দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যবাহী ‘টয় ট্রেন’
দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেন ইউনেসকো ঘোষিত একটি ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত৷ টয় ট্রেনের ওয়ার্কশপটাকে এখন দেখলে মনে হয় যেন একটা মিউজিয়াম, যে ঐতিহ্য দার্জিলিং তো বটেই, এক সময় যা সারা বাংলার গর্ব ছিল৷
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে
আদত নামটা এমন হলেও, পর্যটক এবং স্থানীয় মানুষজন আদর করে ডাকেন ‘টয় ট্রেন’৷ এই ট্রেন ইউনেসকো ঘোষিত একটি ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত৷ আগে এই টয় ট্রেন চলত নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত৷ এখন অবশ্য তার যাত্রা সীমাবদ্ধ দার্জিলিং আর ভারতের সর্বোচ্চ রেলস্টেশন ঘুম-এর মধ্যে, দিনে চারবারের জয় রাইডে৷
বাষ্পচালিত ইঞ্জিন
কাজেই টয় ট্রেনের বাষ্পচালিত ইঞ্জিনগুলো এখন কার্যত অবসর জীবন কাটায় দার্জিলিংস্টেশনের লাগোয়া লম্বা এক শেডের তলায়৷ যদিও মাঝেমধ্যে জয় রাইডে যাওয়ার জন্য এদেরও ডাক পড়ে৷
সচল ওয়ার্কশপ
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের নিজস্ব কারিগরি বিভাগের কর্মীরা তাই রোজই এই ওয়ার্কশপে আসেন, ব্যস্ত থাকেন মেরামতিতে, যাতে ইঞ্জিনগুলো সচল থাকে৷টয় ট্রেনের বিরাট ওয়ার্কশপটাকে এখন দেখে মনে হয় যেন এক মিউজিয়াম, যেখানে সংরক্ষিত আছে ইতিহাস আর ঐতিহ্য, যে ঐতিহ্য দার্জিলিং তো বটেই, সারা বাংলার গর্ব ছিল এক সময়৷
প্রবীণ কারিগর
এই প্রযুক্তি-কর্মীদের অনেকেই ডিএইচআর-এ বহু বছর ধরে কাজ করছেন৷ যেমন এই প্রবীণ মুসলিম কারিগর, যিনি তাঁর অধস্তন এক ছোকরা মেকানিককে বকাবকি করছিলেন যে তারা কোনো কাজ ঠিকঠাক করতে পারে না৷ তাতে সবারই নাম খারাপ হয়৷
যেন জুল ভার্নের কল্পকাহিনি
কিন্তু আসল সমস্যা আদ্যিকালের এইসব ইঞ্জিনের পুরনো যন্ত্রাংশ৷ টয় ট্রেনের চালকের ঘরটা দেখলে মনে হয়, যেন সোজা জুল ভার্নের কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি থেকে উঠে এসেছে৷
মান্ধাতা আমলের যন্ত্রাংশ
যন্ত্রপাতিগুলো দেখতে নেহাতই সহজ-সরল হলেও সবই অতি পুরনো, মান্ধাতার আমলের৷ ফলে এগুলোকে সারানো বা এর যন্ত্রাংশ জোগাড় করাটাই কারিগরদের জন্যে আজকাল মস্ত বড় সমস্যা৷ কাজেই একাধিক বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আজকে স্থানু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওয়ার্কশপে৷ যদি কোনোভাবে তাদের সারিয়ে তোলা যায়, সেই অপেক্ষায়৷
রোজকার দৌড়
তবে কিছু ইঞ্জিন এখনও রোজ নিয়ম করে রেল লাইনের উপর দিয়ে ছুটতে বের হয়৷ পাহাড়ি রাস্তায় পাতা ন্যারো গেজ রেললাইন ধরে তারা এঁকে-বেঁকে দৌড়ায়, নিজেদের ফিট রাখে৷ কে জানে, কখন কী কাজের ডাক আসে!দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গা ঘামানোর মতো ইঞ্জিনগুলোর থেকে ধোঁয়া বেরোয়, কলকব্জার ধাতব আওয়াজ হয় সারা শরীর জুড়ে৷ যেন পাহাড়ি রাস্তায় ছুটতে যাবে বলে সবাই খুব উত্তেজিত৷
নামেই যায় চেনা
টয় ট্রেনের সব ইঞ্জিনেরই একটা করে নাম আছে৷ আর সেই নামগুলো কোনো না কোনো শক্তিধর প্রাণীর নামে৷ খাড়াই রাস্তায় আস্ত একটা ট্রেন টেনে নিয়ে যাওয়ায় এদের যে বিক্রম, সম্ভবত তা-ই বোঝাতে৷কখনও ইঞ্জিনের নাম দাঁতাল হাতির নামে, ‘টাস্কার’৷ কখনও হিমালয়ের পরাক্রমশালী ঈগল পাখির নামে তার নাম৷ এখনও খুব যত্ন নিয়ে পিতলের নাম-ফলকগুলো ঘষে-মেজে চকচকে রাখা হয়৷