উইমেন চ্যাপ্টারের কঠিন জয়
৯ মে ২০১৪এ যেন ক্রিকেট ম্যাচের উত্তেজনা৷ ডয়চে ভেলের কার্যালয়ের বাংলা বিভাগের কর্মীরা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিলেন কম্পিউটারের পর্দায়৷ বুধবার (০৭.০৫.১৪) সকালে এক পর্যায়ে ইউরোময়দানকে টপকে গেল উইমেন চ্যাপ্টার৷ কিন্তু তারপরই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ইউরোময়দান৷ ফলে উপরে উঠতে থাকে উত্তেজনার পারদ৷ বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটা নাগাদ বন্ধ হয়ে যায় ভোট দেয়ার প্রক্রিয়া৷ চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেল মাত্র ৫০ ভোটে এগিয়ে উইমেন চ্যাপ্টার৷ এভাবে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম বিভাগে ‘পিপলস চয়েস' অ্যাওয়ার্ড জয় করে ‘উইমেন চ্যাপ্টার'৷
‘আর মাত্র ৩০ মিনিট'
বুধবাল সকালে কিংবা বলা চলে মঙ্গলবার থেকেই কার্যত বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারের একটি বড় অংশ উইমেন চ্যাপ্টারের জন্য ব্যাপক প্রচারণা শুরু করে৷ নারী বিষয়ক এই ওয়েবসাইটের জন্য ফেসবুকে ভোট চান নাম করা সব বাংলা ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা৷ প্রথম এভারেস্টজয়ী বাংলাদেশি মুসা ইব্রাহীমের চেষ্টা ছিল বিরামহীন৷ একের পর এক অনুরাধ তাঁর৷ ভোট পর্ব শেষ হওয়ার অল্প সময় আগে তিনি ফেসবুকে জানান, ‘‘আর মাত্র ৩০ মিনিট৷ তাহলেই খেল খতম.... ভোটটা দিন প্লিজ উওমেন চ্যাপ্টারকে...৷''
উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর নিজেও ভোট চেয়েছেন তাঁর ওয়েবসাইটের জন্য৷ শুরুর দিকে তেমন সাড়া না মিললেও শেষের দিকে অনেকেই তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন৷ এই বিষয়ে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সুপ্রীতি লিখেছেন, ‘‘এটা শুধুমাত্র একটা প্রতিযোগিতা ছিল না, যেখানে ভোটের হিসাব-নিকাশ হয়েছে৷ এটা ছিল মানুষের ভালবাসা প্রকাশেরও একটা মোক্ষম সময়৷ কতগুলো মানুষ, না দেখা- না চেনা, অথচ এক হয়ে গেল মুহূর্তেই৷ জিতিয়ে নিয়ে আসলো জীবনেও হয়তো নাম শোনে নাই, সেই উইমেন চ্যাপ্টারকে৷ আসলে জিতিয়েছে বাংলাদেশকে৷ জিতেছে বাঙালির ঐক্য৷''
বাংলাব্রেইলের বিশাল জয়
উইমেন চ্যাপ্টারের মতো কঠিন লড়াইয়ে অবশ্য পড়েনি ‘বাংলাব্রেইল' প্রকল্প৷ অন্ধ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল ও অডিও বুক তৈরির এই অনলাইন উদ্যোগ প্রতিযোগিতার শুরু থেকে ভোটে এগিয়ে ছিল৷ শেষ পর্যন্ত অনলাইন ভোটে ১৯০৯ ভোটের বিশাল ব্যবধানে ‘সেরা উদ্ভাবন' বিভাগে জয় পায় বাংলাব্রেইল৷ এখানেও দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ইউক্রেনের একটি উদ্যোগ৷
বাংলাব্রেইল শুধু অনলাইন ভোটেই নয়, বিজয়ী হয়েছে বিচারকদের বিবেচনাতেও৷ আসলে এই প্রকল্পের সামাজিক, অর্থনৈতিক গুরুত্বই আলাদা৷ ফলে বার্লিনে জুরি বৈঠকে ১৫ বিচারকের মধ্যে ১০ জনের সমর্থনে জয়ী হয় বাংলাব্রেইল৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে প্রকাশিত এসংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তির মন্তব্যের ঘরে বাংলাব্রেইল প্রকল্পের সমন্বয়ক রাগিব হাসান লিখেছেন, ‘‘আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ৷ বাংলাব্রেইল প্রজেক্টে আমাদের সাথে থাকুন৷ ফেইসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রজেক্টের কাজ একটু করেন, দিনে অল্প কয়েকটা মিনিট মাত্র৷''
#thebobs14
বাংলাদেশে অবশ্য ফেসবুকের ধাক্কায় টুইটার তেমন একটা সুবিধা করতে পারছে না৷ তবুও ‘দ্য বব্স' এর জুরি বৈঠকের সময় টুইটারে এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা দেখা গেছে৷ #thebobs14 হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে টুইট করেছেন দ্য বব্স এর বিচারক এবং সম্পাদকরা৷ বিশেষ করে বাংলা ভাষার জুরি শহিদুল আলম প্রায় সব প্রকল্প নিয়েই টুইট করেছেন৷ সেগুলো রিটুইট করেছেন অনেকে৷ দ্য বব্স সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে: www.thebobs.com/bengali ঠিকানায়৷
ও হ্যাঁ, ভাষাভিত্তিক বিভাগে ‘জিরো টু ইনফিনিটি' জয় করেছে পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড৷ এই বিভাগে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অণু তারেকের ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগ৷
উল্লেখ্য, দ্য বব্স ‘পিপলস চয়েস' অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের ঠিকানায় ডয়চে ভেলের ‘গিফট প্যাক' পৌঁছে যাবে শীঘ্রই৷ আর ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড' বিজয়ীরা আগামী ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম সম্মেলনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন৷ সম্মেলনে একটি অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে৷
ব্লগ: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: জাহিদুল হক