ধোঁয়া বিহীন বেইজিং
প্রকাশ্যে যাতে ধূমপান করা না হয়, সেজন্য ১লা জুন থেকে চীনের রাজধানী বেইজিং-এ ধূমপান নিষিদ্ধকরণে একটি নতুন আইন করা হয়েছে৷ অন্যান্য দেশের ধূমপায়ীদের মতো চীনারাও কিন্তু এতে তেমন একটা খুশি হতে পারেনি৷
আইনের দৃষ্টিতে
চীনে ৩০০ মিলিয়ন মানুষ ধূমপায়ী৷ আগে থেকে বেশ কিছু জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ থাকলেও, অনেকেই তা মানেননি৷ আর সেজন্যই এখন সেসব স্থানে নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে, যাতে এই কঠোর নিয়ম কেউ ভঙ্গ করে ধূমপান না করেন৷ প্রবাদ আছে – ‘‘বিশ্বাস করা ভালো, নিয়ন্ত্রণ করা আরো ভালো৷’’ নিয়ন্ত্রকরা তাই এ কথাটি মনে রেখেই কাজ করবেন, ধারণা চীনা সরকারের৷
এটাই শেষ সিগারেট
যদিও রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে ধূমপান করা অনেকদিন থেকেই নিষিদ্ধ ছিল, তারপরও ছবির এই মানুষটির মতো অনেকেই এখনও ধূমপান করেন৷ চীনা সরকার এতদিন ধূমপায়ীদের ধূমপান বন্ধ করতে কর বাড়িয়ে দিলেও, তেমন লাভ হয়নি৷ কারণ চীনে সিগারেটের মূল্য খুবই কম, প্রতি প্যাকেট গড়ে মাত্র ৪৫ সেন্ট৷ চীনে অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে যা আজ অনেকের কাছেই অত্যন্ত সামান্য অর্থ৷
মেঘের উপরে
ধূমপান নিষিদ্ধকরণ আইনের উদ্দেশ্য একেবারেই স্পষ্ট, অর্থাৎ চীনারা সুস্থ থাকুক৷ ধূমপান যে মানুষকে অসুস্থ করে তা সকলেরই জানা৷ কিন্তু শিল্প কারখানার বড় বড় চিমনির ময়লা যে ধোঁয়া বাতাসে ওড়ে, ঐ ধোঁয়াও ফুসফুসের জন্য ভালো নয়৷ এই ধোঁয়া বন্ধ করা সহজ নয়, এমনকি সুউচ্চ স্কাইলাইন থেকেও অনুভূত হয় ধোঁয়াশা বেইজিং!
চীনে ধূমপানের ব্যবসা
চীনে ধূমপান একটি বিরাট ব্যবসা৷ সেখানে বছরে দুই বিলিয়ন সিগারেট উৎপাদন করা হয়৷ আর এই ব্যবসার লাভ সম্পর্কে জাতীয় তামাক সমিতি খুবই সজাগ৷ তারাই ধূমপান বিরোধী অভিযান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷ স্বার্থের দ্বন্দ্বে এটা কারো কারো মাথা ব্যাথার কারণও বটে!
ধূমপান নয়, ভালোবাসা
২০০৮ সালে জার্মানিতে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হলেও এর বিরুদ্ধে বার বার প্রতিবাদ হয়েছে৷ ফলে কার্টুনিস্ট ডিটার হানিৎশ ধূমপায়ীদের জন্য বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তবে চুমুর সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না, বিশেষ করে নিঃস্বাস যদি নিকোটিন মুক্ত হয়৷ কে আর নিকোটিনকে চুমু দিতে চায় বলুন?
ই-সিগারেট
ধূমপায়ীদের মধ্যে যাঁরা সিগারেট ছাড়তে পেরেছেন, তাঁদের জন্য সিগারেটের স্বাদ ফিরিয়ে আনে ইলেট্রিক বা ই-সিগারেট৷ জার্মানির এক রেস্তোরাঁর মালিকের কথায়, ‘‘ই-সিগারেটে তেমন কোনো ধোঁয়া হয় না৷ তাই আমার এতে কোনো আপত্তি নেই৷ আবার অন্যদিকে জার্মানির কোলেন শহরে নিউ মার্কেটের একটি রেস্তোরাঁয় ‘‘ই-সিগারেট ধূমপায়ীদের রেস্টুরেন্টে প্রবেশ নিষেধ’ – কথাটা লেখা দেখা গেছে৷
গ্রিস
গ্রিসেও ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ তবে সেখানে শতকরা ৫১ ভাগ পুরুষ আর শতকরা ৪০ ভাগ নারী এখনও ধূমপায়ী৷ গণতন্ত্রের মূল দেশেও ধূমপান একটি বড় সমস্যা, যা সেভাবে মানা হয় না এবং যা এখনো অব্যাহত রয়েছে৷
সম্রাটের জন্য মুক্ত বাতাস
চীনে স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন ‘ক্যাম্পেন’ হলেও আগামীতেও ধূমপান করা অব্যাহত থাকবে৷ ফলে অনেক চীনাকেই কষ্ট ভোগ করতে হবে৷ কারণ যাঁরা ধূমপায়ী নন, তাঁরাও ধূমপায়ীদের কারণে নিকোটিনযুক্ত নিঃশ্বাস নিচ্ছেন৷ এ থেকে চীনা সম্রাটেরও মুক্তি নেই৷ ঐতিহ্য হিসেবে যা রয়েছে তা শুধুমাত্র ধূমপান নিষিদ্ধ সাবেক প্রাসাদটি৷
সিগারেটের নামও যে মিষ্টি!
চীনে সিগারেটের নামেও নানা বাহার রয়েছে৷ কোনো ব্র্যান্ডের নাম ‘ছোট্ট পান্ডা’, কোনোটার আবার ‘ভালো বেড়াল’৷ এই নামগুলো চীনাদের হৃদয়কে বিশেষভাবে নাড়া দেয়৷ নামের কারণে হয়ত বা কেউ কেউ এক-দু’প্যাকেট সিগারেট কম কিনবে৷ তবে চীনে এত বেশি ধূমপায়ী যে ধূমপান বন্ধ করা খুবই কঠিন৷ এর জন্য প্রয়োজন আরো বেশি, নিয়মিত অভিযান৷