নতুন জাতীয় সংগীত খোঁজা!
১৭ ডিসেম্বর ২০১৩প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের দেশ সুইজারল্যান্ড৷ কোনো বিষয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে অনেক ক্ষেত্রেই সমাধান খোঁজা হয় গণভোটের মাধ্যমে৷ ১৯৯৯ সালে দেশের পরিবর্তিত সংবিধানও গণভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে কার্যকর করা হয়েছিল৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, অস্ট্রিয়া এবং লিচস্টেনস্টাইনের প্রতিবেশী এই ইউরোপীয় দেশটিতে উঠেছে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি৷ এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যমে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা নেই৷ বরং দেশের সব মানুষকে সমান চোখে দেখা এবং শান্তি আর মানবিকতার বাণীর সন্নিবেশ ঘটানোর উদ্দেশ্যেই জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের কথা বলছে সুইস নাগরিকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ৷ নতুন জাতীয় সংগীত খুঁজে নেয়ার জন্য একটা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছেন তাঁরা৷ প্রতিযোগিতাটি শুরু হবে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে৷
প্রতিযোগিতার বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি পিয়েরে কোহলার জানিয়েছেন, ৫২ বছর ধরে সুইজারল্যান্ড যে ‘সুইস সালম'-টি জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পেয়ে আসছে, তাঁরা মনে করেন, সেটা আধুনিক সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়৷ সুইজারল্যান্ডের জাতীয় সংগীতটি সরকারি স্বীকৃতি পায় ১৯৮১ সালে৷ একটি জার্মান কবিতার কথায় সুরারোপ করা হয়েছিল তার অনেক আগে, ১৮৪১ সালে৷ সুর করেছিলেন এক পাদ্রী৷
ধর্মযাজকের সুর করা কবিতায় ধর্মের কথা বেশ প্রাধান্য পেয়েছে৷ পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে আলপস পর্বতমালা৷ যুদ্ধ-বিগ্রহের কথাও এসেছে জার্মান ভাষার এই গানটিতে৷ প্রথমে জার্মান ভাষায় রচিত হলেও পরে ফরাসি, ইটালিয়ান আর রুমাঞ্চ ভাষাতেও লেখা হয় গানটি৷
আগামী মাস থেকে যে প্রতিযোগিতাটি শুরু হতে যাচ্ছে তার উদ্দেশ্য এমন কোনো গান বেছে নেয়া যা কিনা চারটি ভাষাতেই গাওয়া যাবে৷ আয়োজকরা মনে করেন, যে কোনো দেশ ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে যুগোপযোগী কোনো গানকে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দিতেই পারে৷ সুইজারল্যান্ডের মতো গণতান্ত্রিক দেশে ১৬৮ বছরের পুরোনো একটা জাতীয় সংগীতকে জোর করে ধরে রাখা অযৌক্তিক মনে করেন তাঁরা৷ পিয়েরে কোহলার বলেছেন, ‘‘বর্তমান জাতীয় সংগীতের কথা কেউ জানে না৷ কেউ যদি দাবি করেন তিনি জানেন, তাহলে আমি বলব, তিনি মিথ্যাবাদী৷'' কোহলার মনে করেন এখনকার জাতীয় সংগীত বর্তমান সময় এবং এ সময়ের আধুনিক সুইসদের মানসিকতার সঙ্গে মেলে না বলেই কেউ গানের কথা মনে রাখার চেষ্টাই করেন না৷
জাতীয় সংগীত নিয়ে সুইজারল্যান্ডের সব নাগরিকের মনোভাব অবশ্য এক নয়৷ অনেকেই আবার ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে পুরোনো জাতীয় সংগীতই রেখে দেয়ার পক্ষে৷ ইতিহাসবিদ ক্লদ বোনার্দ নতুন জাতীয় সংগীতের কথা ওঠায় বেশ বিরক্ত, প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের জাতীয় সংগীত খুব অসাধারণ হয়তো নয়, তবে এটা একটা সময়কে ধারণ করে৷ সময় বদলেছে তা ঠিক, তাই বলে নিছক বদলাতে হবে বলে বদলাতে যাওয়ার কী কোনো মানে আছে?''
প্রতিযোগিতার আয়োজকরা অবশ্য কোনো গান নির্বাচন করলেও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের জোর দাবি তুলে হাওয়া গরম করবেন না৷ ২০১৬ সালের মধ্যে প্রতিযোগিতা থেকে পাওয়া গানটির কথা সরকারকে শুধু জানানো হবে৷ তারপর জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা হবে কিনা এবং করলে কীভাবে করা হবে তা সরকারই ঠিক করবে৷
সাবেক রাষ্ট্রদূত, সংগীত শিল্পী, সাংবাদিক এবং শিক্ষাবিদসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ নতুন জাতীয় সংগীত খুঁজে নেয়ার এই উদ্যোগের সঙ্গে আছেন৷ প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হবে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক, অর্থাৎ ১১,০০০ ডলার বা ৮,০০০ ইউরো৷
এসিবি/জেডএইচ (এএফপি)