নির্বাচন দেশে দেশে
রোববার জার্মানিতে সংসদ নির্বাচন৷ এই নির্বাচনকে সামনে রেখে চলুন দেখে নিই বিভিন্ন দেশে ভোটের চালচিত্র৷
বিশাল আয়োজন
ভারতের ২০০৯ সালের নির্বাচনে ৭১ কোটি ৪০ লাখ ভোটার ছিল৷ সবগুলো রাজ্যের ভোট শেষ হতে এক মাসের মতো সময় লেগেছিল৷ ভোট হয়েছিল পাঁচ ধাপে, তাতে কাজে লাগানো হয়েছিল ১৪ লাখ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন৷ আর কোনো দেশে কখনো এত বিশাল আঙ্গিকের ভোট হয়নি৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে পরবর্তি নির্বাচনটি হবে ২০১৪ সালে৷
ব্যালটের রাজত্ব
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের নির্বাচনে এখনো ব্যালট পেপার ব্যবহার করা হয়৷ দল বা প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত প্রতীকের ছবি সম্বলিত কাগজে ‘সিল’ মারেন ভোটাররা৷ এই ছবিটি এ বছর হয়ে যাওয়া জিম্বাবোয়ের সাধারণ নির্বাচনের৷ সে সময় ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল৷ কিন্তু সে দেশের সাংবিধানিক আদালত নির্বাচনকে ‘বৈধ’ ঘোষণা করে৷ ফলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সপ্তমবারের মতো শপথ নেন রবার্ট মুগাবে৷
টিপ সই
জাল ভোট রুখতে অনেক দেশে এখনো ভোট দেয়ার আগে ভোটারের আঙুলে এক ধরণের কালি লাগিয়ে দেয়া হয়৷ সিলভার নাইট্রেট মেশানো থাকায় এ কালির দাগ দু-তিন দিন অন্তত আঙুলের চামড়ায় থাকে, আর নখের সেই দাগ তো কখনো কখনো চার সপ্তাহের আগে মোছেই না৷ গত মে মাসে মালয়েশিয়ার ভোটাররাও এভাবে টিপ সই করেই ভোট দিয়েছেন৷
মদ্যপান বারণ...
মেক্সিকোয় নির্বাচনের দিনে মদ্যপান করা নিষেধ৷ রাজ্য সরকার চাইলে অবশ্য এ আইন শিথিল করতে পারে৷ পর্যটকদের ভিড় থাকে এমন জায়গাতে অবশ্য এ নিয়মের কড়াকড়ি থাকে না৷
ভোট যখন মৃত্যুপরোয়ানা...
যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করার পর ইরাকে প্রথম নির্বাচন হয়েছে গত এপ্রিলে৷ একরকম প্রাণ হাতে নিয়েই ভোট দিয়েছেন ইরাকের জনগণ৷ নির্বাচনের আগে-পরে সন্ত্রাসী হামলায় মারা যায় ২০০ জন, যার মধ্যে ১৪ জন প্রার্থীও ছিলেন৷ নির্বাচনের দিনে কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি৷ তবে জনমনে আতঙ্ক ছিল বলে অর্ধেকেরও কম ভোটার তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন৷
বিশেষ দিন
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হয় নভেম্বরের কোনো এক মঙ্গলবারে৷ এ নিয়ম চলছে ১৮৪৫ সাল থেকে৷ শীতের আগে এবং ফসল কাটা শেষ হবার পরে যাতে নির্বাচন হতে পারে সে কথা ভেবেই বছরের একাদশতম মাসকে বেছে নেয়া৷ সে আমলে দূরদূরান্তের শস্যখামার থেকে নিজেদের নির্বাচনি এলাকায় আসতে হতো ভোটারদের৷ সোমবার যাত্রা শুরু করে মঙ্গলবার ভোট কেন্দ্রে হাজির, হাটের বার বুধবারের আগেই ভোট দেয়া শেষ – যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ম এখনো বদলায়নি৷
ব্যালট এবং বার্বিকিউ
অস্ট্রেলিয়ায় ভোট নেয়া হয় সসেজের দোকান, স্কুল এবং কমিউনিটি হলগুলোতে৷ ভোটারের কাছে ‘স্ন্যাকস’ বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করার হিড়িক পড়ে তখন৷ গত ৭ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনেও তা-ই হয়েছে৷ অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দেয়া-না দেয়া কারো ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার ব্যাপার নয়৷ বয়স ১৮-র বেশি হলে বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া ভোট দেয়া সবার জন্য বাধ্যতামূলক৷
ভোট শুধু অধিকার নয়
বিশ্বের অন্তত ২২টি দেশে ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক৷ তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নিয়মটা একটু শিথিল করা হয়৷ ব্রাজিলে ৭০-এর বেশি বয়সি এবং লেখাপড়া না জানা ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের জন্য ভোট দেয়া-না দেয়া তাঁদের ইচ্ছের ব্যাপার৷
প্রচারণা বন্ধ
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক দেশে ভোটের দিনে নির্বাচনি প্রচারাভিযান পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হয়৷ রাশিয়াতেও একই নিয়ম৷ সে দেশের সর্বশেষ নির্বাচনের আগে তাই পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিংও সরিয়ে ফেলতে হয়েছিল৷
ব্যাপক সাড়া
ইরানে গত জুনের নির্বাচনে ৭২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন৷ ভোট কেন্দ্রগুলোতে এত ভিড় ছিল যে কোথাও কোথাও নির্ধারিত সময় শেষ হবার কয়েক ঘণ্টা পরও ভোট নিতে হয়েছে৷ ৫১ ভাগ ভোটারের রায় পেয়ে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন হাসান রৌহানি৷