নিজের দেশেই পলাতক ইয়েমেনিরা
ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরুর আগে অল্পসংখ্যক মানুষ দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পেরেছে৷ তবে বেশিরভাগই দেশের ভেতরেই লুকিয়ে আছেন৷ কিন্তু যারা শরণার্থী শিবিরে পালিয়ে যেতে পেরেছে তারাও যে আশঙ্কামুক্ত বা নিরাপদে আছে, তা কিন্তু নয়৷
কোনো কিছুই যথেষ্ট নয়
ইয়েমেনে যুদ্ধ চলছে গত চার বছর ধরে৷ কবে এ যুদ্ধ শেষ হবে, তা কেউ জানেনা৷ ইতিমধ্যে প্রায় তিন লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে৷ কিন্তু দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় অংশই নিজের দেশেই বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে আছে৷ হাজ্জাহ রাজ্যের আবস শহরে নির্মিত অস্থায়ী শিবিরের মতো কেন্দ্রগুলোতে ২০১৫ সাল থেকে প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে৷এসব কেন্দ্রে পানি, খাবার, ওষুধপত্র কোনো কিছুই বাসিন্দার সংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট নয়৷
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট
২৪ মিলিয়ন অর্থাৎ সেদেশের জনসংখ্যার ৮০ ভাগ মানুষেরই জরুরিভাবে সাহায্যের প্রয়োজন৷ বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা৷ ইউনিসেফের মতে, ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে প্রতি দশ মিনিটে অন্তত একজন শিশু মারা যায়৷ সম্প্রতি জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত দাতাদের এক সম্মেলনে চলতি বছর ইয়েমেনের জন্য ২.৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তার অঙ্গীকার পাওয়া গেছে৷
আগে থেকেই সংকট ছিল
২০১৫ সালের অনেক আগে থেকেই ইয়েমেনে রাজনৈতিক সংকট চলছিল৷ সরকার, বিদ্রোহী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার নানারকম দ্বন্দ্বের কারণে বহু মানুষকে পালিয়ে যেতে হয়৷ সে সময় শতকরা ৫০ ভাগ মানুষই দারিদ্রসীমার নীচে বাস করতো৷ শতকরা ৭০ ভাগ মানুষেরই বিশুদ্ধ পানি এবং চিকিৎসা সেবার সুযোগ ছিলো না৷ তাছাড়া যুদ্ধের শুরুতেই সাংঘাতিকভাবে শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যায়৷
যেসব শিশুর ভবিষ্যত নেই
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে অনেক পরিবার হাজ্জাহ প্রদেশে আসে, যেখানে মোট শরণার্থীদের এক-পঞ্চমাংশের বসবাস৷ তবে এই জায়গাটিও কিন্তু তাদের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ নয়, বিশেষ করে, ছোট মেয়েদের জন্য তো নয়ই৷ সাহায্য সংস্থা অক্সফাম-এর মতে, অনেক মা-বাবা বাধ্য হচ্ছে তাদের শিশু কন্যাদের বিয়ে দিতে, যাতে যৌতুকের টাকা দিয়ে তারা খাবার কিনতে পারেন৷
কলেরা সংক্রমণ
সংকট ব্যাপকতর হওয়ার আগে দেশটি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ খাবার আমদানি করতো৷ বর্তমানে বিমানবন্দরগুলোতে সংঘাত চলায় রাজধানী সানার বিমানবন্দর বন্ধ৷ ফলে দেশটিতে গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ সামগ্রী আসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷ ১৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় নানা রোগ ছড়াচ্ছে৷ আর ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়৷
অস্থায়ী বাড়িঘর
দেশের ভেতরে পালিয়ে থাকা শরণার্থীরা আবস শিবিরে অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত বছর শরণার্থীদের সাথে মিলিতভাবে ৪,৭০০টি পরিবেশবান্ধব ঘর তৈরি করে৷ ঘর তৈরির প্রধান উপকরণগুলোর মধ্যে ছিলো মাটি, ঘাস এবং গরুর গোবর৷ বাড়িগুলো যাতে মানুষকে বৃষ্টি এবং গরম থেকে রক্ষা করতে পারে সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে৷ এই অসহায় মানুষগুলো কি আবার কখনো নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরতে পারবে?
যুদ্ধ শুরুর জন্য তো শিশুরা দায়ী নয়
‘শিশুরা তো যুদ্ধ শুরু করেনি, কিন্তু তাদেরই দিতে হচ্ছে সর্বোচ্চ মূল্য’ - একথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস৷ সেভ দ্য চিলড্রেনের এক হিসেব বলছে, ২০১৫ সাল থেকে পাঁচ বছরের কমবয়সি ৮০,০০০ শিশু অনাহারে ছিলো৷ তাছাড়া এক লক্ষ বিশ হাজারেরও বেশি শিশু বর্তমানে ক্ষুধা হুমকির মুখে রয়েছে৷ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, খুবই অল্পসংখ্যক শিশুই ফুটবল খেলার সুযোগ পেয়ে থাকে৷