আদালতে ছুটছেন দুধ উৎপাদনকারীরা
৩০ জুলাই ২০১৯আদালতের নিষেধাজ্ঞায় সাময়িক অসুবিধায় পড়েছিল সাধারণ ভোক্তারা৷ কারণ বাজারে এই ১৪টির বাইরে আর কোনো প্রতিষ্ঠান পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন করে না৷ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীন জানিয়েছেন, মিল্ক ভিটা বাজারে চলে আসায় সংকট যতোটা প্রকট হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি৷
এছাড়া প্রাণ ডেইরি লিমিটেড ও আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিক্রির নিষেধাজ্ঞাও স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত৷
আদালতের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে: আফতাব মিল্ক অ্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্ট লিমিটেড (আফতাব), ব্র্যাক (আড়ং মিল্ক), অ্যামেরিকান ডেইরি লিমিটেড (মু), বারো আউলিয়া ডেইরি (ডেইরি ফ্রেশ), ড্যানিশ ডেইরি ফার্ম লিমিটেড (আয়রান), ইছামতী ডেইরি লিমিটেড (পিউরা), ইগলু ডেইরি লিমিটেড (ইগলু), উত্তরবঙ্গ ডেইরি খামার (মিল্ক ফ্রেশ), জিহান মিল্ক অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং, শিলাইদহ ডেইরি (আলট্রা মিল্ক) ও পূর্ব বাংলা ডেইরি প্রডাক্টস (আরওয়া)৷
বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডর (মিল্ক ভিটা) জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের উৎপাদিত দুধে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই৷ সোমবার আদালতে তথ্য প্রমাণাদি জমা দিয়ে নিষেধাজ্ঞা বিরুদ্ধে আট সপ্তাহের স্থগিতাদেশ পেয়েছেন বলেও জানান তিনি৷ বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের বাজারে পাস্তুরিত দুধের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী মিল্ক ভিটা৷ তাদের মার্কেট শেয়ার ৫২ দশমিক ০৮ ভাগ৷ এর পরেই আছে ব্র্যাকের আড়ং মিল্ক৷ তাঁদের মার্কেট শেয়ার ২০ দশমিক ৮৩ ভাগ৷
ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড এন্টারপ্রাইজের (আড়ং মিল্ক) পরিচালক আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, আদালতে নির্দেশনা মেনে তাঁদের বিক্রয়, বিতরণ এবং উৎপাদন আপাতত বন্ধ আছে৷ আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণাদি নিয়ে আপিল করবেন বলেও জানান তিনি৷
আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের পাস্তুরিত দুধে ম্যাক্সিমাম রেসিডিউ লিমিট (এমআরএল)-এর বাইরে কোনো কিছুই বাড়তি নেই৷'' তাই তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে তাঁরা পণ্য বাজারজাত করেন৷ পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘যদিও কন্টামিনেন্টস পরীক্ষা করা বা চেক করা বিএসটিআই-এর অংশ না৷ বিএসটিআই-এর প্যারামিটারের মধ্যেও এসব নেই... কিন্তু আমরা আমাদের কনজ্যুমার এবং প্রোডাক্টের কোয়ালিটির ব্যাপারে কনসার্ন, তাই নিজেরাই ল্যাব টেস্ট এবং অ্যান্টিবায়োটিক টেস্ট করে থাকি৷''
তিনি আরো বলেন, গত ছয় মাসে দেশের বাইরের দুটি ল্যাব থেকে চার বার পরীক্ষা করা হয়েছে৷ কোনো টেস্টেই এমআরএল-এর অতিরিক্ত রিডিং পাওয়া যায়নি৷
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটশনের (বিএসটিআই) উপ-পরিচালক রিয়াজুল হক জানিয়েছেন, এসব প্রতিষ্ঠান পাস্তুরিত দুধ বাজারজাত করতে চাইলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে৷
নিষিদ্ধ পাস্তুরিত দুধের মনিটরিং নিয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা জানান, ‘‘আদালত কোনো প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে দায়িত্ব দেয়নি৷ রায়ের কপিটা আমরা পেয়েছি৷ রায়ে যদি বিএসটিআইকে এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের কথা বলে অবশ্যই আমরা প্রত্যাহারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো৷'' অন্যথায় আদালতের নির্দেশে উৎপাদনকারিদেরকে সব দায়িত্ব নিতে হবে বলেও জানান তিনি৷
দুগ্ধশিল্প নিয়ে আশঙ্কা
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীন জানিয়েছেন, ‘‘আজ দেখলাম, অনেক খামারিরা এসে বিক্রি করতে না পেরে এগুলো (দুধ) সব রাস্তায় ঢেলে দিচ্ছে, নদীতে ঢেলে দিচ্ছে৷''
আসন্ন ঈদে দুধের চাহিদা বেড়ে যাবে বলেও মত দিলেন তিনি৷ তাঁর দাবি, দুধে অ্যান্টিবায়োটিক এবং সীসা কোত্থেকে আসছে তা আগে নির্ধারণ করা উচিত৷ সেটা ঠিক হলেই সংকট কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷ তবে দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা তাঁর৷
ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড এন্টারপ্রাইজের (আড়ং মিল্ক) পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘লোকাল প্রসেসড লিক্যুইড মিল্ক যদি বাজারে পাওয়া না যায়, তাহলে কনজ্যুমারকে অল্টারনেটিভ খুঁজতে হবে, কনজ্যুমার অল্টারনেটিভ খুঁজে নেবে৷'' তাই প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের নিয়ে তাঁরা বেশ চিন্তিত৷ এ অবস্থা চলতে থাকলে, অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলেও মনে করেন তিনি৷ তাঁর দাবি, দেশীয় শিল্প বন্ধ থাকলে আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাবে৷
আর দুগ্ধশিল্পের সঙ্গে জড়িত দেশের লাখো খামারির জীবন, জীবিকাও সংকটের মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি৷
অবশ্য আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছেন, গুড়ো দুধে কি আছে তা দেখা দরকার। আদালত চান না, দেশীয় দুধ বন্ধ হওয়ার কারণে বিদেশি গুড়ো দুধে বাজার সয়লাব হয়ে যাক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক মনে করেন, পাস্তুরিত দুধ মোট উৎপাদিত দুধের সামান্য একটি অংশ৷ বড়জোর ১০ ভাগ হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘দুধে অ্যান্টিবায়োটিক এবং সিসা সাধারণত খামারি পর্যায়ে আসেনা৷ এটা পাস্তুরিত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই মেশে৷''
মাত্র সাত দিনের মধ্যে এর সমাধান করা সম্ভব জানিয়ে আ ব ম ফারুক বলেন, ‘‘প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের মেশিন সংস্কার করে তাহলেই সমস্যা মিটে যাবে৷''
একইসঙ্গে খামারিদেরও প্রতিও মনিটরিং বাড়ানোর ওপর তাগিদ দেন তিনি৷ বলেন, ‘‘তাঁরা (খামারি) কী খাবার খাওয়াচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ৷ মানবদেহের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক গরুকে দেয়া হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে৷''