ঝুঁকির শহর ঢাকা
গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর দু জায়গায় দুটি দুর্ঘটনায় মারা যান ১১ জন৷ উত্তরার জসীমউদ্দিন রোডে ক্রেনের গার্ডারে চাপা পড়া গাড়িতে ৫ জন এবং চকবাজারে আগুনে পুড়ে ছয় জন৷ ঢাকায় অবশ্য ছোট-বড় মৃত্যু ঝুঁকি আরো অনেক আছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন
এক যুগেরও বেশি আগে ঢাকার পাঁচটি মার্কেট ও একটি বাসস্ট্যান্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ভবনগুলো হচ্ছে মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, গুলশান-২ কাঁচা মার্কেট, গুলশান-১ পাকা মার্কেট, কাওরানবাজার কিচেন মার্কেট, কাওরানবাজার ১ এবং ২ নং ভবন মার্কেট, কাওরানবাজার আড়ৎ ভবন ও রায়েরবাজার মার্কেট। ভবনগুলো ভেঙে ফেলার কথা থাকলেও এখনো কিন্তু ভাঙা হয়নি৷
ঢাকনাহীন ম্যানহোল
ঢাকার আমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে ওয়্যারলেস পর্যন্ত ফুটপাথে ৭-৮টি ঢাকনাহীন ম্যানহোল দেখা যায়৷ এমন ম্যানহোল ছড়িয়ে আছে প্রায় পুরো শহরেই৷ স্থানীয়রা বলেন, মাদকাসক্ত ভাসমান মানুষেরা ঢাকনা চুরি করে বিক্রি করে দেন আর তাতেই তৈরি হয় পথচারীর মারাত্ম দুর্ঘটনায় পড়ার ঝুঁকি৷
ঝুলে থাকা খোলা বৈদ্যুতিক তার
মহাখালী তিতুমীর কলেজের সামনে এভাবে জট পাকিয়ে ঝুলছে অসংখ্য বৈদ্যুতিক তার৷ যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষের তা নিয়ে যেন কোনো ভাবনাই নেই৷
ঝুকিপূর্ণ ভবনে ব্যবসা
মহাখালীর আমতলির রহমান ভবন নামের পাঁচতলা ভবনের নীচ তলায় মিষ্টি, চায়ের দোকানসহ একাধিক ব্যবসার কার্যক্রম চলছে। অথচ সেখানে এখনো ঝুলছে নোটিস, যেখানে লেখা হয়েছে যে বিআরটিসি বুয়েটের প্রতিবেদন অনুযায়ী ভবনটি ঝুকিপূর্ণ, তাই অবকাঠামোটি ভেঙে ফেলা হবে৷
নির্মাণাধীন ভবন
ঢাকার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার পীরেরবাগ রোডের একটি ভবনের পাঁচতলায় ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নির্মাণশ্রমিকেরা কোনো সুরক্ষা ছাড়াই ছাদের কিনারায় কাজ করছেন। এভাবে কেন মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে তা জানার জন্য প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত তত্ত্বাবধায়কের সাথে কথা বলতে চাইলেও তিনি কথা বলতে চাননি৷
পরিত্যক্ত হয়েও পরিত্যক্ত নয়
দুর্ঘটনাপ্রবণ, অতি ঝুকিপূর্ণ ভবনে কেন এখনো ব্যবসা করছেন জানতে চাইলে মহাখালী আমতলির পরিত্যক্ত ‘রহমান ভবন’ এর নীচতলার ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘‘আমার কপালে যদি থাকে বিল্ডিংয়ের নীচে চাপা পইড়া মরুম, তাইলে মরতেই হইবো, কারো কিছু করার নাই। মানুষ তো নিরাপদে থাইকাও মইরা যায়। দুর্ঘটনা ঘটলে কী আর করা যাবে?’’
মরলে টনক নড়ে
গত ৩০ মে সকাল ১০টায় মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে মেট্রোরেল স্টেশনের উপর থেকে ইট পড়ে সোহেল তালুকদার নামের এক জুয়েলারি কর্মী মারা যান। মেট্রোরেল প্রকল্পের নিরাপত্তারক্ষী মো. জুয়েল জানান, ওই দুর্ঘটনার পর উপরে ছাউনি দেওয়া হয়।
দায়সারা নিরাপত্তা
আগারগাঁও-শ্যামলী রোডের একটি নির্মাণাধীন ভবনের একদিকে সুরক্ষা ছাদ দেওয়া হলেও অন্যদিকে দেওয়া হয়নি। অথচ দুইদিকেই সাধারণ মানুষজন চলাফেরা করে। একদিকে ছাদ না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘‘এই দ্যাশে একদিকে দিসে যে হেইডাই তো বেশি। অন্যদিকে কবে দিবো হেই বিষয়ে কিছু জানি না।’’
আতঙ্কের নাম ক্রেন
গত ১৫ আগস্ট উত্তরার জসীমউদ্দিন সড়কে বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে ছিটকে গার্ডার এক গাড়িতে পড়লে নিহত হন একই পরিবারের পাঁচজন৷
অসচেতনতার ঝুঁকি
সাইনবোর্ড, ব্যানার লাগানোর কাজ করেন মোঃ ইকবাল হোসেন। কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়া এত উঁচুতে উঠে কেন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলি ছোটখাটো কাজ, এত নিরাপত্তাসামগ্রী কোম্পানিও দেয় না আর আমরাও পরি না। এতকিছু পরে তো কাজ করা যায় না।’’