ব্লকে বিডিও দপ্তর ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। বুধবার কলকাতায় আয়োজিত মিছিল থেকে এই ঘোষণা করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

বিডিওরা এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার। তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পর্যবেক্ষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমলাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার কথা। তারা শাসক দল ও প্রশাসনের নির্দেশে কাজ করছেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকর।"

কলকাতার উপকণ্ঠেও

শুধু জেলায় নয়, কলকাতার লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় ভোটে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আধুনিক উপনগরী নিউটাউনের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, তারা নির্বাচনের দিন ভোট দিতে পারেননি।

এলাকার বাসিন্দা, সিপিএম নেতা সপ্তর্ষি দেব বলেন, "বহিরাগতরা এসে ভোটারদের রুখেছে। ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। ভোট দিতে চাইলে তাদের শাসানো হয়েছে।" নিউটাউন নাগরিক বৃন্দ এর প্রতিবাদে পথে নেমে মিছিল করেছেন। তৈরি করেছেন মানববন্ধন।

বিধাননগর লাগোয়া পঞ্চায়েতের একটি বুথে ভোট বয়কট করেছিলেন স্থানীয়রা। গণনায় দেখা যায়, ওই বুথে পড়েছে ৯৫ শতাংশ ভোট। এ নিয়ে মামলা হয়েছে হাইকোর্টে। রাজ্য পুলিশের ডিজিকে রিপোর্ট দিতে বলেছে আদালত। 'ভূত' কি ভোট দিয়ে গেল, এমনই প্রশ্ন তুলেছেন ভোটাররা।

নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ ওঠায় আদালত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তাদের নির্দেশ অনুসারে রাজ্য নির্বাচন কমিশন জেলাশাসকদের বলেছে, জয়ীদের ভাগ্য নির্ভর করবে আদালতের চূড়ান্ত রায়ের উপর।

যদিও এ প্রসঙ্গে প্রবীণ সাংবাদিক দেবাশিস দাশগুপ্ত বলেন, "অতীতে দেখা গিয়েছে, আদালত ভোট বাতিল করে না। করলেও সেটা ব্যতিক্রমী উদাহরণ। কমিশনকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিতে পারে আদালত, তাদের উপর সিদ্ধান্ত ছাড়তে পারে।"

হুমায়ুনের হুঙ্কার

শুক্রবার তৃণমূলের শহিদ দিবসের সমাবেশ। তাতে যোগ দিতে কলকাতায় এসে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীর।

এবিপি আনন্দকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভরতপুরের বিধায়ক বলেন, "এত মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ। এবার জঘন্যতম পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে।" এমনকী বিরোধীদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, "আগামীকাল বিজেপি যে বিডিও অফিস ঘেরাও করবে, তা ন্যায্য।"

হুমায়ুনের বক্তব্যে তৃণমূল নেতৃত্ব অসন্তুষ্ট।  মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেছেন, "দল তাকে বিধায়ক করেছে, মন্ত্রী করেছে। দলের অনুশাসন মেনে চলা উচিত। এ সব দলবিরোধী কাজকর্মের সামিল।"

ভিন্ন সুরে আরো দুই

তৃণমূলের দুই সিনিয়র বিধায়কও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বরাহনগরের তাপস রায় ও কামারহাটির মদন মিত্রের কথায়, পুলিশের একাংশ তাদের ভূমিকা ঠিকভাবে পালন করেননি। তাই এতো গন্ডগোল হয়েছে। নির্বাচন পর্বে এতো বেশি সংখ্যায় তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বিজেপির কটাক্ষ, এর দায় নিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। তারা সহিংসতা রুখতে ব্যর্থ।