1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেব প্রযোজিত মিঠুনের ছবি নিয়ে রাজনীতি তুঙ্গে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৯ ডিসেম্বর ২০২২

সিনেমার নাম প্রজাপতি। দেব-এর প্রযোজনায় এই ছবির নায়ক মিঠুন চক্রবর্তী। এই সিনেমা নিয়েই চলছে রাজনীতি।

https://p.dw.com/p/4LWgI
ছবি: Payel Samanta/DW

সদ্য সমাপ্ত কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খান। কিন্তু বলিউডে বাঙালি সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীকে ডাকা হয়নি। মিঠুন এখন বিজেপি-র নেতা। রাজ্যে প্রায়ই এসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এবং বিজেপি-র হয়ে প্রচার করেন। ফলে তার সিনেমাকী করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবে ঠাঁই পাবে!

এ নিয়ে বিতর্কের রেশ না কাটতেই মুক্তি পায় মিঠুন অভিনীত বাংলা ছবি "প্রজাপতি”। এই ছবির সহ প্রযোজক ও অভিনেতা দেব। কিন্তু রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রিত নন্দন প্রেক্ষাগৃহে এই ছবি দেখানো হচ্ছে না। ফলে বিতর্কের পারদ চড়েছে।

নন্দনে ছবি প্রদর্শনের অনুমতি না মেলায় আক্ষেপ জানিয়ে টুইট করেছেন দেব। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, "রাজ্য সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ। দেবের বোঝা উচিত, তিনি কোন দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।" 

প্রজাপতি নিয়ে এখন বিতর্ক তুঙ্গে।
প্রজাপতি নিয়ে এখন বিতর্ক তুঙ্গে। ছবি: Payel Samanta/DW

মিঠুন চক্রবর্তী বিজেপি-র রাজ্য কমিটিতে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার করেন। আগামী বছরের পঞ্চায়েত ভোটেও মিঠুন গেরুয়া শিবিরের তারকা প্রচারক। দিলীপকে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের জবাব, "মিঠুনের ছবি ফ্লপ হয়েছে। সেটাকে জনপ্রিয় করতে এ সব বলছে বিজেপি।"

এই চাপানউতোরের মধ্যে দলীয় মুখপাত্রের উদ্দেশে দেব বার্তা দেন, সিনেমার বিষয়টা তিনি ভালই বোঝেন! এরপর কুণালও ইতি টেনেছেন "প্রজাপতি" চর্চায়। যদিও তার বক্তব্য, "দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পর দেব যদি বিতর্ক বন্ধের আবেদন করতেন, তা হলে এ নিয়ে জল এত দূর গড়াত না।"

"প্রজাপতি" বাদ পড়লেও নন্দনে চলছে সদ্য মুক্তি পাওয়া বাংলা ছবি "হামি ২"। একইসঙ্গে মুক্তিপ্রাপ্ত ফেলুদা কাহিনি "হত্যাপুরী" অন্যত্র চলছে নির্বিবাদে। রাজ্য নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহ নজরুলতীর্থ-এ "প্রজাপতি"-ও দেখানো হচ্ছে। কিন্তু বিতর্ক বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম ভরকেন্দ্র নন্দনকে ঘিরে। 

তৃণমূলের ঘোর সমালোচক অনীক দত্তের ছবি "অপরাজিত" নন্দনে দেখানো হয়নি। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "নন্দনের জন্য যারা ছবি বাছাই করেন, তাদের যোগ্যতা আছে কি না দেখতে হবে। মিঠুনদার "ডিস্কো ডান্সার", দেবের "পাগলু" এখানে দেখানো হবে না। কার ছবি নয়, কী ছবি বাদ পড়ল, সেটাই বিষয়।"

‘নন্দনের জন্য যারা ছবি বাছাই করেন, তাদের যোগ্যতা দেখতে হবে’

নন্দনের সিইও মিত্রা চট্টোপাধ্যায় সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, "আমাদের স্বচ্ছ নীতি রয়েছে। হল কবে ফাঁকা রয়েছে, তার ভিত্তিতে ভাল বাংলা ছবিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।" পর্যবেক্ষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় এই বাছাই কমিটির দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সব কিছুর পার্টিকরণ হয়ে গিয়েছে। যারা নন্দনের জন্য ছবি বাছছেন, তারা রাজ চক্রবর্তীর মতো তৃণমূলের সদস্য কি না, সেটা দেখতে হবে।"

তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক, অভিনেত্রী দেবশ্রী রায় বলেছেন, "কোনো শিল্পীর রাজনৈতিক পরিচয় দেখা ঠিক নয়।" যদিও চলচ্চিত্র উৎসবে মিঠুনকে না ডাকার সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই মনে করেন শাসক দলের বিধায়ক, অভিনেতা চিরঞ্জীত চক্রবর্তী। তৃণমূলপন্থি পর্যবেক্ষক ভাস্কর সিংহরায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "মিঠুন চক্রবর্তী এখন আর বিশেষ অভিনয় করেন না, রাজনীতিই করেন। সেটাই তার প্রকৃত পরিচয় হয়ে উঠেছে।"

বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী অরিজিৎ সিং-এর গানেও রাজনীতির রং লেগেছে। চলচ্চিত্র উৎসবে গেয়েছিলেন তার জনপ্রিয় গান "রং দে তু মোহে গেরুয়া"। এ কারণেই ১৮ ফেব্রুয়ারি ইকো পার্কে অরিজিতের কনসার্ট বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি তুলেছে গেরুয়া শিবির। যদিও রাজ্য জি-২০ বৈঠকের কারণ দেখাচ্ছে। 

সিনেমা থেকে গানের শব্দ, রাজনীতির হাতেই কি বন্দি শিল্প-সংস্কৃতির স্বাধীনতা? পরিচালক অনীক দত্তের মন্তব্য, "কে স্বাধীনতা চায়? পরাধীন হওয়ার জন্য শিল্পীরাই বসে আছেন। এর বিনিময়ে কলাটা-মূলোটা যদি পাওয়া যায়।"