1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশবান্ধব বিমান তৈরি

১ জানুয়ারি ২০২০

কার্বন নির্গমন, আবহাওয়া দূষণ কমাতে যানবাহনের প্রযুক্তির উন্নতির নানা প্রচেষ্টা চলছে৷ তবে যাত্রীবাহী বিমানের ক্ষেত্রে এখনো বড় কোনো সাফল্য আসেনি৷ জার্মানির বিজ্ঞানীরা সেই লক্ষ্যেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3VYXI
Iran Teheran Airbus A340 von Mahan Air
ছবি: picture-alliance/Xinhua/A. Halabisaz

মিউনিখের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসা হেল্ড, পাট্রিক সিব ও আলেক্সান্ডার ফ্র্যুবাইস এক অসাধারণ বিমানের নকশা তৈরি করেছেন৷ পরিবেশবান্ধব এই বিমানে শব্দও অনেক কম হবে৷ ‘ই-রে' আসলে এক হাইব্রিড বিমান৷ অর্থাৎ সেটি ব্যাটারি ও এভিয়েশন অয়েল দিয়ে চলে৷ ডানার উপরেই প্রপেলার রয়েছে এবং বিমানের পেছনে ইঞ্জিন৷ টেকঅফ ও ল্যান্ডিং-এর সময়ে শুধু বৈদ্যুতিক শক্তি কাজে লাগানো হয়৷ উপরে ওঠা ও যাত্রার সময় তেল ব্যবহার করা হয়৷ ডানার প্রান্তে জেনারেটর সে সময়ে ব্যাটারি চার্জ করে৷ পাট্রিক সিব বলেন, ‘‘প্রচলিত বিমানের তুলনায় প্রপালশন শুধু ডানার নীচে নয়, বিমানের উপরের অংশে ছড়ানো রয়েছে৷ এক একটি মোটর আংশিকভাবে চালিয়ে আমরা বিমানটিকে ভার্টিকাল অ্যাক্সিসে ঘোরাতে পারি৷ পেছনে ফিন বা পাখনার প্রয়োজন হয় না৷''

মিউনিখ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেক্সান্ডার ফ্র্যুবাইস সেইসঙ্গে আরও জানিয়ে দেন, যে বিমানটি টেকঅফ ও ল্যান্ডিং-এর সময় অত্যন্ত নীরব থাকে৷ ওড়ার সময়েও জ্বালানির আদর্শ ব্যবহার হয়৷

মিউনিখের এই ছাত্রছাত্রীদের ডিজাইন ২০১৮ সালে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা ও জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের পুরস্কার জিতেছে৷ কাগজেকলমে ‘ই-রে' ৬৫ শতাংশ কম জ্বালানি ব্যবহার করে৷ কিন্তু বাস্তবেও কি বিমানটিকে এভাবে তৈরি করা সম্ভব?

ইঞ্জিনিয়াররা ভবিষ্যতের বিমান তৈরির পথে কতদূর এগিয়েছেন? তিনটি গবেষণামূলক প্রকল্পের দিকে নজর দিলে তার একটা আভাস পাওয়া যাবে৷ প্রথম বিষয় হলো ইলেকট্রিক ইঞ্জিন৷ জার্মানির দক্ষিণে ‘সিটি-এয়ারবাস' বিমানটি তুলে ধরা হয়েছে৷ উড়ন্ত এই ট্যাক্সির মধ্যে আটটি ইলেকট্রিক ইঞ্জিন রয়েছে৷ সর্বোচ্চ চার জন যাত্রী যানজটের উপর দিয়ে অনায়াসে উড়ে যেতে পারবেন৷

ছোট আকারের স্পোর্টস প্লেন ইতোমধ্যেই বৈদ্যুতিক শক্তিতে উড়ছে৷ কিন্তু বড় আকারের যাত্রীবাহী বিমানের জন্য উপযুক্ত ব্যাটারি ও ইঞ্জিনের ক্ষমতা এখনো পর্যাপ্ত নয়৷ ফ্রাংক আন্টন সেই পরিস্থিতি বদলাতে চান৷ পদার্থবিদ ও পাইলট হবার পাশাপাশি তিনি সিমেন্স কোম্পানির ইলেকট্রিক বিমান বিভাগের প্রধান৷ তিনি তাঁর টিমের সঙ্গে এমন শক্তিশালী ইলেকট্রিক ইঞ্জিন তৈরির কাজ করছেন, যেটি প্রচলিত ইঞ্জিনের জায়গা নিতে পারে৷ ড. আন্টন বলেন, ‘‘এই যে ইঞ্জিনটি দেখছেন, সেটির ওজন মাত্র ৫০ কিলো হলেও ১,৫০০ নিউটন মিটার টর্ক, অর্থাৎ ২০০ কিলোওয়াট সৃষ্টি করতে পারে৷ এ ক্ষেত্রে পাওয়ার ডেনসিটি অত্যন্ত বেশি৷ প্রচলিত ইঞ্জিনের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি৷''

দ্বিতীয় বিষয় হলো এয়ারোডায়নামিক্স বা বায়ুগতি বিজ্ঞান৷ আরও উন্নত এয়ারোডায়নামিক্স কীভাবে হাসিল করা সম্ভব? জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের কর্ড রসো ও তাঁর টিম সে বিষয়ে গবেষণা করছেন৷ তাঁরা উইন্ড টানেলে বিশেষ এক বিমান পরীক্ষা করেছেন৷ এই ‘লো নয়েজ এয়ারক্রাফ্ট' অনেক কম শব্দ করবে৷ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ‘‘গোটা বিমানের আমূল পরিবর্তন করতে হবে৷ এখানে সেটাই ঘটেছে৷ বিচ্ছিন্নভাবে ইঞ্জিন ওপরে বসিয়ে লেজের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করে শব্দ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ আসলে শব্দ পুরোপুরি না আটকে বরং নীচের বদলে উপরে বায়ুমণ্ডলের দিকে চালিত করা হচ্ছে৷ একমাত্র এভাবেই সেটা সম্ভব হচ্ছে৷''

তথাকথিত ল্যামিনার প্রযুক্তির সাফল্যের সম্ভাবনা যথেষ্ট উজ্জ্বল৷ এ ক্ষেত্রে ডানা সামনের দিকে চেয়ে থাকে৷

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হালকা কাঠামো৷ অ্যালুমিনিয়ামের বদলে প্লাস্টিক ব্যবহারের চেষ্টা চলছে৷ জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের গবেষকরা নতুন উপাদান নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ কার্বন ফাইবারের মাধ্যমে প্লাস্টিককে শক্ত ও হালকা করা হচ্ছে৷ মনে রাখতে হবে, ওজন কমলে জ্বালানির ব্যবহারও কমে৷ গবেষকদের মতে, বর্তমানে শুধু এভাবেই দুই শতাংশ সাশ্রয় হচ্ছে৷

মোটকথা তিনটি চলমান প্রকল্প সম্মিলিতভাবে জ্বালানির চাহিদা প্রায় ৩০ শতাংশ কমাতে পারে৷ তবে ‘ই-রে' বিমানের ডিজাইনাররা যা চাইছেন, তার অর্ধেক মাত্রা ছোঁয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ অর্থাৎ প্রকৃত পরিবেশবান্ধব বিমান তৈরি করতে আরও সময় লাগবে৷

আন্দ্রেয়াস কেগেল/এসবি