1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দলের সদস্যদের ব্যায়াম করতে বলল সিপিএম

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ মার্চ ২০২০

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিএম তার সদস্যদের নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছে৷ সম্প্রতি ইস্যু করা গোপন এক চিঠিতে পার্টি স্কুলে পড়ানো বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে শরীরচর্চাকে যুক্ত করতে বলা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3Yq2G
ছবি: DW/P. Samanta

হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ' মনে করে, হিন্দু সমাজকে শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে৷ তাই তারা শরীরচর্চার উপর বিশেষ জোর দিয়ে থাকে৷ এবার বামেরাও সে পথ অনুসরণ করা শুরু করলো৷

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সিপিএম৷ ৩৪ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকার পর ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করেন৷ তারপর থেকে গত এক দশকে প্রতিটি নির্বাচনে বামেদের শক্তিক্ষয় হয়েছে৷ গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দলের স্থানও হারিয়েছে বামপন্থিরা৷ এই রাজ্যে এখন মূল লড়াই তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে৷ গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে বিশেষ সুবিধা হয়নি বামেদের৷ বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার পদ পেয়েছে কংগ্রেসই৷ সব মিলিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে বামেদের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়৷ তাই কি শুধু রাজনৈতিক কৌশলে আর ভরসা রাখতে পারছেন না মার্কসবাদীরা?

লাইফস্টাইলে বিভিন্ন ধরনের অসুখের বিস্তার ঘটেছে, অপরিণত বয়সে মৃত্যু হচ্ছে: তন্ময় ভট্টাচার্য

এই পরিপ্রেক্ষিতে দলের গোপন চিঠিতে শরীরচর্চার কথা উঠে আসায় তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে৷ কী লেখা হয়েছে পার্টি চিঠিতে? এই চিঠিতে পার্টির সদস্যদের বলা হয়েছে, সুস্থ এবং সতেজ থাকতে শারীরিক কসরত করতে হবে৷ পার্টি স্কুলের বিষয়ে শারীরিক প্রশিক্ষণকে যুক্ত করতে হবে৷ ক্যাডারভিত্তিক সিপিএমে নিয়মিত পার্টি ক্লাস হয়৷ সেখানে দলের মতাদর্শ ও কর্মসূচি সম্পর্কে সদস্যদের পাঠ দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ, বৌদ্ধিক চর্চাতেই সীমাবদ্ধ থাকে এই ক্লাস৷ এবার তার সঙ্গে শরীরচর্চাকেও যুক্ত করা হচ্ছে৷

বাংলায় রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে শরীরচর্চার যোগ নতুন কিছু নয়৷ ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত বাংলায় গড়ে উঠেছিল অনুশীলন সমিতি৷ ঢাকা, ময়মনসিংহ, কলকাতা-সহ সমিতির বিভিন্ন শাখার সদস্যরা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন৷ গড়ে উঠেছিল অরবিন্দ ঘোষের যুগান্তর দলও৷ তৈরি হয়েছিল কুস্তি ও ব্যায়ামের আখড়া৷ আজও সিমলা ব্যায়াম সমিতি কলকাতার বুকে সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য শারীরিকভাবে শক্তপোক্ত থাকা দরকার, এমনটাই ছিল ভাবনা এ সব সমিতির নেপথ্যে৷ আখড়ার আড়ালে বিপ্লবীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হত, বোমা তৈরির কৌশল শেখানো হত৷

শরীর গড়ার ভাবনা থেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ শরীরচর্চার উপর বিশেষ জোর দেয়৷ তারা মনে করে, হিন্দু সমাজকে শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে৷ সেই পথেই কেন চলেছে বামেরা? সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শরীরচর্চা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি৷ কেউ মর্নিংওয়াক করেন, কেউ জিমে যান৷ এখনকার লাইফস্টাইলে বিভিন্ন ধরনের অসুখের বিস্তার ঘটেছে৷ অপরিণত বয়সে মৃত্যু হচ্ছে৷ ওষুধের থেকে শরীরের যত্ন ক্রমশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ দল যদি অভিভাবকের মতো সেটা সদস্যদের মনে করিয়ে দেয়, তাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই৷''

আরএসএস শরীরের কসরতে বেশি গুরুত্ব দেয়, বামেরাও সেদিকেই হাঁটছে: বিমলশঙ্কর নন্দ

সিপিএমের অনেক নেতাই শরীরচর্চা করতেন৷ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য, শ্রমিক নেতা নীরেন ঘোষ কিংবা মেদিনীপুরের প্রবাদপ্রতিম নেতা সুকুমার সেনগুপ্ত শরীরের যত্নে নিষ্ঠাবান ছিলেন৷ কিন্তু দলীয় স্তর থেকে কখনো এভাবে স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি৷ এই সুযোগে বাম বিরোধীরা স্বাস্থ্য উদ্ধার নিয়ে তির্যক মন্তব্য করছেন৷ অনেকেই বলছেন, বুদ্ধির বদলে বামপন্থিদের এখন ভরসা গায়ের জোর৷ বাংলার গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের নজির টেনে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, ‘‘বামেদের কাছে বুদ্ধির চর্চাই গুরুত্ব পায়৷ তাদের মতাদর্শ পৃথিবীজুড়েই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে৷ বিশেষ করে বিশ্বায়নের পর৷ তাই আরএসএস যেমন মতাদর্শের সঙ্গে শরীরের কসরতে বেশি গুরুত্ব দেয়, বামেরাও সেদিকেই হাঁটছে৷ এটা সংঘেরই সাফল্য৷''

পার্টি চিঠিতে স্বাস্থ্যরক্ষার কথা বলা হলেও সংঘের মতো দলীয় স্তরে এমন কর্মসূচি কবে নেওয়া হবে, তা স্পষ্ট নয়৷ সিপিএম নেতারাও এ ব্যাপারে কিছু বলছেন না৷ মতাদর্শ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা হয় যে পার্টি ক্লাসে, সেখানে শারীরিক কসরতও জায়গা নেবে কি না, তা বোঝা যাবে আগামী দিনে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য