টেকসই বিদ্যুতের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ
২৪ এপ্রিল ২০১৯উগান্ডার একটি ছোট শহর এক ঢিলে দুই পাখি মেরে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি করতে চায়৷সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কার্বন নির্গমন কমিয়ে হিমবাহের সুরক্ষার মাধ্যমে পানির সরবরাহও নিশ্চিত করতে চান শহরের মেয়র৷
কাসেসে জেলার ছোট্ট গ্রাম কাওদা৷ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ৷ রবিবার অনেক মানুষ গির্জায় প্রার্থনা করতে যান৷ রাস্তার পাশে কেবেল বা তার জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের অংশবিশেষ৷ কিন্তু দেশের জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ তার আওতায় পড়েন৷
পুনর্বব্যবাহারযোগ্য জ্বালানীর উদ্যোগ
কাসেসে শহরের মেয়র কাবিয়াঙ্গা গডফ্রি বালুকু কিমে সেখানে অনেক পরিবর্তন আনতে চান৷ যেমন তিনি ‘তাদোবাস' নামের কেরোসিন বাতি পুরোপুরি দূর করতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘টিনের এই বাতি প্রচুর পরিমাণ কার্বন মনোক্সাইড সৃষ্টি করে৷ প্যারাফিন ব্যবহার না করেও এই অবস্থা৷ প্যারাফিনের দাম বেশি হওয়ায় তারা ডিজেল ব্যবহার করে৷ ডিজেল আরও খারাপ৷ গোটা এলাকায় এই বাতি কার্বন নির্গমনের সবচেয়ে বড় উৎস হওয়ায় আমরা সেগুলি বিদায় করতে চাই৷''
কাবিয়াঙ্গা এমনকি শহরের সবচেয়ে বয়স্ক ঝাড়ুদারকেও চেনেন৷ গোটা শহর তাঁকেও ভালোভাবে চেনে৷ তিনি সবার মনে নিজের আইডিয়া সম্পর্কে উৎসাহ জাগাতে চান৷ ২০২০ সালের মধ্যে তিনি কাসেসে জেলায় শুধু পুনর্বব্যবাহারযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চান৷ আশেপাশের রোয়েনজোরি অঞ্চলের কুয়াশায় ঢাকা পরিবেশের স্বার্থে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি৷ কাবিয়াঙ্গা মনে করেন, ‘‘আমরা শতভাগ পুনর্বব্যবাহারযোগ্য জ্বালানীর পথে যেতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ আমরা হিমবাহ বাঁচাতে চাই৷ আমাদের বানিয়া রোয়েনজুরু বলা হয়, যার অর্থ ‘বরফের মানুষ'৷ যে হারে বরফ কমে চলেছে, সে দিকে নজর দিলে খুব খারাপ লাগে৷ প্রযুক্তিবিদরা আমাদের বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বরফ পুরোপুরি লোপ পাবে৷ তাই হিমবাহ ও আমাদের পরিচয় রক্ষা করতে আমরা শতভাগ পুনর্বব্যবাহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷''
হিমবাহ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা
কাবিয়াঙ্গা পাহাড়ের চূড়ার ছবি সংগ্রহ করেছেন৷ তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, বরফ কীভাবে গলে যাচ্ছে৷ রোয়েনজোরি পাহাড় ও তার বরফ এখানকার মানুষকে শুধু তাদের নাম দেয় না, এই পর্বত মানুষের জীবনের ভিত্তি, অর্থাৎ পানির প্রধান উৎস৷ সেই সম্পদ রক্ষা করতে গোটা কাসেসে জেলায় শতভাগ পুনর্বব্যবাহারযোগ্য জ্বালানি চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ এমনকি স্কুল ও হাসপাতালেও কোনো ব্যতিক্রম করা হবে না৷ প্রধানত সৌর বিদ্যুতই জ্বালানির চাহিদা মেটাবে৷
এর ফলে কতটা পরিবর্তন আসবে, জেলা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি জোসেফ কাটসোয়েরা তা অঙ্ক কষে দেখেছেন৷ পৌর কর্তৃপক্ষের কর্মী হিসেবে তিনিই এই প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন৷ জোসেফ বলেন, ‘‘তাদোবার জায়গায় একটি সোলার কিট এলে সপ্তাহে ৯.৫ মেট্রিক টন কার্বন নির্গমন কমে যাবে৷ অর্থাৎ ৫২ সপ্তাহ ধরে সব মানুষ সৌরশক্তি ব্যবহার করলে আমরা সব মিলিয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন কার্বন নির্গমন কমাতে পারবো৷''
সৌরশক্তির প্রসার
এরই মধ্যে গোটা জেলার প্রায় ৮ শতাংশ বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে৷ হারুনা পরিবার তাদের মধ্যে রয়েছে৷ এমন এক সৌর প্রণালীর দাম প্রায় ২০০ মার্কিন ডলার৷ প্রায় দু'বছর ধরে সঞ্চয় করে পরিবারটি সেটি কেনার সামর্থ্য অর্জন করেছে৷ কফি ও তুলার মতো লাভজনক চাষের জন্য পর্যাপ্ত জমি থাকায় তারা এমনটা করতে পেরেছে৷ সেইসঙ্গে নতুন এক আয়ের উৎসও যোগ হয়েছে৷ চাষি হিসেবে মুইন্দো হারুনা বলেন, ‘‘আমি কাজের জন্য সৌর বাতি ব্যবহার করছি৷ এখন আমার খেতে ভ্যানিলার ফলন হচ্ছে৷ আমি সৌর প্যানেল থেকে তারের মাধ্যমে বাগানেও আলোর ব্যবস্থা করেছি৷ চোরেরা বাগানে আলো দেখলে ভয় পায়৷ আলোর কারণে তারা ভ্যানিলা চুরি করতে ভয় পায়৷''
সৌরশক্তির কল্যাণে গোটা পরিবার ব্যয় কিছুটা কমাতে পেরেছে৷ আগে বাতির জন্য তেল কিনতে হতো৷ এখন সেই অর্থ দিয়ে সন্তানদের স্কুলের খরচ মেটানো হচ্ছে৷ তারা সন্ধ্যাবেলায়ও পড়াশোনা করতে পারছে৷
কণ্টকিত পথ
শতভাগ পুনর্বব্যবহারযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা থেকে গোটা জেলা এখনো বেশ দূরে রয়েছে৷ বিইরা পরিবারের মতো জেলার দুই তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো রাতে কেরোসিন বাতির উপর নির্ভর করে৷
সহজ শর্তে ঋণ বা অন্য কোনো সাহায্য কর্মসূচি এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে৷ কিন্তু সেখানে এমন সুযোগ খুবই কম৷ মানুষের দারিদ্র্যের কারণে কি তাহলে এই প্রকল্প বিফল হবে? জেলা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি জোসেফ কাটসোয়েরা বলেন, ‘‘এটা সত্যি বড় চ্যালেঞ্জ৷ আমরা হয়তো ২০২০ সালের মধ্যে পুরোপুরি লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো না৷ কিন্তু রূপায়ণের পর্যায়ে আমরা অনেক শিক্ষা পেয়েছি৷ ২০৪০ সালের মধ্যে শতভাগ সাফল্যের বিষয়ে আমরা আশাবাদী৷
অ্যালিস আজও সন্ধ্যায় কেরোসিনের বাতি জ্বালাচ্ছেন৷ তবে বিইরা পরিবারও হয়ত অদূর ভবিষ্যতে রাতে সৌর বাতি জ্বালাতে পারবে৷
লেয়া আলব্রেশট/এসবি