জার্মান নারীরা কর্মক্ষেত্রে যোগ্য হয়েও রয়েছে পিছিয়ে
৫ জুন ২০১১‘ওম্যান এ্যান্ড ওয়ার্ক' – মেলার মধ্যে দিয়ে কর্মজীবী নারীদের এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে৷ জার্মানিতে হাজার হাজার মহিলা রয়েছেন, যারা একসময় কাজ করেছেন, নিজের পছন্দমত পেশা বেছে নিয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন৷ কিন্তু কোন এক কারণে তারা পিছিয়ে আছেন৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিয়ের পর বাচ্চা-কাচ্চা সামলাতে অনেক মহিলাই আর ফুলটাইম কাজ করার সুযোগ পান না৷ অনেকে আবার দুই-তিন বছর দূরে থাকেন অফিস-আদালত থেকে৷ এই দীর্ঘ ব্যবধানই একজন কর্মজীবীকে নারীকে আগের পর্যায়ে আর নিয়ে আসতে পারে না৷ ‘ওম্যান এ্যান্ড ওয়ার্ক' মেলায় বেশ পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে, এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে৷ সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন অফিসে মহিলাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা থাকতে হবে৷
এই মেলার উদ্যোক্তা মেলানি ফোগেল বললেন, ‘‘প্রথমেই আমাদের দেখতে হবে, কোন কোন সংস্থা এই নিয়ম অনুসরণ করছে৷ কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা পিছিয়ে পড়ছে – এই বিষয় নিয়ে সংস্থাটি চিন্তিত কিনা৷ এই মেলায় যেসব সংস্থা অংশগ্রহণ করেছে তাদের প্রতিটিই মহিলাদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করেছে৷ এছাড়া রয়েছে আরো বেশ কিছু সংস্থা, যারা মহিলা কর্মচারীদের প্রতি শুরু থেকেই যত্নশীল৷''
তবে এর জন্য প্রথমে মহিলাদের এগিয়ে আসতে হবে৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজের সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে, কাজের পাশাপাশি বাচ্চা এবং সংসারের দেখাশোনা করা যায় – এই প্রমাণ একজন মহিলাকেই দিতে হবে, প্রতিষ্ঠানকে নয়৷ যে এসব মেনে নিয়ে কাজ করতে পারে, করার আগ্রহ প্রকাশ করে, সেই এই প্রতিযোগিতায় টিকে যেতে পারবে, জিততে পারবে৷
মেলায় এসেছিলেন ব্রিগিটে ক্লাইন৷ তিনি বললেন, ‘‘অনেক সংস্থাকে বলতে শোনা যাবে, ‘আমাদের এখানে ৪০ শতাংশ মহিলা কাজ করে৷' কিন্তু প্রশ্ন হলো - তারা কোন ধরণের কাজ করে ? এসব কোম্পানিতে গেলে কিন্তু দেখা যাবে, কর্মরত মহিলাদের কাজ হচ্ছে ফাইলপত্র গোছানো বা রিসেপশনে বসে টেলিফোন ধরা অথবা সেক্রেটারি হয়ে থাকা৷ এর বেশি কিছু নয়৷''
আসল কথা হল, জার্মান অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে হলে মহিলা কর্মজীবীর প্রয়োজন৷ কোন কোন ক্ষেত্রে তো তারা পুরুষদের চেয়েও বেশি যোগ্য৷ তাই তাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে৷ তাছাড়া, ভবিষ্যতে যে শুধু পুরুষরা ‘বস' হয়ে বসে থাকবে, এমনটা আশা করা যাচ্ছে না৷ কারণ জার্মানির জনসংখ্যা কমছে৷ শীর্ষস্থানে শুধু পুরুষ নয়, মহিলাদের নিয়ে আসার ওপর জোর দিচ্ছে ইইউ কমিশনও৷ প্রশ্ন হলো, এত চেষ্টার পরও কেন মহিলারা এগিয়ে আসতে পারছেন না ? কনসাল্টিং সংস্থায় কাজ করেন মাটিয়াস মুলার৷ তিনি সাধারণত চাকরির-ইন্টারভিউয়ে উপস্থিত থাকেন৷ তিনি খুব কাছ থেকে দেখেন প্রার্থীর উপস্থাপন ভঙ্গি৷
মাটিয়াস মুলার'এর কথায়, ‘‘আমি অনেক ইন্টারভিউয়ে অনেক কিছুই দেখেছি৷ ধরে নেয়া যাক– একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা৷ দুজনই সমানভাবে যোগ্য, দক্ষ৷ একই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে, রেজাল্টও বেশ ভাল৷ কিন্তু যখন কোন কিছু নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন পুরুষ প্রার্থী এমনভাবে উত্তর দেবে, যে মনে হবে জন্ম থেকেই এই কাজটি সে করে আসছে৷ এই কাজটি কীভাবে আরো ভালমত করা যায়, সে বিষয়টি তার খুব ভালভাবে জানা আছে৷ অন্যদিকে মহিলা প্রার্থীকে একই প্রশ্ন কয়েকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করতে হবে৷ সে সঙ্কোচ নিয়ে উত্তর দেবে৷ আত্নবিশ্বাসের অভাব রয়েছে তা পরিষ্কার বোঝা যায়৷ একটি মেয়েকে লাজুক থাকতে হবে – এই বিষয়টি তখনও তার মাথায় কাজ করে৷ আর মূল সমস্যা এখানেই৷''
তবে মুলার জানান, নিজেকে যথাযথভাবে যোগ্য করে তুললে যে কোন মেয়ের ভিতরই আত্মবিশ্বাস আসবে৷ নারীদের জন্য কোটা আরো বাড়াতে হবে – এমন আলোচনার প্রয়োজন পড়বে না৷ তবে বিবাহিত মহিলাদের কাজে উৎসাহিত করতে হবে৷ সন্তান থাকা সত্ত্বেও যে কাজ করা যায় বা তার সুযোগ আছে, তা প্রমাণ করতে হলে দুই পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন