1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জোটের নেতা হিসাবে খাড়গের নাম কেন বললেন মমতা?

২০ ডিসেম্বর ২০২৩

বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে খাড়গের নাম প্রস্তাব করেন।

https://p.dw.com/p/4aMxh
মুম্বইতে গত সেপ্টচেম্বরে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
ইন্ডিয়া জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে খাড়গের নাম প্রস্তাব করেছিলেন মমতা। ছবি: Niharika Kulkarni/NurPhoto/picture alliance

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই রাজনৈতিক চমক দিতে পছন্দ করেন। মঙ্গলবার ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকেও তিনি এই চমক দিয়েছেন। তিনি বৈঠকে ২৮ দলের ইন্ডিয়া জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম প্রস্তাব করেন।

মমতার যুক্তি ছিল, খাড়গে একজন অভিজ্ঞ নেতা। তিনি অনগ্রসর শ্রেণি থেকে উঠে এসেছেন। তাই তাকেই জোটের মুখ করে লড়ুক ইন্ডিয়া।

মমতার এই প্রস্তাব সমর্থন করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি বৈঠকে বলেন, খাড়গের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট ভোটে লড়লে তার কোনো আপত্তি নেই।

কিন্তু অন্য দলের নেতারা বিরোধিতা না করলেও তেমন উৎসাহও দেখায়নি।

তবে এই প্রস্তাবে জল ঢেলে দেন খাড়গে নিজেই। তিনি বলেন, আগে জোট জিতুক, তারপর প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা ঠিক করা যাবে। তিনি এই পদের জন্য উৎসাহিত নন।

খাড়গে যা বলেছেন

খাড়গে বলেছেন, তিনি গরিব মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতিতে এসেছেন। আগেভাগে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে হইচই করার কোনো দরকার নেই। ।

পরে সাংবাদিক সম্মেলনে খাড়গে বলেছেন, ''আমরা বিজেপি-কে হারাতে বদ্ধপরিকর। আমরা আগে সংখ্য়াগরিষ্ঠতা পেতে চাই। যদি পাই, তাহলে সাংসদরাই ঠিক করবেন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। আগে জোট জিতুক। তারপর তা ঠিক করা যাবে। এমপি না থাকলে প্রধানমন্ত্রীর কথা বলা অর্থহীন। আমরা আগে একজোট হয়ে জিততে চাই।''

মমতা কেন প্রস্তাব দিলেন?

এতদিন মমতা বলেছেন, জোট জিতলে তবেই প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা ঠিক করা হবে। আগে থেকে কাউকে সামনে রেখে লড়া হবে না। সেই মমতাই কেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে খাড়গের নাম প্রস্তাব করলেন?

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি-র মুখপাত্র প্রশ্ন করেছেন, তৃণমূলের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কেই জোটের মুখ ও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা উচিত। তারপর কি এমন হলো, যাতে তিনি খাড়গের নাম প্রস্তাব করলেন?

কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''মমতার আসল উদ্দেশ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে ঝগড়া লাগানো। তাই তিনি এরকম প্রস্তাব করেছেন।'' 

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এর পিছনে দুইটি কারণ থাকতে পারে। খাড়গে দলিত নেতা। একজন দলিতকে প্রধানমন্ত্রী করার কথা বলে মমতা তাদের মন জয় করার চেষ্টা করচেন। বিশেষ করে মমতার লক্ষ্য থাকতে পারে মতুয়া ভোট। যে ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে আছে।''

শুভাশিসের মতে, দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, ''রাহুল গান্ধীর নাম যাতে না আসে সেটা নিশ্চিত করা। খাড়গের নাম এলে রাহুল বা গান্ধী পরিবারের কেউ তার বিরোধিতা করতে পারবে না।''

সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''বিজেপি সবসময় রাহুলকে আক্রমণ করে। রাহুলই তাদের মাথাব্যথার কারণ। সেই রাহুলকে রুখতেই এভাবে খাড়গের নাম প্রস্তাব করা হতে পারে।''

জোটের সিদ্ধান্ত

বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। রাজ্য নেতারা এই কাজটা করবেন।

কংগ্রেস জোটের আসন সমঝোতার বিষয়টি দেখার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। সেই কমিটিতে দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলোত ও ভূপেশ বাঘেলকে রাখা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে মুকুল ওয়াসনিককে।

কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতাদেরও দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছে। সেখানে তাদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে কথা হবে। এর আগে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর বিষয়টি নিয়ে একদফা কথা হয়েছে। তবে প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নানের মতো নেতারা শারীরিক কারণে সম্ভবত দিল্লি আসবেন না। এমনিতে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের একটা বড় অংশ এই জোটের পক্ষে নন।

মমতা একদিন আগেই বলেছেন, রাজ্যে কংগ্রেস মাত্র দুইটি আসনে গত লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিল। তিনি যে কংগ্রেসকে খুব বেশি আসন ছাড়বেন না, সেটাও স্পষ্ট।

এছাড়া ঠিক হয়েছে, আগামী ২২ ডিসেম্বর সংসদ থেকে ১৫১ জন সাংসদকে বহিষ্কার করার বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে  ইন্ডিয়া জোট বিক্ষোভ দেখাবে।

কংগ্রেস আগামী ২৮ ডিসেম্বর নাগপুরে জনসভা করছে। কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে ভাষণ দেবেন। জানুয়ারিতে রাহুল আবার 'ভারত জোড়ো যাত্রা'-ও শুরু করবেন।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই)