দুর্নীতির ১০ উৎস: কী করবে রেল মন্ত্রণালয়?
৩ জুলাই ২০১৯দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের হাতে মঙ্গলবার রেলের দুর্নীতির যে ১০ উৎস তুলে দিয়েছেন তা হলো:
১. চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীর (পূর্বাঞ্চল) অধীনে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি লিজ ও হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি৷
ক. জলাশয় লিজ দেয়া খ. রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা গ. রেলের শত শত একর জমি জমি বেহাত
২. লোকোমোটিভ, কোচ, ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিএমইউ) ক্রয় ও সংগ্রহ
৩. সিগনালিং ব্যবস্থার সংস্কার ও আধুনিকায়ন
৪. ডাবল ও সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ কাজ
৫. রেলের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ
৬. রেলের কারখানা সংস্কার, যন্ত্রাংশ বিক্রয় ও সংস্থাপন
৭. ওয়ার্কশপ ও স্লিপার ফ্যাক্টরি কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি
৮. রেলের কর্মর্কর্তাদের মাধ্যমে টিকিট বিক্রিতে ব্যাপক কালোবাজারি
৯. যাত্রীবাহী ট্রেন ইজারা দেয়া
১০. ট্রেনে নিম্নমানের খাবার দিয়ে বেশি দাম নেয়া
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি)-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘এখন রেল মন্ত্রণালয়ের কাজ হলে দুদকের এই প্রতিবেদন ধরে এবং সুপারিশ অনুসরণ করে দুর্নীতি বন্ধ ও দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়৷ তবে দুদকের দায়িত্ব এখানেই শেষ হয়ে যায় না৷ তারা রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান৷ তাদের এখন উচিত হবে দুর্নীতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা৷''
আর দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘‘কমিশনের বর্তমান আইনে এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরির বিধান আছে৷ তবে এটা সাধারণভাবে রিকম্যান্ডেশন হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ এর বেশি কিছু নয়৷ কিন্তু মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে এটা ধরে দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া৷''
দুদক যে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে তার মধ্যে রেলওয়েকে স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল ব্যবস্থায় আনার কথা রয়েছে৷ এছাড়া নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত, ওয়ার্কশপ ও ফ্যাক্টরি সচল করা, ক্রয়, বিক্রয় ও টেন্ডারে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল (পিপিআর) অনুসরণ করা, রেলওয়ের সম্পদ রক্ষায় মেবাইল কোর্ট পরিচালনা, অডিট জোরদার করা, রেলওয়ের সম্পদের জিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি, কোচ আমদানি না করে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে নির্মাণ, মনিটরিং ও তদারকি ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রভৃতিও রয়েছে৷
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুদকের এই প্রতিবেদন আমাদের মন্ত্রলণালয়ের ভবিষ্যৎ পথ চলায় সহায়তা করবে৷ যে দুর্নীতি করে সে কী বলে যে, আমি দুর্নীতি করি? তারা যে খাতের কথা বলেছেন সেই খাতগুলো দেখব৷ তাদের সুপারিশগুলোও বিবেচনা করবো৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা যে ১০টি উৎসের কথা বলেছেন তার বাইরে কি দুর্নীতি হয় না? বিষয়গুলো নতুন নয়৷ আমাদের জানা৷ আমরাও কাজ করছিলাম৷ সব পর্যায়েই দুর্নীতি বন্ধ হোক সরকার এটা চায়৷ আমিও মন্ত্রী হিসেবে আমরা মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি বন্ধ করতে চাই৷''
দুদকের এই প্রতিবেদনে দুর্নীতির সঙ্গে কারা জড়িত তা সুনির্দষ্ট করা হয়নি৷ আর কত টাকার দুর্নীতি বা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা-ও নির্দিষ্ট নয়৷
প্রতিবেদন উপস্থাপনকারী দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দুর্নীতির ক্ষেত্রগুলো দেখিয়ে দিয়েছি৷ এখানে আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মন্ত্রণালয়ের নৈতিক দায়িত্ব হলো ব্যবস্থা নেয়া৷ বলতে পারেন আমরা সফট ভয়েসে জানিয়ে দিলাম৷ নয়তো এখনই আমাদের মামলায় যেতে হয়৷ আমাদের এই প্রতিবেদনে যদি কাজ না হয় তাহলে আমরা আরো সিরিয়াস হবো৷ তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ কগজপত্রসহ আমাদের কাছে আসে৷ আমরা আমাদের মতো করে আইন অনুযায়ী সেই অভিযোগগুলো দেখবো৷’’