আশীর্বাদ না অভিশাপ?
৩০ মে ২০১৩সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্য সভার সদস্য প্রবীণ আইনজীবী ৮৯ বছর বয়সি রাম জেঠমালানি বাবংবার দলের হুইপ অমান্য করায়, তাঁকে ছয় বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়৷ এখানেই থেমে থাকেনি দল৷ হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে, এরপরও তিনি যদি দল-বিরোধী কাজকর্ম চালিয়ে যান, তাহলে তাঁকে সাংসদ পদও খোয়াতে হবে৷
দল-বিরোধী কী করেছিলেন রাম জেঠমালানি? প্রথমত, সাবেক বিজেপি সভাপতি নিতীন গডকড়ি বিরুদ্ধে আনা তাঁর ব্যবসায়িক লেনদেনে দুর্নীতির অভিযোগ জেঠমালানি সমর্থন করেছিলেন জোরেসোরে৷ সেই বিতর্কে নিতীন গডকড়িকে শেষ পর্যন্ত ইস্তফা দিতে হয়৷ নতুন সভাপতি হন রাজনাথ সিং৷ এখানেই শেষ নয়, সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দলের নেত্রী সুষমা স্বরাজ এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় দলের নেতা অরুণ জেটলিকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন তিনি৷ শুধুমাত্র এ জন্য যে, তাঁরা কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই-এর নতুন ডিরেক্টর নিয়োগে আপত্তি জানিয়েছিলেন৷
এই বহিষ্কারে পদ্ধতিগত ত্রুটির উল্লেখ করে জেঠমালানি এক চিঠি দিয়ে দলকে বলেছেন, অর্বাচীনের মতো এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত দলকে ঠেলে দেবে আত্মহত্যার দিকে৷ দলের দুর্নীতিবাজ নেতা ও তাঁদের সহযোগীদের উল্লাসের কারণ হবে৷ কর্নাটকে বিজেপির দুঁদে নেতা বি.এস ইয়েদুরাপ্পাকে বহিষ্কার করার পরিণামে দলকে যেভাবে খেসারত দিতে হয়, তা নিয়ে বিজেপির আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন আছে বলেন তিনি৷ উল্লেখ্য, ৫ই মে কর্নাটক বিধানসভা ভোটে শাসক দল বিজেপির শোচনীয় পরাজয়ের পেছনে ইয়েদুরাপ্পার ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ তাই রাজনৈতিক ওজনদার নেতা ইয়েদুরাপ্পাকে আবার দলে ফেরানোর চেষ্টা চলছে৷
জেঠমালানির ভাষায়, ‘‘আমি বস্তুত ২০০৪ সাল থেকে দলের বাইরে আছি৷ ২০১০ সালে আমাকে যখন দলে ফিরিয়ে আনা হয়, তখন আমি বলেছিলাম দেশের সমস্যা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পালটানোর অধিকার দলের নেই৷ পক্ষান্তরে দলের নীতি পালটানোর অধিকার আমার আছে৷''
২০১৪ সালে দেশের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গোড়া সমর্থক তিনি৷ কেন দল প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণা করছে, না তা নিয়েও দলের সঙ্গে ছিল তাঁর মতভেদ৷ জেঠমালানির মতে, একজন সৎ ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবে মোদী প্রধানমন্ত্রী পদের উপযুক্ত৷ তাঁর মতে, যারা ভারতীয় সংবিধান পড়েনি তারাই মোদীকে হিন্দুত্বাদী বলছে৷ তারা জানে না সংবিধানে বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতা এবং হিন্দুত্ববাদের প্রকৃত অর্থ কী৷ ভারতীয় সংবিধান খুঁটিয়ে পড়লে বুঝতে পারতেন যে, প্রকৃত অর্থে মোদী ধর্মনিরপেক্ষ৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জেঠমালানির রাজনৈতিক সমর্থনের ভিত দুর্বল৷ কাজেই সেদিক থেকে দলের বড় রকম ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷ তবে তাঁর সোজাসাপটা এবং বিতর্কিত বক্তব্য দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন৷ সে ক্ষমতা অবশ্যই রাখেন জেঠমালানি৷