1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাটালিয়ার ‘ভয়ংকর সুন্দর’ জগত সত্যি বিস্ময়কর

১০ ডিসেম্বর ২০২০

পোকামাকড়সহ বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য, সেইসঙ্গে সেগুলির শরীরের ভেতরের গঠন ফুটিয়ে তুলছেন পোলিশ এক শিল্পী৷ সেই ‘ভয়ংকর সুন্দর’ জগত সৃষ্টির পেছনে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভালবাসা৷

https://p.dw.com/p/3mVo6
নাটালিয়ার একটি শিল্পকর্ম
ছবি: mysouldesign

নাটালিয়া লুবিয়েনিয়েৎস্কার ভয়ংকর-সুন্দর জগতে পা রাখলে চমকের অভাব নেই৷ যেমন পালক ভেদ করে পাখির হৃৎপিণ্ড দেখা যায়৷ অথবা প্রাচীন ঘড়িসহ একটি মথ পোকা৷ পোকামাকড়ের গয়না অথবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে তৈরি স্থাপত্যও সেখানে বিরল নয়৷ মাকড়সা বা অন্য মৃত প্রাণী দেখলে অনেকের মনে ঘৃণা জন্মাতে পারে, কিন্তু ৩৬ বছর বয়সি পোলিশ শিল্পীর চোখে সে সবেরই নান্দনিক মাত্রা রয়েছে৷ নাটালিয়া বলেন, ‘‘পোকামাকড় শিশু বয়স থেকেই আমাকে মুগ্ধ করে আসছে৷ মা সবসময় বলতেন যে মাকড়সা সৌভাগ্য বয়ে আনে৷ অর্থাৎ আমার কাছে এর শৈশবের জাদুময় অনুভূতির অর্থ রয়েছে৷’’

নাটালিয়া হাতে তৈরি এই শিল্পকর্মগুলি অনলাইন প্রদ্ধতিতে সারা বিশ্বে বিক্রি করেন৷ তাঁর সবচেয়ে পছন্দের বস্তুটি হলো একটি ব্যাং, যেটির অন্ত্র পুরোপুরি খোলা রয়েছে৷ পাঁচ দিন ধরে তিনি সেটি সেলাই করেছিলেন৷ নাটালিয়া বলেন, ‘‘কিছুটা ভয়ঙ্কর এবং ভয় জাগানো এই বিষয় আমাকে প্রেরণা দেয়৷ সেইসঙ্গে জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে এই সংযোগ৷’’

নিজের বসবাসের শহর ভিয়েনার ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে সংযোগ ফুটে ওঠে৷ সেখানে সংরক্ষিত প্রাণীগুলি প্রায় জীবন্ত মনে হয়৷ পোকামাকড়ের শারীরিক গঠনও স্পষ্ট হয়ে যায়৷ প্রায় ছয় বছর আগে নাটালিয়া সেখানেই নিজের প্রকৃত আগ্রহ আবিষ্কার করেছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই সব প্রাণী দেখে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম৷ জাদুময় এই জগত সম্পর্কে কৌতূহল জন্মেছিল৷ তখন আমার মনে এমন কিছু গড়ে তোলার চেষ্টার তাগিদ জন্মেছিল৷’’

প্রাণীর শরীরের ভেতরের ভাস্কর্য

ভিয়েনার হাটেবাজারে ও পুরানো জিনিসপত্রের দোকান ঘুরে নাটালিয়া নিজের কাজের উপকরণ সংগ্রহ করেন৷ পুরানো কাপড়, আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র কেনেন তিনি৷ মূল সৃষ্টি ছাড়াও পরিবেশনার জন্যও সে সবের প্রয়োজন হয়৷ নাটালিয়া বলেন, ‘‘আমি পুরানো গ্লাস, পুরানো বা প্রাচীন কৌটো বা আধার খুঁজি, যার মধ্যে আমার ভাস্কর্য স্থান পেতে পারে৷ এভাবে সেগুলির মূল্য আরও বেড়ে যায়৷ তাকের উপর রেখে সেগুলিকে আরও সুন্দরভাবে পরিবেশন করা যায়৷’’

নিজের স্টুডিওতে নাটালিয়া শিল্পসৃষ্টির পদ্ধতি তুলে ধরলেন৷ যেমন সুতি ও তুলো দিয়ে একটি মাকড়সা তৈরি করেছেন তিনি৷ কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্ক তিনি বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে কঠিন পরিশ্রম করলে সুঁচ দিয়ে সেলাইয়ের অনুভূতি খুব ভালো টের পাই৷ কখনো সামান্য চোট লাগে, তবে তাতে কিছু এসে যায় না৷’’

এমন কাজ দেখলে মনে হতে পারে এর জন্য বেশি সময় লাগে না৷ বাস্তবে কিন্তু এমন সৃষ্টি অনেক ঘণ্টার পরিশ্রমের ফসল৷ তাঁর কোনো কর্মচারী নেই, একাই সব কাজ করেন৷ মাকড়সা সেলাইয়ের কাজ শেষ হলে অ্যাক্রিলিক দিয়ে রং করা হয়৷ শিল্পকেই পুরোপুরি পেশা করে তুলতে চান নাটালিয়া৷ সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তব হয়ে উঠছে৷ সাফল্য সম্পর্কে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘সবকিছু আরও ভালো চলছে এবং আরও বেশি মানুষ আমার শিল্প সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে বলে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে৷ সেই অনুভূতিকে সম্বল করে আমি লড়াই চালিয়ে যেতে চাই৷ কারণ জীবনের এত বড় আবেগ ছাড়া আমার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়৷’’

নাটালিয়া লুবিয়েনিয়েৎস্কা নিজের বিষাদগ্রস্ত রোম্যান্টিক সৃষ্টিকর্মের নাম রেখেছেন ‘সোল আর্টস’৷ সবকিছু ঠিকমতো চললে অদূর ভবিষ্যতেই তাঁর সৃষ্টকর্ম আন্তর্জাতিক গ্যালারিগুলিতে প্রদর্শিত হবে৷

আন্দ্রেয়াস লেইক্সনারিং/এসবি

পোকার মৃতদেহ দিয়ে পুতুল!