‘জোক' মানে রসিকতা নয়!
২৫ অক্টোবর ২০১৫বিশেষ করে জিডিআর'এর হর্তাকর্তাদের নিয়ে যে সব জোক, রীতিমতো এজেন্ট পাঠিয়ে সেগুলো জোগাড় করত পশ্চিম জার্মানির গুপ্তচর সংস্থা বিএনডি৷ এমনকি পুব থেকে পশ্চিমে যে সব জার্মানরা পালিয়ে আসতেন, তাদেরও গম্ভীর মুখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো : ‘নতুন জোক কিছু শুনলেন?'
বিএনডি'র সাবেক প্রধান হান্স-গেয়র্গ ভিয়েক নাকি এককালে খোদ চ্যান্সেলর হেলমুট কোল'কে এই সব জোকের কলেকশান ফরোয়ার্ড করতেন এই বলে যে, কখনো-সখনো স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক ব্যঙ্গ-পরিহাস থেকে মানুষের দুঃখকষ্টের কথা অনেক ভালোভাবে বোঝা যায়৷
দুই জার্মানির পুনর্মিলনের সুদীর্ঘ ২৫ বছর পরে আজ সেই সব ‘গুপ্ত' নথিপত্র আম জনতার জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ তাই ইতিহাসবিদ হান্স-হের্মান হ্যার্টলে এবং সাংবাদিক হান্স-ভিলহেল্ম জাউরে ‘‘আউসগেলাখ্ট'' বা ‘ঠাট্টার পাত্র' নাম দিয়ে একটি সংকলন প্রকাশ করেছেন৷
রাজনৈতিক জোকের একটা মুশকিল হল এই যে, অনেক ক্ষেত্রেই বেদনা হাসি দিয়ে ঢাকা থাকে, হাসি খুঁড়লেই সেই বেদনা বেরিয়ে আসে৷ আশির দশকের সূচনায় কর্মসূত্রে আমাকে প্রাগে থাকতে হয়েছিল প্রায় বছর দেড়েক৷ তখন যে সব রাজনৈতিক জোক শুনেছি, তার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে৷ আগেই বলে রাখছি, এগুলো আজ আমার স্মৃতির অংশ হলেও, আদত কপিরাইট যে কার, তা তখনও জানতাম না, আজও জানি না৷
নামে বলে কম্যুনিস্ট ভ্রাতৃত্ব, কিন্তু পূর্ব জার্মানির জার্মানদের সম্পর্কে (সে আমলের) চেকোশ্লোভাকিয়ার মানুষজনের ধারণা খুব বন্ধুসুলভ ছিল না৷ তাদের চাপা বিরূপতার আন্দাজ পাওয়া যেতো পূর্ব জার্মানির প্লাস্টিকের গাড়ি ‘ট্রাবান্ট' সম্পর্কে চেকদের নানা জোক শুনে৷ গোটা দুয়েক উদাহরণ দেওয়া যাক৷
ট্রাবান্ট গাড়িতে ব্রেক কষলেই আবার গাড়ি থামিয়ে নেমে কি যেন একটা ঠিক করে নিতে হয়৷ কেন জানেন? ট্রাবান্ট গাড়িতে তো ব্রেক নেই, আছে চাকায় চুয়িং গাম লাগানো৷ কাজেই ব্রেক কষলে, নেমে সেটাকে ছাড়িয়ে নিতে হয়৷ অথবা ধরুন: ট্রাবান্ট গাড়ি নাকি মার্সিডিজের আদলে তৈরি? হ্যাঁ, মার্সিডিজের অ্যাশট্রের আদলে৷
অবশ্য পণ্য সরবরাহের দিক থেকে কম্যুনিস্ট পোল্যান্ডের অবস্থা ছিল নাকি সবচেয়ে খারাপ৷ একবার প্রাগে একটি ডগ শো বা সারমেয় প্রদর্শনী হচ্ছে, ইউরোপের নানা দেশ থেকে কুকুররা এসেছে, তাদের রাখা হয়েছে বিভিন্ন কেনেল বা খাঁচায়৷ একটি কেনেলে ভাগ্যক্রমে পড়েছে এক ফরাসি কুকুর, পূর্ব জার্মানি থেকে আসা একটি কুকুর ও পোল্যান্ডের একটি কুকুর৷ পরদিন সকালে ফরাসি কুকুরটি ভোরবেলায় উঠে ভৌ ভৌ করছে৷ দেখে বাকি দুই সারমেয় বলছে: তুমি কি করছ ভাই? ফরাসি কুকুরটি বলছে: ‘আমি হাঁকডাক করে আমার দিনের বরাদ্দ মাংস দাবি করছি৷' শুনে পূর্ব জার্মানির কুকুরটির বলছে: ‘হাঁকডাক করে দাবি করাটা আবার কি ব্যাপার?' আর পোল্যান্ডের কুকুরটি বলছে: ‘ভাই, মাংস কা'কে বলে?'
রাজা নাটকে ঠাকুরদাদা বলেছিলেন, লোকজনের স্বভাবই ঐ৷ যা শুনে চোখের জল বেরিয়ে যায়, তাই শুনেই ওরা হাসে৷ জোক আরকি!