1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টেলিভিশন নয়, ভারতের ভবিষ্যৎ ওটিটি

১৬ জুন ২০২৩

২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের টেলিভিশন ইন্টাস্ট্রিকে গ্রাস করতে পারে ওটিটি, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা।

https://p.dw.com/p/4SgkH
ছবি: Divyakant Solanki/picture alliance/dpa

এক দশক আগেও বিনোদন জগৎ মানে ছিল কেবলই টেলিভিশন এবং বড়পর্দা। করোনা পরবর্তী ভারতে সেই পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে। বিনোদন জগতে এখন সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ২০২৭ থেকে '৩০ সালের মধ্যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি বিনোদন জগতের ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ বাজার ধরে নেবে। মূলস্রোতের বিজ্ঞাপন নির্ভর টেলিভিশন ইন্টাস্ট্রি ৪০ শতাংশের কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছাবে। এক দশক আগেও যা কল্পনা করা যেতো না।

কলকাতার এক উঠতি পরিচালক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, করোনাকালের আগে ছবি তৈরির পরিকল্পনা করলে মূলস্রোতের প্রযোজনা সংস্থাগুলির উপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু এখন তা না করলেও চলে। ছোট ছোট ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। সেখানে একবার কোনো সিরিজ হিট হয়ে গেলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না। বস্তুত, কেবল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নয়, নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেও সিরিজ প্রদর্শনের ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে ভারতের বিনোদন বাজারে।

পশ্চিমবঙ্গে ভিন্নধারার ছবির জগতে রীতিমতো নাম করেছেন প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য। গত এক বছরে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছেছেন ‘বিরহী' নামের একটি ওয়েব সিরিজ পরিচালনা করে। পরীক্ষামূলক এই সিরিজ প্রদীপ্ত কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও দেননি। ইউটিউবে নিজের চ্যানেল তৈরি করে তা বাজারে ছেড়েছেন। সিরিজের প্রথম সিজনে কয়েক মিলিয়ন ভিউ পেয়েছেন প্রদীপ্ত। ব্যবসা হয়েছে, পরিচিতিও হয়েছে। দ্বিতীয় সিজনেও মিলিয়ন ভিউ পার করে গেছে এই সিরিজ।

পশ্চিমবঙ্গে মূলধারার প্রযোজনা সংস্থাগুলিও নিজেদের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে শুরু করেছে। শুধু কলকাতার নয়, বাংলাদেশের ওয়েব সিরিজও সেখানে প্রকাশিত হচ্ছে। প্রদীপ্তের মতো বেশ কিছু পরিচালক এবং অভিনেতা নিজেদের ছোটো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে বাজারে নেমেছেন। বিনোদন জগতের এক বিশিষ্ট সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''গ্রামের দিকেও এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। আগে যারা টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখতেন, তারাও এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সিরিয়াল এবং সিরিজ দেখছেন।''

সিরিয়াল পরিচালকদের অনেকেই এখন সিরিয়ালের গল্পের আকার ছোট করতে শুরু করেছেন। ওয়েব সিরিজের কাঠামোয় তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট সিরিয়ালের গল্প।

সার্বিক ছবি

স্ট্যাটিস্টা রিপোর্ট বলছে, ২০২১-২২ এ ভারতে শুধুমাত্র ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে আড়াই বিলিয়ন টাকা অর্থাৎ, প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩ থেকে ২৭ এর মধ্যে এই বাজার ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে বৃদ্ধির ভাগ হবে ২০ থেকে ২৩ শতাংশ। যার অর্থ, সিনেমা এবং টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিকে সরাসরি টক্কর দেবে ওটিটি-র বাজার।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন

১৪৪ কোটি জনসংখ্যার ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান বলছে, ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী আছে ভারতে। সংখ্যাটি দ্রুত বাড়ছে। গত কয়েক বছরে ইন্টারনেটে চালিত টেলিভিশন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি ২০ লাখে গিয়ে পৌঁছেছে। ৮০ কোটি মানুষ ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করছেন।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি ব্রডব্যান্ড সংস্থাগুলির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে। ব্রডব্যান্ডের সঙ্গে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের চ্যানেল না দেখে মানুষ ওয়েব প্ল্যাটফর্মে বিনোদন খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। খেয়াল রাখতে হবে, গোটা ভারতে প্রতি ইউনিট ইন্টারনেটের খরচ বিশ্বের বহু দেশের চেয়ে কম। ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহার লাফিয়ে বাড়ছে। 

কাদের হাতে বৃদ্ধি

ভারতের ৬৫ শতাংশ জনসংখ্যা এখন ৩৫ বছরের কম বয়সি। গড় ভারতীয়র বয়স এখন ২৯। এই জনসংখ্যাই ওটিটি-র টার্গেট। ওটিটি ব্যবহারকারীদের ৪০ শতাংশের গড় বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। আর ৩৫ বছরের সীমা ধরলে দেখা যাবে তার ৬৫ শতাংশ ওটিটি ব্যবহার করছেন। ফলে ওটিটি-র বিষয়বস্তুও তৈরি হচ্ছে এই বয়সসীমাকে মাথায় রেখে। মূলস্রোতের ছবি এবং টেলিভিশনের গল্পের কাঠামো ওটিটি-তে বদলাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই ট্রেন্ড চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্মই ভারতীয় বিনোদন জগতের প্রধান স্তম্ভে পরিণত হবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।