1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পক্ষাঘাত সত্ত্বেও নাচ ছাড়েননি সোফি

২৫ মে ২০২৩

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পরোয়া না করে অনেক মানুষ যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ কেউ কেউ আবার খ্যাতির শিখরেও পৌঁছে যাচ্ছেন৷ জার্মানির এক তরুণী পেশাদার নৃত্যশিল্পী হিসেবে সেই অসাধ্যসাধন করেছেন৷

https://p.dw.com/p/4RmfW
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: DW

যখন নাচেন, তখন তাঁর সাধারণত ক্রাচের মতো বস্তুর সহায়তার প্রয়োজন হয়৷ ২০১৭ সাল থেকে তাঁর শরীরের নীচের কিছু অংশ অসাড় হয়ে গেছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ২৩ বছর বয়সি এই তরুণী পেশাদার নৃত্যশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন ত্যাগ করেননি৷ সোফি বলেন, ‘‘নাচ আসলে আমার অন্তরের গভীরে রয়েছে৷ সেই আবেগ আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, শব্দ ছাড়াই সেটা আমার মুখের ভাষা৷''

গোটা জার্মানি জুড়ে মঞ্চের উপর তিনি সেই ভাষায় নিজের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন৷ সেই কাজ মোটেই সহজ নয়৷ নৃত্যশিল্পী হিসেবে তাঁকে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে হয়েছিল৷

১২ বছর বয়সে সোফি ড্রেসডেন শহরে এক নাচের স্কুলে প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন৷ এর ছয় বছর পর ডাক্তাররা তাঁর মেরুদণ্ডে একটি অ্যাবসেস আবিষ্কার করেন৷ জরুরি অপারেশন করলেও ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল৷ কারণ সেই অ্যাবসেস স্নায়ুর ক্ষতি করেছিল৷ ফলে তাঁর ‘ইনকমপ্লিট প্যারাপ্লেজিয়া' হয়৷ তখন তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সোফি হাউয়েনহ্যার্ম বলেন, ‘‘পক্ষাঘাতের দুই সপ্তাহ পর আমি প্রথম ডান্স ইম্প্রোভাইজেশন ভিডিও শুট করি৷ তখন ছেকেই বুঝেছিলাম, যে কিছুই বদলায় নি৷ আমার শরীরে পরিবর্তন ঘটলেও আমার হৃদয় ও আত্মা থেকে নাচ কেটে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়৷''

হুইলচেয়ারে বসে তিনি নাচের একটি ভিডিওর শুটিং করেন৷ উচ্চশিক্ষা শেষ করা অন্যতম লক্ষ্য হলেও সেই প্রক্রিয়ার সময় তাঁর এক উপলব্ধি হয়৷ সোফি বলেন, ‘‘রোগ নির্ণয় হবার পর সেই মুহূর্তে আমি সেই বাস্তব এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছিলাম৷ আমি বলেছিলাম, আমার বাছাই করা পথে, আমার জীবনে এমনটা কখনোই হতে পারে না, যে আমি আর হাঁটতে পারবো না৷ নাচ বন্ধের তো কোনো প্রশ্নই নেই৷ আমার জীবন, আমার শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলাম৷ জীবনে কী করবো, সেই সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে চেয়েছিলাম৷''

পক্ষাঘাতজয়ী নৃত্যশিল্পী সোফি

মঞ্চের উপরে ও বাইরে তাঁর দৃঢ় সংকল্প স্পষ্ট হয়ে যায়৷ নাচের সময় বাদ দিলে সোফি ড্রেসডেন শহরের কাছে নিজের বাসার বাইরে প্রকৃতির কোলে সময় কাটাতে ভালোবাসেন৷ তিনি নিজের মানসিক শক্তি ও শরীরে অন্যান্য ক্ষমতার উপর ভরসা করেন৷ শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে কিছুতেই অন্তরায় হয়ে উঠতে দিতে চান না সোফি৷ তিনি মনে করেন, ‘‘প্রতিবন্ধকতা আসলে বৈশিষ্ট্যও বটে৷ যেমন কোনো খাটো মানুষ হাত উঁচু করে কিছুর নাগাল পান না৷ অথবা নাজুক ত্বকের কারণে কারো তিরিশের বদলে পশ্চাশ মাত্রার সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টরের প্রয়োজন হয়৷ আমার ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছিল৷ আমাকে নতুন বৈশিষ্ট্য সামলানোর কাজ শিখতে হয়েছিল৷''

পেশাদার নৃত্যশিল্পী হিসেবেও সোফি সাফল্য পাচ্ছেন৷ তিনি এমন কোরিওগ্রাফারদের সঙ্গে কাজ করেন, যাঁরা প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধকতাহীন নৃত্যশিল্পীদের জন্য বিশেষ নৃত্য সৃষ্টি করেন৷ শারীরিক সীমাবদ্ধতা ছাড়াই নৃত্যের লাগামহীন চরিত্র তুলে ধরা তাঁদের উদ্দেশ্য৷ সোফি হাউয়েনহ্যার্ম বলেন, ‘‘আমার স্বপ্ন অবশ্যই পূরণ হয়েছে৷ নৃত্যশিল্পীর জীবন আমি পেয়েছি৷ অনেক ঘুরতে পারি, অনেক শহর দেখতে পারি, অসাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়৷ মোটকথা যেমন জীবন চেয়েছিলাম, সেটাই পেয়েছি৷ তবে যেমনটা ভেবেছিলাম, সে তুলনায় একেবারে অন্যভাবে সেটা পাচ্ছি৷ কিন্তু তাতে কোনো অবনতি হচ্ছে না৷''

বর্তমানে তিনি ‘ব্যালেন্স' নামের কোরিয়োগ্রাফি রপ্ত করছেন৷ জীবনে বার বার অবলম্বন পাওয়াই সেই নৃত্যের মূলমন্ত্র৷ সোফি হাউয়েনহ্যার্ম অধ্যবসায় এবং শৃঙ্খলা অবলম্বন করে নৃত্যের মধ্যে জীবনের এক খুঁটি খুঁজে পেয়েছেন৷

টেসা/লেই/এসবি