বিএনপি আলোচনার অপেক্ষায়
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১জামুকার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘‘আমাদের কাছে পাঠালে আমরা দেখবো৷ আগে পাঠাক৷’’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমার জানা মতে এর আগে মুক্তিযুদ্ধের কোনো খেতাব বাতিলের সুপারিশ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি৷’’ আইনমন্ত্রী মনে করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করতে নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন হবে না৷
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ তিনি জেড ফোর্সের কামান্ডার ছিলেন৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেই তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয়া হয়৷ এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাব৷ এই খেতাব পেয়েছেন মোট ৬৮ জন৷ ১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে খেতাবের তালিকায় স্বাক্ষর করেন৷
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর এক পর্যায়ে সামরিক শাসক হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান৷ এরপর রাষ্ট্রপতি হন এবং রাজনৈতিক দল বিএনপি গঠন করেন৷
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধ কাউন্সিল (জামুকা)-র মঙ্গলবারের বৈঠকে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়৷ একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়৷
বৈঠকে বলা হয়, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করায় তার খেতাব বাতিল করা হবে৷
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘‘আমরা (জামুকা) জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এখন একটা কমিটি করে দিয়েছি৷ তারা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন যে কিভাবে বা কোন প্রক্রিয়ায় তা বাতিল করা হবে৷ এর সঙ্গে আরো কারো নাম আসবে কিনা তা-ও তারা দেখবেন৷ এরপর আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে ভোটিংয়ের জন্য পাঠাবো৷ জামুকা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ পরের বিষয় আইন মন্ত্রণালয় দেখবে৷’’
বঙ্গবন্ধুর যে খুনিদের খেতাব বাতিল করা হচ্ছে তাদের সবাই দণ্ডপ্রাপ্ত৷ তবে জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রস্তাব সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘‘কনভিক্টেড না হলেও এটা তো স্বীকৃত এবং সবাই জানে যে, জিয়াউর রহমান এবং খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত৷ এটা তো সর্বজনস্বীকৃত৷ সামাজিকভাবে তারা দোষী৷’’
এদিকে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব, মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে তাদের ফোরাম যুক্ত নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘জামুকা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত৷ এই প্রক্রিয়ার সাথে আমি কখনো যুক্ত ছিলাম না৷ কিন্তু আমি মনে করি, জিয়াউর রহমান ঐতিহাসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন৷ তিনি জেড ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন৷ পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কারণে তাকে বীর উত্তম খেতাব দেয়া হয়েছে৷’’
‘‘কিন্তু পরকর্তীকালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয়ে মুক্তিযদ্ধের আদর্শ, চেতনা এবং ইতিহাসের সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে যেভাবে পুনর্বাসিত করেছেন, তাতে আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের পর তাকে যে খেতাবটি দেয়া হয়েছে সেটা বহন করার ক্ষমতা বা সাধ্য তিনি রাখেন না৷’’
দণ্ডিত হওয়া না হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এটা জামুকা এবং সরকারের বিষয়৷ সেটা তারা চিন্তা-ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে৷’’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন মনে করেন, জামুকা এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ করলো তারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছে না, সরকারের ইচ্ছায় কাজ করছে এবং মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করছে, ‘‘জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের খেতাব দিয়ে গেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বাবা৷ পরবর্তী রাজনৈতিক ভূমিকা কার কেমন সেই বিবেচনায় এটা বাতিল হতে পারে না৷ খেতাব বাতিল করে তাকে কি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অস্বীকার করা যাবে?’’
তিনি মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মুক্তিযুদ্ধের খেতাবও বাতিল করা ঠিক না৷ বিএনপি খেতাব বাতিলের উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে৷’’
চেষ্টা করেও এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷