নেপালের অনন্য সেই নারী...
৩০ জানুয়ারি ২০১৭ভারতে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য অন্যতম সেরা পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী'৷ এই পুরস্কার পাবেন জেনে অনুরাধা কৈরালা বেশ খুশি৷ ৬৭ বছর বয়সি সাবেক শিক্ষিকা বলেছেন, এ পুরস্কার তাঁর দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দেবে৷
১৯৯৩ সালে হঠাৎই শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছিলেন ছোট-খাটো গড়নের অনুরাধা কৈরালা৷ চাকরি ছেড়ে বেছে নিয়েছিলেন অনিশ্চয়তায় ভরা এক জীবন৷ পাচারকারীরা যে চাকরির লোভ দেখিয়ে নেপাল, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের নারী বা অবুঝ শিশু-কিশোরীদের নিয়ে নারকীয় কষ্টের মাঝে ফেলে দেয়, তা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই চাকরি ছেড়েছিলেন অনুরাধা৷ এমন কাজ, এমন কঠিন দায়িত্ব নিয়ে সহজে কেউ সফল হতে পারেন না৷ তিনিও হননি৷ তবে আজ ২৪ বছর পর তাঁর ঝুলিতে জমা হয়েছে অনেক অর্জন, অনেক প্রাপ্তি৷
শিক্ষকতা ছেড়ে অনুরাধা মানব পাচারবিরোধী দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘মাইতি নেপাল' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ নেপালি ভাষায় ‘মাইতি' মানে ‘মায়ের ঘর'৷ সেই ঘর দুই যুগে পাচারকারীদের কারণে বিপদগ্রস্ত একজন নারীকেও ফেরায়নি৷ কোনো নারীর বিপদ দেখলেই এগিয়ে গেছে ‘মাইতি'৷ পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের উদ্ধার করেছে৷ পাচারের ঝুঁকির মুখ থেকেও ফিরিয়ে এনেছে অনেক নারীকে৷ পরিসংখ্যান বলছে, এ পর্যন্ত পাচারকারীরা যৌনকর্মী হতে বাধ্য করেছিল এমন অন্তত ১২ হাজার নারীকে উদ্ধার করে তাঁদের পূনর্বাসন করেছেন অনুরাধা৷ আরো অন্তত ৪৫ হাজার নারীকে পাচার হওয়া থেকে বাঁচিয়েছেন৷
গত ২৪ বছরে অনুরাধা কৈরালার কাজের পরিসরও অনেক বেড়েছে৷ ‘মাইতি'-র বাইরেও গড়েছেন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান৷ নেপাল-ভারত সীমান্তে গড়েছেন ১১টি ট্রানজিট হোম, পাচারকারীদের খপ্পর বা যৌনপল্লি থেকে উদ্ধারের পরও যেসব নারী মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাদের কল্যাণার্থে গড়েছেন তিনটি ‘প্রিভেনশন হোম'৷ এর বাইরে যৌনপল্লি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নারীদের সন্তানদের জন্য গড়েছেন স্কুল৷ হাসপাতালও গড়েছেন দু'টি৷
নেপালে অনুরাধা কৈরালাকে এখন সবাই ‘দিজ্জু', অর্থাৎ ‘দিদি' বলে ডাকে৷ তার মানে এখন তিনি সবার বড় বোন৷
দেশে সবার কাছ থেকে এমন সম্মান অর্জন করা অনুরাধাকে এর আগে জাতিসংঘ পুরস্কৃত করেছে৷ সিএনএন-এর ‘হিরো'স অ্যাওয়ার্ড'-ও পেয়েছেন তিনি৷ এবার পাবেন বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ভারতের অন্যতম সেরা পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী'৷ আগামী মার্চ বা এপ্রিলে ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি অনুরাধা কৈরালার হাতে তুলে দেবেন এ পুরস্কার৷
এসিবি/ডিজি (টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)
বন্ধু, এ নিয়ে আপনার কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের ঘরে৷