1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তরুণদের তালেবানে যোগ দেয়া ঠেকাতে যা করছে পুলিশ

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৫ আগস্ট ২০২১

আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে কয়েকদল যুবক সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদে যোগ দিতে আফগানিস্তানে গিয়েছিল৷ চার দশক পর আরো কিছু তরুণ এমন পথে হাঁটার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3z1O6
রোববার আফগানিস্তান সীমান্তে নজরদারিতে পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক সদস্য ছবি: AFP/Getty Images

গত ১০ মে চার তরুণকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট৷ তাদের মধ্যে  একজন একটি বেসরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের, দুইজন দুইটি ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও অন্যজন একটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী৷ সবার বয়স ২০ থেকে ২৯ বছর৷ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে গ্রেফতারের পর জানা যায় তারা আফগানিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন৷ তাদের কাছ থেকে পুলিশ তাদের দুই সঙ্গীর আফগানিস্তানে পৌঁছানোর খবর জানতে পেরেছে৷

পুলিশ জানায়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কেউ কেউ আফগানিস্তানে পৌঁছার চেষ্টা করছে৷ দেশের ভিতরে নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন চ্যাট গ্রুপের মাধ্যমেও তারা নিজেদের সংগঠিত করছে৷ তাদের ঠেকাতে সামজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন চ্যানেলসহ সাইবার ওয়ার্ল্ডে নজরদারি করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ তাছাড়া দেশের বাইরে যারা চলে গেছে তাদের দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখার কথা জানিয়েছে পুলিশ৷

কারা যাচ্ছেন

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গ্রেফতারকৃত চারজনের কাছ থেকে আমরা অনেক তথ্যই পেয়েছি৷ সেগুলো এখন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত কতজন সেখানে গেছে সেটা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি৷ তবে গ্রেফতারকৃত এই চারজনের কাছ থেকে ‘সাইন্স প্রোজেক্ট' নামে একটি চ্যাট গ্রুপের তথ্য পেয়েছি৷ ওই গ্রুপে ১০ যুবক সম্পৃক্ত ছিল৷ তাদের চারজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি৷ এই ১০ জন গত দুই বছর ধরে একে অপরকে চেনে৷’’

কাউন্টার টেররিজমের অপর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ১০ জনের মধ্যে দুইজন ইতিমধ্যে আফগানিস্তান পৌঁছেছেন বলে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে৷ তাছাড়া নোয়াখালির আরো একজন আফগানিস্তানে যাওয়ার পথে রয়েছেন৷

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা যে দুইজন আফগানিস্তান গিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তাদের একজনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে গত ২৫ মার্চ তার ভাই সিলেটের কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন৷ 

রোববার যোগাযোগ করা হলে তার ভাই ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার ভাই সিলেটের একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ত৷ করোনা শুরুর পর সে বাড়ি চলে গিয়েছিল৷ তিন মাস কুমিল্লায় নিজেদের বাড়িতে থাকার পর এ বছরের শুরুর দিকে সে আমাকে জানায় কলেজে আসবে৷ আমি তার কাছে জানতে চাই, কোথায় থাকবে তুমি৷ সে বলে বন্ধুর কাছে থাকব৷ পরে আমি তাকে আসতে বলি৷ এখানে আসার দুই দিন পরই তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না৷ মোবাইল ফোনও বন্ধ৷ পরে আমি জিডি করি৷ তদন্ত কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, আমার ভাই নাকি আফগানিস্তান গেছে৷ আমি বাবা-মাকে এখনও কিছু বলিনি৷ বয়স্ক মানুষ, তারা শুনলে কষ্ট পাবেন৷ আমাদের চার বোন আর তিন ভাই৷ বড় ভাই সৌদি আরবে থাকেন৷ ...পুলিশ বললেও আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না যে সে আফগানিস্তান গেছে৷ পরে জানলাম, তার সঙ্গে তার এক বন্ধুও নিখোঁজ রয়েছে৷’’

ভারতে গ্রেফতার

পুলিশের ভাষ্য সিলেটের ঐ শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিব্বির আহমেদ নামে আরো একজন নিখোঁজ হয়েছেন৷ শিব্বির স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়তেন৷ এছাড়া চ্যাট গ্রুপের ১০ জনের মধ্যে চারজন বাংলাদেশে গ্রেফতার হয়েছেন৷ 

ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত জুলাইতে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) বেহালা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে৷ তারা নব্য জেএমবির সদস্য বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করা হয়৷ ঢাকার কাউন্টার টেরটিরজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, এই তিনজনও ওই ১০ জনের চ্যাট গ্রুপের সদস্য, যারা আফগানিস্তান যাচ্ছিলেন বলেই তাদের ধারণা৷

ভারতে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কীভাবে তথ্য জেনেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তো সবকিছু প্রকাশ করতে পারি না৷ গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপারে তথ্য আমরা ভারত সরকারের কাছ থেকে পাইনি৷ এটা গণমাধ্যম থেকেই পেয়েছি৷ তবে এরা যে বাংলাদেশ থেকে (আফগানিস্তান) যাওয়ার চেষ্টা করছিল, সেটা আমরা আগে থেকেই জানতাম৷’’

তাদেরকে আফগাননিস্তানে গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রলোভন দেয়া হয়: শফিকুল ইসলাম

যেভাবে যাচ্ছেন

জানা যাচ্ছে ভারত হয়ে পাকিস্তান, এরপর আফগানিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করেন দেশটিতে পাড়ি জমাতে ইচ্ছুকরা৷ কোন সীমান্ত দিয়ে তারা পাকিস্তান যাচ্ছেন জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘এখানে বাংলাদেশের সব সীমান্তই ব্যবহার হচ্ছে৷ ধরেন কারও যোগাযোগ হল ত্রিপুরার কারও সঙ্গে৷ তখন সে ত্রিপুরা যাচ্ছে৷ আবার কারও যোগাযোগ হল পশ্চিমবঙ্গে কারও সঙ্গে, তখন সে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছে৷ সেখান থেকে ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তান যাচ্ছে৷’’

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের রুখতে কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘আমরা সামাজিকমাধ্যম থেকে শুরু করে সাইবার ওয়ার্ল্ডে নজরদারি চালাই৷ যদি আমরা টের পাই  যে, কেউ ঐদিকে বা জঙ্গি হওয়ার দিকে যাচ্ছে তাহলে আমরা তার পরিবারকে সতর্ক করি৷ সে কী কী করছে তার পরিবারকে তা জানানো হয়৷ ঐ লাইন থেকে তাদের ফেরত আনার চেষ্টা করা হয়৷ যারা মোটামুটি অ্যাডভান্স পর্যায়ে চলে গেছে তাদের গ্রেফতার করি৷ এরা এতই মোটিভেটেড থাকে যে, আপনি কোনভাবে তাকে এই রাস্তা থেকে ফেরাতে পারবেন না গ্রেপ্তার করা ছাড়া৷ না হলে আজ হোক কাল হোক সে চলেই যাবে৷ এছাড়া আমাদের দৃষ্টি বাইরেও এমন থাকে যারা চলে যায়৷’’

এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে যাওয়া কতজনের বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন তা বলতে চাননি এই পুলিশ কর্মকর্তা৷ সাইবার ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে তাদেরকে আফগানিস্তানে যুদ্ধে অংশ নেয়া এবং পরবর্তীতে সেখানে সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার প্রলোভন দেয়া হয় বলেও জানিয়েছেন শফিকুল ইসলাম৷  

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের একজন শিক্ষার্থী গ্রেফতারের পর জানিয়েছেন, সিলেটে ‘আবদুল্লাহ’ নামে এক ব্যক্তি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং তাদের পাসপোর্ট প্রস্তুত রাখতে বলেছিল৷ তার বন্ধু আফগানিস্তানে পৌঁছে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল৷

বাংলাদেশের জন্য কতটা উদ্বেগের

আশির দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে তালেবানদের লড়াইয়ে যোগ দিতেও বাংলাদেশের কিছু মানুষ আফগানিস্তান গিয়েছেন বলে জানা যায়৷ সেসময় তালেবানদের সমর্থনে বাংলাদেশে মিছিল সমাবেশও করে কিছু গোষ্ঠী৷ শনিবার ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, তালেবানদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের কিছু মানুষ ঘর ছাড়ছেন৷

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মনিরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তালেবানরা বাংলাদেশি জঙ্গিদের লাইটহাউজ (বাতিঘর)৷ তারা জেগে উঠলে বাংলাদেশি জঙ্গিরাও জেগে উঠে৷ আমরা জেনেছি, বাংলাদেশের তরুণদের হিজরতে যোগ দিতে তারা আহ্বান জানিয়েছে৷ এই আহ্বান না জানালেও তারা সেখানে যেত৷ কী সংখ্যক সেখানে এখন পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ সড়কপথে তাদের যেতে হলে ভারতের পাঞ্জাব, কাশ্মীর বা রাজস্থান দিয়েই যেতে হয়৷’’

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিদের নিয়ে প্রতিবেদন করছেন বর্তমানে একুশে টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক দীপু সারওয়ার৷ তিনি মনে করেন আগ্রহ থাকলেও এখন বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানে পৌঁছানো আগের মতো সহজ নয়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি আফগানিস্তানে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেই সেখানে এখন যাওয়া সম্ভব না৷ তারপরও বলবো কট্টরপন্থীরা মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সীমানা ব্যবহার করেও আফগানিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু এটি খুব সহজ কাজ বলেও মনে করি না৷ বেশির ভাগ দেশই কট্টরপন্থীদের উপর নজরদারি বাড়িয়েছে৷ সম্প্রতি তালেবানদের কর্মকাণ্ড কট্টরপন্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করলেও তা ভয়াবহ রুপ নেবে বলে মনে করি না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান