1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিয়োগ তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি

পায়েল সামন্ত পশ্চিমবঙ্গ
১৬ জুলাই ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে রইল নিয়োগ মামলা। ১৬ জুলাই নির্ধারিত শুনানি পিছিয়ে গেল তিন সপ্তাহ।

https://p.dw.com/p/4iMGc
নিয়োগদুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন
আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীছবি: Satyajit Shaw/DW

স্কুল নিয়োগের ২০১৬ সালের প্যানেল বহাল থাকবে কি না, সে বিষয়ে মঙ্গলবার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আয়কর সংক্রান্ত মামলার চাপে তা আগামী মাসে পিছিয়ে গেল। সব পক্ষের বক্তব্য কী পদ্ধতিতে আদালতের সামনে পেশ করতে হবে, সে সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

সুপ্রিম শুনানি

মঙ্গলবার সকালে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী নিয়োগ মামলা ওঠে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে। এদিনের নির্ঘণ্টে ১২ নম্বরে ছিল এই মামলা। শুনানিতে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য শুনতে হবে আদালতকে। এর মধ্যে রয়েছেন চাকরিহারা ও চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরা। এছাড়া রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও বোর্ডের পক্ষেও বক্তব্য পেশ করা হবে।

এই শুনানি সময়সাপেক্ষ ও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা থাকায় আগে একটি রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির নির্দেশ চার সদস্যের একটি নোডাল কমিটি সব পক্ষের বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার তৈরি করবে। আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত এই কমিটির কাছে হলফনামা দেবে সব পক্ষ। পাঁচ থেকে সাত পাতার মধ্যে প্রত্যেককে নিজ পক্ষের বক্তব্য জানাতে হবে। দুই সপ্তাহ পর কারো বক্তব্য শোনা হবে না।

বিভিন্ন তরফের বক্তব্য পর্যালোচনা করে তার ভিত্তিতে সংক্ষিপ্তসার তৈরি করবে কমিটি। দুই সপ্তাহের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে নোডাল কমিটিকে। তিন সপ্তাহ পরে মঙ্গলবারে নিয়োগ মামলার পরের শুনানি হবে সর্বোচ্চ আদালতে। অর্থাৎ আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হতে চলেছে।

মঙ্গলবারের সুনানিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন ও রাজ্য সরকার হলফনামা দিতে চেয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট আলাদাভাবে তাদের কথা শুনতে চায়নি। কমিটির কাছে পেশ করা বক্তব্যের সংক্ষিপ্তসার আদালতের সামনে হাজির করবে কমিটি।

এদিনের শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "প্রচুর মামলা হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতিতে। হাজার দেড়েক এস এল পি দায়ের হয়েছে। এতো নথিপত্র এক জায়গায় আনার কাজ করবে কমিটি। মূলত পরের শুনানির আগে পদ্ধতি ঠিক করে দিয়েছে আদালত।"

‘এখন আমাদের কাছে এক একটা দিন একটা বছরের সমান’

হাইকোর্টের নির্দেশ

টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি, যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের চাকরি দেয়া, ও এম আর শিটে গড়বড় করা, মেধা তালিকার ক্রম নিয়ে অনিয়ম, এমন নানা অসাধু কাজকর্মের অভিযোগ উঠেছে স্কুলে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘিরে। এর মধ্যে নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-তে নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগ।

এই মামলায় তদন্ত করছে সিবিআই। দুর্নীতির তদন্তে জেলবন্দি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ সেই সময়ের একাধিক শিক্ষাকর্তা। গত মে মাসে কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করে দেয়। এর ফলে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি চলে যায়। যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করা যায়নি বলে সবার চাকরি বাতিল করে আদালত।

এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় রাজ্য সরকার। লোকসভা নির্বাচনের আগে হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। তাই ২০১৬ সালের প্যানেলভুক্ত কর্মরত শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী কারো চাকরি বাতিল হয়নি। ১৭ জুলাইয়ের শুনানির পর এ নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেয়ার কথা ছিল সুপ্রিম কোর্টের।

বাড়লো অপেক্ষা

এদিনের শুনানি পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশ যোগ্য শিক্ষক ও চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। তাদের বক্তব্য, অপেক্ষা করতে তারা রাজি। কিন্তু শেষমেশ যেন সুবিচার মেলে। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন যদি যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করতে না পারে, তাহলে প্যানেলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে গভীর আশঙ্কায় রয়েছেন কর্মরত শিক্ষক শিক্ষিকারা।

নদিয়ার চাকরিপ্রার্থী আবু নাসের রয়েছেন ওয়েটিং লিস্টে। তিনি বলেন, "এখন আমাদের কাছে এক একটা দিন একটা বছরের সমান। তবু আমরা অপেক্ষা করতে রাজি। আশা করব, সুপ্রিম কোর্ট পুরো প্যানেল বাতিল করবে না। অযোগ্য প্রার্থীদের জায়গায় যাতে আমরা নিয়োগ পেতে পারি।"

এই অভিযোগ ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে গোড়া থেকে। তৃণমূল মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট আগেই বুঝিয়েছে, তারা সবার চাকরি বাতিলের পক্ষপাতী নয়। ১০ জনের মধ্যে তিনজন অন্যায় করলে সবার শাস্তি হতে পারে না। সবার চাকরি খাওয়ার জন্য যারা রাজনীতির করেছে, সেই বিরোধীদের জনতা প্রত্যাখ্যান করেছে নির্বাচনে।"

শুধু তৃণমূলের সাবেক মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় নন, বিধায়ক, নেতাদের নাম উঠে এসেছে সিবিআই তদন্তে। বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "বাজার থেকে যারা চাকরি কিনেছে, তাদের শাস্তি চাই। আর গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যত খোলা বাজার যারা বানিয়েছিলেন, যারা আজ বুক চিতিয়ে ঘুরছেন, নীতির কথা বলছেন, তাদেরও বিচার ও শাস্তি জনগণের দাবি।"

প্রাথমিকের মামলা

মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিকের টেট সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়। ২০১৪ সালে এই পরীক্ষা হয়েছিল। এর ভিত্তিতে ২০১৬ সালে ৪২ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ করা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। এই শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহা প্রশ্ন করেন, "৪২ হাজার নিয়োগ তালিকা  কারা ওই প্রক্রিয়ায় চাকরি পেয়েছিলেন?"

২০১৬ সালের প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। বিচারপতি বলেন, "প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও নিয়োগের তালিকা থাকা প্রয়োজন। কারা যোগ্য প্রার্থী ও কাদের নিয়োগ করা হল, তা সেই প্যানেল থেকে জানা সম্ভব। এই প্যানেল আদালত দেখতে চায়।"

হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ৪২ হাজার পদে কাদের নিয়োগ করা হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত তালিকা আদালতে পেশ করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। এই মামলার পরের শুনানি ৩০ জুলাই।