1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাট্য পরিচালককে মারধর করে হনুমান পুজোর পরামর্শ

১২ এপ্রিল ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গে এক নাট্য পরিচালককে মারলো তৃণমূলের কর্মীরা। অপরাধ, তার নাটকে বগটুই, হাঁসখালির প্রসঙ্গ ছিল। বলা হয়েছে, নাটক করা চলবে না।

https://p.dw.com/p/4Pw15
প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।ছবি: imagebroker/IMAGO

নাট্য পরিচালকের নাম নিরুপম ভট্টাচার্য। তিনি ভারভারা রাওয়ের একটি কবিতা অবলম্বনে একটা নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন। ভারভারা রাও অন্ধ্র প্রদেশের এক বামপন্থি কবি,  যাকে ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছি্ল। কবিতা ও  নাটকের নাম 'কসাই'। গত ৯ তারিখে হালিশহরে সেই নাটক মঞ্চস্থ হয়। ওই নাটকে উত্তরপ্রদেশের হাথরাস, পশ্চিমবঙ্গের হাঁসখালি, বগটুই-এর প্রসঙ্গ রূপকের আঙ্গিকে রাখা হয়েছে।

এরপর মঙ্গলবার নিরুপম রানাঘাটে ফিরলে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ কয়েকজন তাকে বলে, রানাঘাটে থেকে ওই নাটক করা যাবে না। এরপর তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলে নিরুপম অভিযোগ করেছেন। এমনকী তার ৮৬ বছর বয়সি বাবা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার সঙ্গেও খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়। হমকি দেয়া হয়। 

নিরুপম অভিযোগ করেছেন, তাকে বলা হয়, মহড়া বন্ধ করে হনুমান পুজো করুন। নিরুপম আনন্দবাজার ও এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ''নাটকের বিষয় হলো, রাষ্ট্রই আসলে কসাই। রাষ্ট্রের অনাচারের বিরুদ্ধে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। মোট ২১টি শো করেছি। জুলাই মাসে আমার বাড়িতে নাটক করা, দেখার ছোট জায়গা 'ডাকঘর' নির্মাণ করি। অল্প দর্শক এখানে নাটক দেখতে পারেন। এই জায়গাকেই ভেঙে ফেলতে বলেছে হামলাকারীরা।''

নিরুপম জানিয়েছেন, ''গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি নাট্যমেলায় নাটকটির অভিনয় হয়। তারপর তৃণমূলের আশ্রিত গুন্ডারা পাড়াতে নানাভাবে উত্যক্ত করতে শুরু করে। তারা বলে নাটকটি করা যাবে না। এবার হালিশহরে শো ছিল। শো করে ফিরছি। এগারোটা বেজে গেছে। রাতে ঘুরছি। তারা প্রথমে সৌজন্য দেখাতে আসে। এরপর নানা কথা বলতে থাকে। রাগারাগি, ঝগড়া হয়। তারপর গায়ে হাত দেয়। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যর নেতৃত্বে ঘটনা ঘটে।''

নিরুপম এবিপি আনন্দকে বলেছেন, ''ওদের আপত্তির জায়গা দুটো। একটা সংলাপ আছে, পোড়া গন্ধে ছিছিক্কার। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে হাজির হতে হয়। দেবী সদয় হলে, দু-চারটে ধরপাকড় হয়। চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেই চলে। আর আমরা বলেছি, রাষ্ট্রই কসাই।''

নিরুপমের অভিযোগ, ''আমার ডাকঘরের পাশে একটা হনুমান মন্দির করেছে তৃণমূলের কর্মীরা। পাশে একটা হনুমান মারা গিয়েছিল। তাকে পুঁতে তার উপর মন্দির বানানো হয়েছে। এর প্রতিবাদ করা যাবে না। তাদের চাঁদা দিতেই হবে।''

এরপর অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ তা নিতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। পরে বিভিন্ন নাট্য সংস্থা সোচ্চার হলে অভিযোগ নেয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

নাট্যকর্মীদের সমালোচনা

পরিচালক ও অভিনেতা কৌশিক সেন বলেছেন, ''নিরুপম একইসঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপি সরকারকে সমালোচনা করেছে। শিল্পী হিসাবে মনে করি, তার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। তৃণমূলের গুন্ডারা তার উপর চড়াও হয়েছে। তাকে নাটক ও তার ডাকঘর বন্ধ করে দিতে বলেছে। আমি একজন নাট্য নির্দেশক ও নাট্যকর্মী হিসাবে বলতে চাই, আমরা নিরুপমের পাশে আছি।''

অভিনেতা ঋদ্ধি সেন বলেছেন, ''কিছুদিন আগেই দেখেছি, নাট্যকর্মীর গায়ে হাত তোলা হয়েছে। এই সব ঘটনা থেকে শাসক তৃণমূলের ভীত চেহারা দেখা যাচ্ছে। কখন মানুষ এরকম করে? যখন তারা মরিয়া হয়ে ওঠে।''

নাট্যপরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ''অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।'' দেবশঙ্কর হালদার বলেছেন, ''খুবই নিন্দনীয় ঘটনা।''

অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য বলেছেন, ''নিরুপম মানসিকভাবে বিচলিত থাকেন। তিনি যে নাটক করেন, তা চাঁদা তুলে করেন। আমরা সাহায্য করি। আমরা পঞ্চায়েত থেকে নাটক করার জায়গা থেকে আবর্জনা পর্যন্ত সরিয়ে দিয়েছি।''

রানাঘাটের আগে বরানগর ও বেলেঘাটাতে নাট্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছিলেন।

জিএইচ/এসজি(আনন্দবাজার, এবিপি আনন্দ)