1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দুই দলের সমাবেশ : হকাররা খুশি, দোকানিদের আক্ষেপ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৭ অক্টোবর ২০২৩

প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র শনিবারের মহাসমাবেশ ঘিরে হকাররা বেশ খুশি। তাদের বেচা-বিক্রি ভালোই বেড়েছে। কিন্তু দোকানিদের বিপরীত অবস্থা৷

https://p.dw.com/p/4Y7vJ
Bangladesch | Straßenszene im Baitul Mukarram Viertel in Dhaka
সমাবেশ হলে হকারদের পানি, ঝালমুড়ি, আইসক্রিম, বাদাম, পতাকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ও মুখরোচক জিনিসপত্র বিক্রি বেড়ে যায়। ছবিটি গত ১২ জুলাই বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিন গেটে আওয়ামী লীগের সমাবেশ স্থল থেকে তোলা।ছবি: Samir Kumar Dey/DW

দুই দলের সভাস্থলের আশপাশে দোকানপাট বন্ধ রাখতে হয়৷ ফলে তাদের বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়৷ পুলিশের তল্লাশির কারণে বাসেও খুব বেশি যাত্রী হচ্ছে না৷ বাস কাউন্টারের লোকজন বলছেন, পুলিশের তল্লাশি কমলে গত দুই তিন দিনে তারা ভালোই ব্যবসা করতে পারতেন৷ কিন্তু তল্লাশির কারণে অনেক সিট ফাঁকা আসছে৷

শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হওয়ার কথা৷ দুই দলই কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে৷ সমাবেশ ঘিরে হকারদের উপস্থিতি বেশ বেড়ে যায়৷ পানি, ঝালমুড়ি, আইসক্রিম, বাদাম, ফুসকা, ফাস্টফুড, পতাকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ও মুখরোচক জিনিসপত্র বিক্রি করেন তারা৷ লাখো মানুষের জমায়েত হওয়ায় বেচাকেনা ভালো হয়৷ তাতে বেশ খুশি হকাররা৷ পাশাপাশি সমাবেশকে কেন্দ্র করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকান ও ভ্রাম্যমাণ খাওয়ার দোকানে বিক্রি বাড়ে৷

বিএনপির সমাবেশে আগের রাত থেকেই নেতাকর্মী জড়ো হতে থাকেন৷ ফলে সারারাত হকারদের কেনাবেচা ভালোই হয়৷ নয়াপল্টনে বিএনপি’র পার্টি অফিসের অদূরে ভ্যানে করে চা বিক্রি করেন রশিদ মিয়া৷ আলাপকালে তিনি বলেন, “সমাবেশ হলেই চায়ের সঙ্গে পানি বিক্রিও বেড়ে যায়৷ অনেকে চা খেয়ে বিল না দিয়ে গেলেও লস হয় না৷ সব মিলিয়ে পুষিয়ে যায়৷ ওই দিন সাহায্য করার জন্য দুই জন অতিরিক্ত লোকও রাখতে হয়৷ তাদের বেতন দেওয়ার পরও ভালোই লাভ থাকে৷ শুধু মারামারি হলেই ঝামেলা৷ তা না হলে সমাবেশের দিনটা ভালোই যায়৷ এক মাসের বিক্রি এক দিনেই হয়৷”

সমাবেশের দিন তো দোকান বন্ধই রাখতে হয়: মহসিন হোসেন

একই এলাকায় বাদাম বিক্রি করেন কিশোরগঞ্জে ভৈরবের যুবক জামশেদ আলী৷ তার মতেও প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বাদাম বিক্রি হলেও সমাবেশের দিন তিন থেকে চার হাজার টাকার বাদাম বিক্রি হয়৷ বিএনপি অফিসের সামনে নিয়মিত পতাকা বিক্রি করেন নাসির উদ্দিন৷ সবার কাছে তিনি খুবই পরিচিত৷ আলাপকালে বললেন, “আমরা দুই ভাই পতাকা বিক্রি করি৷ আমি বিএনপির পতাকা, খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান, তারেক রহমানের ছবি, সিল এসব বিক্রি করি আর আর আমার আরেক ভাই আওয়ামী লীগের ওখানে আওয়ামী লীগের পতাকা, শেখ হাসিনা আর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, সিল এসব বিক্রি করে৷ আমাদের মধ্যে একটা মিল হলো, আমরা দু’জনেই বাংলাদেশের পতাকা বিক্রি করি৷ বেচাকেনা এমনিতে তেমন হয় না কিন্তু যখন সমাবেশ হয় তখন বেশ ভালো হয়৷”

একইভাবে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিন গেটের পাশেই সিঙ্গারা, পুরি, সমুচা বিক্রি করেন আজিজুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, “গুলিস্তানে সব সময়ই মানুষের ভীড় থাকে৷ তারপরও আওয়ামী লীগের সমাবেশ হলে বিক্রি কয়েকগুন বেড়ে যায়৷ অনেকে খেয়ে ভীড়ের মধ্যে বিল না দিয়ে চলে যায়৷ কিন্তু দিনশেষে ভালোই লাভ থাকে৷ শুধু মারামারি হলে অনেক ক্ষতি হয়৷ একবার বেচাকেনা ঠিকমতো হয়েছিল, কিন্তু পরে পুলিশের দৌড়ানি খেয়ে আমার সবকিছু পড়ে যায়৷ ফলে মিছিল মিটিংয়ের আশেপাশে থেকে বেচাকেনা বেশি হলেও একটু ভয় থাকে কখন যে কি হয়৷ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও তো ভালো৷”

তবে নয়াপল্টনের আদিবা ফ্যাশনের দোকানি রফিকুল ইসলাম বললেন, “সমাবেশের আগের দিন থেকে দোকান বন্ধ রাখতে হয়৷ এছাড়া ছোট খাট কর্মসূচী থাকলেও আমাদের দোকান বন্ধ থাকে৷ ফলে সমাবেশ ঘিরে আমাদের ব্যবসা ভালো হয় না, বরং লস হয়৷” নিউ মার্কেটের নূর ফ্যাশনের দোকানি মহসিন হোসেন বলেন, “আগে ঢাকায় সমাবেশ হলে গ্রাম থেকে যারা আসতেন তারা পরিবারের জন্য শপিং করে নিয়ে যেতেন৷ এখন আর সে অবস্থা নেই৷ একদিন আগে থেকেই রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে যায়৷ সমাবেশের দিন তো দোকান বন্ধই রাখতে হয়৷ ফলে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে আমাদের অবস্থা খারাপ যায়৷”

অনেক দিন পর সম্প্রতি প্রধান দুই রাজনৈতিক দল প্রতিনিয়তই রাজপথে কর্মসূচী পালন করছে৷ এতে ব্যানার-ফেস্টুনের ব্যবহার বেড়েছে৷ ডিজিটাল ব্যানার বিক্রি কী বেড়েছে? জানতে চাইলে পল্টনের বন্ধু মিডিয়ার সত্বাধিকারি কাজী মাহবুব আলম বলেন, “ডলারের সংকটের কারণে আমরা যে তেনা ব্যবহার করি সেটা আমদানি করতে পারছি না৷ ফলে এর দাম অনেক বেড়েছে৷ এতে রাজনৈতিক নেতারা এখন আর ডিজিটাল ব্যানার ব্যনার ব্যবহার করেন না৷ তারা কাপড়ের উপর হাতে লেখা ব্যানার বেশি ব্যবহার করেন৷”

যখন যেখানে পারছে সেখানে চেকপোস্ট বসিয়ে চেক করছে: রমিজ উদ্দিন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমাবেশ ঘিরে দুই দলের কর্মী সমর্থকরা সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসছেন৷ এতে পরিবহন ব্যবসা একটু ভালো যাচ্ছে কিনা? জানতে চাইলে বিআরটিসি বাস কাউন্টারে থাকা রমিজ উদ্দিন বললেন, “ফরিদপুর থেকে আমাদের যে বাস ঢাকায় আসছে তাতে অনেকগুলো সিট ফাঁকা থাকছে৷” এখন তো অনেক মানুষ ঢাকায় ঢুকছে, তাহলে বাসের সিট ফাঁকা কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পথে পুলিশ-র‌্যাবের চেকপোস্টের কারণে মানুষ বাসে আসছে না৷ কীভাবে আসছে আমি জানি না৷ চেকপোস্ট না থাকলে হয়ত যাত্রী একটু বেশি হতো৷” ফরিদপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় আসতে কোথায় চেক হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সব জায়গাতেই হচ্ছে৷ কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই, যখন যেখানে পারছে সেখানে চেকপোস্ট বসিয়ে চেক করছে৷”

তবে বাসে কিছু যাত্রী বাড়ার কথা স্বীকার করলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব ওসমান আলী৷ তিনি বলেন, “দুই দলের সমাবেশের কারণে গত দুই তিন দিন ধরে প্রতিটি বাসেই ৮-১০ জন করে যাত্রী বেশি হচ্ছে৷ চেকপোস্টের কারণে কিছু হচ্ছে না৷ যারা আসছে তারা তো আসছেই৷” 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য