1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা কলকাতা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

দিল্লির তুলনায় কলকাতায় বায়ুদূষণ অনেকটা কম, এমনটা ভেবে কলকাতা এতদিন স্বস্তিতেই ছিল৷ কিন্তু এ সপ্তাহের ঘন ধোঁয়াশা দূষণ নিয়ে আতঙ্ক হঠাৎ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ তাহলে কি কলকাতা দূষণে টপকে যাবে রাজধানীকে? বিজ্ঞানীরা অবশ্য অভয় দিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/2pp6X
ধোঁয়াশায় ঢেকে গেছে কলকাতা
ছবি: DW/P. Samanta

গত মঙ্গলবার বেলা বাড়তেই তিলোত্তমা কলকাতার চেহারা পালটে যায়৷ আকাশ মেঘলা ছিল, কিন্তু ধোঁয়াশার মতো আবরণ ঘিরে ধরে দিনের কলকাতাকে৷ দিল্লিতে সম্প্রতি এ ধরনের ধোঁয়াশা নিয়ে বিপুল হইচই হয়েছে৷ এবার তেমনই দূষণের থাবা কলকাতায়৷ মার্কিন দূতাবাসের রিপোর্ট জানাচ্ছে, মঙ্গলবারের দূষণে নাকি কলকাতা টপকে গিয়েছে দিল্লিকেও৷ ভোর ৫টা থেকে বিকাল ৫টা অবধি কলকাতার দূষণমাত্রা ছিল দিল্লির থেকেও বেশি৷ জানা গেছে, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) বা অতি সূক্ষ্ম কণার জেরেই এই দূষণ৷

এমন ধোঁয়াশা শেষ কবে শেষ দেখা গেছে, মনে করতে পারেন না কলকাতার বাসিন্দারা৷ রাতের কলকাতাও ধোঁয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে৷ মঙ্গলবার শহরে উত্তরে হাওয়ার দাপট ছিল কম৷ পাশাপাশি ঘূর্ণাবর্তের জন্য বাতাসে ভাসমান জলীয় বাষ্পের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছিল৷ সে কারণেই সূক্ষ্ম ধূলিকণা জলীয় বাষ্পের আবরণ ঠেলে ওপরে উঠে যেতে পারেনি৷ ফলে চাঁদোয়ার আকারে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা এবং তা দূষণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত৷ এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদরা৷ কিন্তু এটা কি কোনো আসন্ন সংকটের ইঙ্গিত?

রীতা সাহা

এমনিতে প্রতি বছর অক্টোবর পেরোলেই কলকাতার আকাশে ধোঁয়াশার দেখা মেলে৷ রাজধানী দিল্লির দূষণ বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, দেশের অন্যান্য বড় শহর যদি সাবধান না হয়, তা হলে এই বিষ ছড়িয়ে পড়তে দেরি হবে না৷ তবে কি যে কোনো মুহূর্তে দিল্লির মতোই স্তব্ধ হতে পারে কলকাতার জনজীবনও?

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিজ্ঞানী ড. রীতা সাহা অবশ্য এতটা উদ্বেগ আছে বলে মনে করছেন না৷ ফোনে তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এত তাড়াতাড়ি আমরা বলে দিতে পারি না যে দূষণ বেড়ে গেছে৷ দিনরাত আমরা নিয়মিতভাবে দূষণ মাপছি৷ রাতে দূষণমাত্রা ১৮০-র বেশি, ২০০-র কাছাকাছি থাকছে৷ মার্কিন দূতাবাসের একটি স্টেশনের একদিনের উদ্বেগজনক রিপোর্ট দেখে হইচই করা যায় না৷ পুরো কলকাতায় ৩২টি এমন স্টেশন আছে৷ কোথাও এমন দেখা যাচ্ছে না৷''

তবে অভিজ্ঞ এই বিজ্ঞানী স্বীকার করলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে মাত্রাটা বেড়েছে৷ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দূষণ পর্যদের তরফে কাজ তো করা হচ্ছেই৷ আমরা নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছি৷ দিল্লি থেকে নিয়মিতভাবে কলকাতার দূষণ নজরে রাখা হচ্ছে৷''

তবে কি কলকাতা নিরাপদ? ড. সাহার মতে, ভৌগোলিক কারণে দিল্লিতে দূষণ হওয়ার যতটা সম্ভাবনা, কলকাতায় ততটা নেই৷ হরিয়ানা-পাঞ্জাবের ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর সমস্ত দূষণটাই দিল্লি দিকে আসছে৷ সে অর্থে কলকাতা সমুদ্রের অনেক কাছাকাছি, দিল্লির মতো বায়ু চলাচলের সমস্যা নেই এখানে৷ সুন্দরবন বা গঙ্গার উপস্থিতি কলকাতাকে অনেকটা নিরাপদ রেখেছে৷ কলকাতার অবস্থানটাই অনেক সুবিধাজনক৷ তাছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য দূষণরোধী ছোট ছোট গাছপালা লাগানো হয়েছে৷

কিন্তু বহু কৃত্রিম কারণে হয়ত কলকাতায় আজ ধোঁয়াশার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ তবুও দিল্লির মতো পরিস্থিতি কলকাতায় কোনোদিনই হবে না৷ যে কারণে বহরমপুরের কৃষিদূষণে কলকাতার অসুবিধা হচ্ছে না৷

ইতিমধ্যে কলকাতায় বায়ুদূষণের সম্ভাবনা আছে শুনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে গোটা শহরে৷ রাস্তাঘাটে সতর্ক মানুষেরা অনেকেই মুখে ‘মাস্ক' পরে ঘোরাফেরা করছেন৷ কিন্তু এই মাস্ক কি শরীরের ভেতরে দূষণের প্রভাব ঠেকাতে সক্ষম? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?

বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‘মাস্ক পরলে দূষণের প্রভাব কিছুটা তো আটকানো যাবেই৷ তবে একেবারেই সেটা ব্যক্তিগত প্রতিরোধ বলা যেতে পারে৷ পরিবেশ দূষণ আটকানোই প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত৷''

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট কলকাতার বাতাসে বিষবৃদ্ধির কথা বলেছে৷ নানা কারণে এই শহরে বাড়ছে বায়ুদূষণ — পরিবেশ বান্ধব জ্বালানির সে অর্থে ব্যবহার নেই৷ ডিজেল চালিত গাড়ির সংখ্যা কম নয়৷ বাড়ছে নির্মাণ, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও৷ শহরের এমন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ডা. চক্রবর্তী জানালেন, ‘‘মাস্কের প্রকারভেদ আছে৷ অ্যান্টি-পলিউশন মাস্ক ২ দশমিক ৫ মাইক্রনের কম ভাসমান কণা আটকাতে পারে৷ অন্যান্য ধূলিকণা আটকানোর জন্যও মাস্ক কাজ করে৷ মাস্ক ব্যবহার করলে প্রশ্বাসের জন্য নেওয়া বাতাসের মান অনেক ভালো হবে৷''

কৌশিক চক্রবর্তী

জাতীয় পরিবেশ আদালতে হলফনামা দিয়ে দূষণের দায় স্বীকার করতে হয়েছে রাজ্য পরিবেশ দপ্তরকে৷ কিন্তু তারপরেও দূষণ ঠেকাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ৷ এই ক্রমবর্ধমান দূষণের জেরে সৃষ্ট ধোঁয়াশা মানুষের চোখ, নাক, শ্বাসনালী সহ বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ করে৷ হাঁপানি ও হৃদরোগীরা ধোঁয়াশায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন৷ তাই ধোঁয়াশার প্রতিকার ও প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই৷ সিএমআরআই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ডা. চক্রবর্তী রাস্তাঘাটে চোখ, ত্বক ঢেকে চলাফেরার সঙ্গে মাস্ক ও ইনহেলার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন৷ তবে বারবার স্বীকার করেছেন যে ভালো থাকার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই৷ 

বিজ্ঞানী ড. সাহা অবশ্য দৃষণ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট আশাবাদী৷ তিনি জানালেন, ‘‘বায়ুদূষণ এখন সূচক দ্বারা নির্ধারিত হয়৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণে অনলাইন মনিটরিং চলছে৷ কোলাঘাটের থার্মাল পাওয়ারপ্ল্যান্টের দূষণকেও এভাবে রোধ করা হয়েছে৷ কলকাতার গাড়ির দূষণকে রোধ করার ব্যবস্থা চলছে৷ তিন-চার বছরের মধ্যে আশা করি তা করে ফেলতে পারা যাবে৷ গাড়ির ধোঁয়া, এলইডি আলোও অনেক সময় আঞ্চলিকভাবেও দূষণের সৃষ্টি করে৷ দীপাবলির সময় যা দূষণ হতো আগে, এখন তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছি৷''

বায়ুদূষণ কি আপনার শহরেও বেড়েছে? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান