1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তুরস্কে মুদ্রার দাম কমলো, জিনিসের দাম মাত্রাছাড়া

১৭ নভেম্বর ২০২১

ডলারের তুলনায় তুরস্কের মুদ্রা লিরার দাম আরো পড়ে গেল। ফলে জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে বাড়ছে।

https://p.dw.com/p/435Tm
ডলারের তুলনায় লিরার মূল্য আরো কম হলো। ছবি: Getty Images/C. McGrath

মঙ্গলবার লিরার দাম আরো চার শতাংশ কমেছে। এখন এক মার্কিন ডলার মানে ১০ দশমিক ৩৬ লিরা। সাম্প্রতিক সময়ে লিরার দাম কখনো এতটা কমেনি। ফলে তুরস্ক আর্থিক সংকটের মুখে। কারেন্সি মার্কেট বা মুদ্রা বাজারে লিরার অবস্থা এখন সব চেয়ে খারাপ।

গত বছর অক্টোবর মাসের তুলনায় তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ২০ শতাংশ। যদিও নিরপেক্ষ মুদ্রাস্ফীতি রিসার্চ গ্রুপের মতে, আগের তুলনায় মুদ্রস্ফীতি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

কাদ্রিয়ে ডোগরুর বয়স ৫৯ বছর। ইস্তানবুলের বাজারে তার দুইটি দোকান আছে। তিনি সংবাদসংস্থা এপি-কে জানিয়েছেন, '' আগে কখনো এই ধরনের অবস্থার মুখে পড়িনি। রাতে শুতে গেলাম। সকালে উঠে দেখলাম জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। আমি ৪০ লিরা দিয়ে পাঁচ লিটার তেল কিনে বাড়ি এলাম। আবার বাজারে গেলাম। দেখলাম সেটার দাম হয়ে গেছে ৮০ লিরা।''

কেন এই অবস্থা

তুরস্কের অর্থনীতির এই অবস্থার একটি কারণ হলো করোনা। গত প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা প্রতিটি দেশের অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে। তার উপর রয়েছে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের অর্থনীতি নিয়ে চিন্তাভাবনা। 

এর্দোয়ান মনে করেন, ঋণের ক্ষেত্রে সুদের পরিমাণ কম রাখলেই অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠবে। তার ধারণা, মুদ্রার দাম কম হওয়া মানে আর্থিক বৃদ্ধি সুনিশ্চিত হওয়া। অর্থনীতিবিদরা এর্দোয়ানের এই মত ও পথ মানেন না। তাদের মতে, এর্দোয়ানের নীতির ফলেই তুরস্কের এই অবস্থা।

মুদ্রাস্ফীতির ফলে জিনিসের দাম বাড়ছে। মুদ্রার মূল্য কমে যাওয়ায় আমদানি করতে অনেক বেশি অর্থ লাগছে। জ্বালানি তেল থেকে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তাই হু হু করে বাড়ছে। তুরস্কের শিল্পও কাঁচামালের জন্য বিদেশের উপরই নির্ভর করে। তাই তাদেরও বেশি অর্থ খরচ করে তা আমদানি করতে হচ্ছে। 

২০১৯ থেকে এর্দোয়ন রিজার্ভ ব্যাংকের চারজন গভর্নর নিয়োগ করেছেন। যারাই সুদের হার কম করার বিরোধিতা করেছেন, তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।

তুরস্কের মানুষ এখন বেঁচে থাকার জন্য সোনা বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাদের জমানো অর্থ ভাঙিয়ে খেতে হচ্ছে। ডলার বা ইউরো হাতে থাকলে তাও বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা।

এর্দোয়ানের বক্তব্য

এর্দোয়ান অবশ্য দাবি করে যাচ্ছেন, অর্থনীতি এখনো রীতিমতো শক্তিশালী। করোনা-সংকট পুরোপুরি কেটে গেলেই আবার তুরস্কের অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠবে।

তার দাবি, ''ইউরোপের হাত খালি। অ্যামেরিকারও একই অবস্থা। কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় আমাদের যথেষ্ট সম্পদ আছে।''

তিনি কৃষি সমবায়গুলিকে এক হাজার নতুন দোকান খুলতে বলেছেন, যেখান থেকে কম দামে খাদ্যশষ্য বিক্রি করা হবে। সম্প্রতি কিছু ছাত্র পার্কে রাতে শুয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তাদের দাবি ছিল, বাড়ি ভাড়া অনেকটাই বেড়েছে। তারা তাই এভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এর্দোয়ান ওই ছাত্রদের কাজকে 'সন্ত্রাসবাদ' বলে আখ্যা দিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদ ওজলেম ডেরিসি সেনগাল এপি-কে জানিয়েছেন, ''সেন্ট্রাল ব্যাংকের নীতিতে হস্তক্ষেপ করার ফলে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।'' আরেক অর্থনীতিবিদ টিমোথি অ্যাশ বলেছেন, ''এর্দোয়ান মনে করছেন আর্থিক বৃদ্ধি হলে ও কর্মসংস্থান তৈরি হলে তিনি ভোটে জিতবেন। মুদ্রাস্ফীতি কমানোর থেকে তিনি তাই এই দুইটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন।''

জিএইচ/এসজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)