1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নোবেল পুরস্কার পেয়ে দায়িত্ব বাড়ল ওবামার

১০ অক্টোবর ২০০৯

নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হলেন মাত্র আটমাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া বারাক ওবামা৷ প্রতিক্রিয়া যেমন রয়েছে এই সিদ্ধান্তের পর, তেমনি রয়েছে কিছু দৃঢ় যুক্তিও৷ এ আসলে বাড়তি দায়িত্ব এমনও শোনা যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/K3Sb
শান্তি আনতে শান্তির হাসিছবি: AP

প্রথমে প্রতিক্রিয়া

ওবামা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, এই সংবাদ প্রচারিত হতে শুরু করা মাত্র বিশ্বজুড়ে দুই ধরণের প্রতিক্রিয়া শোনা গেছে৷ ইতিবাচক মন্তব্যের মধ্যে অন্যতম জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি নজরদারি সংস্থা আইএইএ-র প্রধান মোহাম্মেদ এল বারাদেই বলেছেন, ওবামার চেয়ে যোগ্য আর কোন ব্যক্তি এই গ্রহে ছিলেন না যিনি নোবেল পেতে পারতেন অন্তত এই মুহূর্তে৷ বিশ্বকে জাগিয়ে তোলা, বর্তমান সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করার প্রয়োজনীয় কাজটি করে চলেছেন ওবামা, বলেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হোসে মানুয়েল বারোসো৷ দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ডেসমন্ড টুটু-র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আফ্রো আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার মধ্যে রয়েছে ইতিহাসের স্বীকৃতি৷

নেতিবাচক কথাবার্তা

আরব দুনিয়ার মতে, ওবামাকে এখনই নোবেল শান্তির মত এতবড় সম্মানে ভূষিত করাটা বড় তাড়াহুড়োর কাজ হয়েছে৷ তিনি মাত্র আটমাসের কিছু বেশি প্রেসিডেন্ট পদে বসেছেন৷ তেমন কিছু এখনও করে দেখিয়েছেন বলে মনে করছে না তারা৷ বস্তুত আমেরিকার অভ্যন্তরেও ওবামার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়াটা আনন্দের চেয়ে বিস্ময়েরই সৃষ্টি করেছে বেশি৷ ওবামা নিজেও বেশ বিস্মিত হয়েই গ্রহণ করেছেন এই সংবাদ৷ ভোরবেলায় কন্যা মালিয়া ঘুম ভাঙিয়ে তাঁকে জানায়, ‘বাবা তুমি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছ৷' অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে এই সম্মানকে গ্রহণ করে ওবামা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, সত্যিই তিনি এই সম্মানের যোগ্য কিনা এই মুহূর্তে৷

কেন ওবামাকেই নির্বাচন করল নোবেল কমিটি ?

ওবামা নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রে অসামান্য উদ্যোগের জন্য৷ তাকিয়ে দেখা যাক, তিনি আসার পর কী কী নতুন যোগ হয়েছে আমেরিকার ভাবমূর্তিতে৷ উত্তর কোরিয়া, ইরান আর ইরাককে যে অশুভ অক্ষশক্তি বলে ভূষিত করেছিলেন ওবামার পূর্বসূরী বুশ, ওবামা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছেন৷ কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রথম বাক্য উচ্চারণ করেছেন ‘আসসালামু আলাইকুম', মুহূর্তে ইসলামী বিশ্বের হৃদয়ে প্রবেশ করেছেন তার মাধ্যমে৷ সহনশীল উপায়ে ইসলামী বিশ্বের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করতে চান তিনি আমেরিকার প্রতিনিধি হয়ে৷ রাশিয়ার তীব্র আপত্তি ছিল পূর্ব ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ কেন্দ্র গড়া নিয়ে৷ সে রাস্তাও বন্ধ করেছেন ওবামা৷ গুয়ান্তানামো বন্দিশিবির বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত, সেটিও ওবামার৷ তার ওপর রয়েছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার কমানোর উদ্যোগ৷ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি উদ্যোগ, ইত্যাদি৷

Obama Rede In Kairo Flash-Galerie
ইসলামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের নতুন সূত্রপাত৷ কায়রোর সেই ঐতিহাসিক ভাষণমঞ্চে ওবামা৷ছবি: AP

তাহলে এই পুরস্কারের মাধ্যমে কোনো বার্তা দেওয়া হল

দেওয়া হয়েছে বার্তা৷ বস্তুত, প্রেসিডেন্ট ওবামার কাঁধে, বা বলা ভালো আমেরিকার কাঁধে বিশ্বশান্তির পদক্ষেপের এক ইঙ্গিতময় বার্তা এই পুরস্কারের মাধ্যমে দিয়ে দিল নোবেল শান্তি কমিটি বা বকলমে আন্তর্জাতিক মহল৷ এরপর ইরাক বা আফগানিস্তান বা আরও আগের ভিয়েতনাম এই যে সব যুদ্ধের সঙ্গেই জড়িয়ে গেছে আমেরিকার নাম, তেমনটা করার আগে অনেক ভাবতে হবে আমেরিকাকে৷ যুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনও সহজ হবে না৷ যে ওবামাকে আমেরিকার মানুষ নির্বাচিত করে তাদের দেশের শীর্ষপদে বসিয়েছে, তাঁরাও দায়বদ্ধ থাকবেন তাঁদের প্রেসিডেন্টের নেওয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গে৷ ওবামা কিন্তু নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের এই ইঙ্গিতটা বুঝে গেছেন৷ সুতরাং তাঁর বক্তব্য, আমার নিজস্ব কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসাবে এই পুরস্কারকে দেখছি না আমি৷বরং গোটা বিশ্বের মানুষকে, সব দেশকে শান্তির পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে, মনোবলকে আরও জোরদার করল এই পুরস্কার৷

আশা করা যাক, ওবামার এই নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ সেই দিকেই নিয়ে যাবে বিশ্বকে, যেখানে হানাহানি বিহীন এক সুন্দর গণতান্ত্রিক সমাজের অংশীদার হতে পারব আমরা সকলেই৷

প্রতিবেদন-সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা-রিয়াজুল ইসলাম