1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকা ও দিল্লির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেও ফাটল বাড়ছে

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৮ মে ২০২১

ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কেও রয়েছে নানা ঘাত-প্রতিধাত৷ ফাঁকফোকড়ও৷ তাকে অবহেলা করা যায় না৷

https://p.dw.com/p/3u8Fr
চলতি বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে অতিথি হয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীছবি: ASSOCIATED PRESS/picture alliance

ভারতের এখন যত প্রতিবেশী দেশ আছে, তার মধ্যে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গেই সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং বন্ধুত্বের৷ তবে গত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের মধ্যেও উত্থান-পতন হয়েছে৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সাহায্য এবং তারপর স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের উচ্ছ্বাসের মধ্যে দিয়ে যে সম্পর্কের সূচনা, বেগম জিয়ার সময়ে তা তলানিতে এসে ঠেকেছিল৷ আবার গত ১২ বছরে শেখ হাসিনার সময়ে তা আবার অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ জায়গায় চলে এসেছে৷ তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের মত হল, এখনো এই সম্পর্কের মধ্যে অনুযোগ আছে, অভিযোগ আছে, উদ্য়োগহীনতা আছে এবং প্রতিশ্রুতি পালনের গুরুতর সমস্যা আছে৷ যার জন্য ভারতকে উদ্যোগী হতে হবে৷ আর ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে, সে সম্পর্কে সচেতন হতে হবে৷

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে চীনের ছায়াপাতের একটা সমস্যা আছে৷ সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত চীনের

রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, বাংলাদেশ যেন কোয়াডে যোগ না দেয়৷ দিলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে৷ কোয়াড মানে ভারত, অ্যামেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার জোট, যা মূলত চীনকে ঠেকাতে হয়েছে৷ নয়াদিল্লির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিবেকানন্দ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার হেড শ্রীরাধা দত্তের বক্তব্য, রাষ্ট্রদূতের ওই কথার পরের দিনই গ্লোবাল টাইমসে একই লাইনে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে৷ অর্থাৎ, চীন ভেবেচিন্তেই এই লাইন নিয়েছে৷ যা ভারতকে ভাবাতে বাধ্য করেছে৷

ডয়চে ভেলেকে শ্রীরাধা জানিয়েছেন, ''চীন বেল্ট রোড ইনিসিয়েটিভে বাংলাদেশকে তেমন বিরাট মাপের কোনো আর্থিক সাহায্য করেনি৷ বরং ভারতের সঙ্গে ট্রান্স বর্ডার ট্রান্সপোর্ট করিডোরের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে৷'' শ্রীরাধা বলেছেন, ‘‘সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন বাংলাদেশে গেছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেছিলেন, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে ভারত যে হাইওয়ে বানাতে চাইছে, তাতে বাংলাদেশও যোগ দিতে পারলে খুশি হবে৷ তাই  স্বাভাবিকভাবে চীনের একটা আশঙ্কা থাকা অস্বাভাবিক নয়৷ এর উপর বাংলাদেশ কোয়াডে ঢুকে গেলে চীনের মুশকিল৷ তার উপর চীন চায়, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে বেইজিং ও দিল্লির বিরোধের মধ্যে ঢাকা যেন না জড়ায়৷ তাই চীন চাইবে, ভারত নয়, ঢাকা যেন তাদের দিকে থাকে৷’’

পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ প্রণয় শর্মা মনে করেন, ‘‘কোনো দেশ তো শুধু একটা দেশের সঙ্গেই ভাল সম্পর্ক রাখে না৷ তারা নিজেদের স্বার্থে আরো অনেক দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্ব রাখে৷ ফলে ভারতের সঙ্গে একটা বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে বলে বাংলাদেশ যে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবে না, তা হয় না৷ প্রতিটি দেশ অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে নিজেদের স্বার্থের কারণে৷ পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত যে সাহায্য করেছিল, তা দিয়ে চিরদিন চলতে পারে না৷ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা যে বাংলাদেশের পক্ষে লাভজনক, সেটা ঢাকাকে বুঝতে হবে৷ ভারতকেও বোঝাতে হবে৷ তাদের অগ্রাধিকারকেও ভারতকে বুঝতে হবে৷’’

তবে প্রণয়ের মতে, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে কেউ অগ্রাহ্য করার জায়গায় নেই৷ আর ভারতের অর্থনীতি আরো ভালো হলে তার প্রতিক্রিয়া প্রতিবেশী দেশের উপরেও পড়বে৷ সেক্ষেত্রে ভারতের বিনিয়োগ করার ক্ষমতাও বাড়বে৷ তাছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা তো কূটনৈতিক বা আর্থিক নয়, সামাজিক এবং দুই দেশের মানুষের সম্পর্কও৷ ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক, খাবারের নৈকট্যের সম্পর্ক৷ সেই সম্পর্কের একটা আলাদা জোর আছে এবং থাকবেও৷’’

তাই বলে ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশের অভিয়োগ নেই এমন নয়৷ তার উপর ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার দেব মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ নীতিও দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে৷ ডয়চে ভেলেকে  দেব মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বেপরোয়া বিভাজনের রাজনীতির প্রভাব বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পড়ছে৷ ভারতে যদি মুসলিমদের টার্গেট করে উইপোকা বলা হয়., তার একটা প্রভাব পড়বেই৷ বছর দেড়েক আগে সিএএ, এনআরসি নিয়ে শেখ হাসিনার এক মন্ত্রী বলেছিলেন, তাদেরও জনমত খেয়াল রাখতে হয়৷’’ তার বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ভোট প্রচারেও বল হলো, না খেতে পেয়ে ওপার থেকে মানুষ চলে আসে৷ অথচ ঘটনা হলো,  বছর দুয়েকের যে কোনো পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ভারতের থেকে এগিয়ে৷ অথচ, ভারতের নেতা-মন্ত্রীরা এই ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন৷’’

দেব মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘ওদের তিস্তার জলের দরকার ছিল, আমরা সেটা দিতে পারিনি৷ কিন্তু যে অভিযোগ ৪৫ বছর ধরে শুনছি, ভারত বাংলাদেশের প্রয়োজন মেটায় না, এর মধ্যে কোনো সত্যতা নেই৷’’

প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়ের পর বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর বার্তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ৷ তিনি মমতাকে চিঠিতে লিখেছিলেন, আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ৷কারণ, আপনি বাঙালির দীর্ঘ লালিত মূল্যবোধ, ধর্মীয় সম্প্রীতি, ও ভাতৃত্ববোধ ধারণ করেছেন এবং এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু সারা জীবন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন৷’’ সৌম্য মনে করেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভালো আছে ও থাকবেও৷ কিন্তু সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কে একটা টানাপোড়েনের ইঙ্গিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তায় আছে৷ বিজেপির বিভাজনের নীতি বাংলাদেশ পছন্দ করছে না৷’’

তাহলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী হবে?  শ্রীরাধার মতে, ‘‘ভারতকে প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে৷ যে প্রকল্প করবে বলেছে, তা দ্রুত শেষ করতে হবে্৷ ভ্যাকসিন দেব বলে তারপর পিছিয়ে আসা চলবে না৷ আর এটা তো কূটনীতি নয়, এটা বাণিজ্য৷ আর ভারতকে নিজের ব্যবহারও ঠিক করতে হবে৷ ভারতের দাদাগিরির মনোভাব নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলির একটা অভিযোগ আছে৷ সেটা খেয়াল রাখতে হবে৷ তাদের দিকে সাহায্যের হাতও বাড়াতে হবে৷’’

ভবিষ্যতে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক কোনদিকে যাবে? দেব মুখোপাধ্যায়ের মত হলো, ‘‘দুই দেশ যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে তাহলে দুই দেশেরই লাভ৷ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সেভাবে তো কিছু বলা যায় না৷ তবে কিছু সংকেত আছে, যা চিন্তার৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য