জার্মান অর্থনীতিতে তিন দিনের রেল ধর্মঘটের বহুমুখী প্রভাব
তিন দিনের রেল ধর্মঘট জার্মানির বাণিজ্য, পণ্য পরিবহণ, বন্দরের কর্মকাণ্ড, সেই সঙ্গে ভোক্তাদের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ এখানেই শেষ নয়৷ আরো জানুন ছবিঘরে...
বিকল্প নেই যাদের
জার্মানির রেল চালকদের ইউনিয়ন জিডিএল মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিনের ধর্মঘট ডেকেছে৷ এতে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল অপারেটর ডয়চে বানই নয় রেল কার্গো ব্যবহারকারী অন্য কোম্পানিগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে৷ জার্মানির পণ্য পরিবহণের দুই-তৃতীয়াংশই হয় সড়ক ব্যবহার করে৷ এক-পঞ্চমাংশ হয় রেলপথে৷ কিন্তু তার গুরুত্ব কম নয়৷ বিশেষ করে ইস্পাত, রাসায়নিক, কয়লাসহ এমন কিছু পণ্য রেলে পরিবহণ হয় যার আর কোনো বিকল্প নেই৷
অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত
রেলপথে পণ্য পরিবহণের অর্ধেক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল কোম্পানি ডয়চে বানের দখলে৷ বাকি অর্ধেক পরিচালনা করে বেসরকারি কোম্পানিগুলো৷ তাদের চালকেরা এই ধর্মঘটে না থাকলেও এর নেতিবাচক প্রভাব আছে কোম্পানিগুলোর উপরে৷ কেননা ডয়চে বানের চালকেরা ছাড়াও ধর্মঘট আহ্বান জানানো হয়েছে রেল লাইনের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং সুইচ টাওয়ারের দায়িত্বে থাকা কর্মীদেরও৷ তারা যোগ দিলে কোনো ট্রেনই চালানো যাবে না৷
বন্দরে কনটেইনার জট
ধর্মঘটে শুধু রেল না, বন্দরের ব্যবস্থাপনার উপরেও প্রভাব পড়ছে৷ কনটেইনার পরিবহণ না হওয়ায় বিভিন্ন বন্দরে জট তৈরি হচ্ছে৷ হামবুর্গ বন্দরের সব কনটেইনারই রেলপথে পরিবহণ হয়৷ এই মুহূর্তে স্থলপথে পরিবহণ সেখান থেকে সম্ভব নয়৷ সময়মত পণ্য পরিবহণ করা না গেলে ইউরোপের অন্য বন্দরগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা৷
ধাক্কা অর্থনীতিতে
ভারি শিল্পের উপর নির্ভরশীল জার্মানির অর্থনীতি৷ এই ধর্মঘটে শিল্প খাতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগছে৷ পণ্য সরবরাহ চেইনে জট লাগার কারণে শিল্পের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে৷ এর অর্থনৈতিক প্রভাব কতটা তীব্র হবে তা এখনই অবশ্য ধারণা করা যাচ্ছে না৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অগ্রিম মজুদ রেখে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে৷
ক্ষতির পরিমাণ কত
তিনদিনের এই ধর্মঘটের ক্ষতি কত তা পরিমাপ করাটা সহজ নয়৷ এক হিসাব অনুযায়ী দৈনিক ক্ষতির অঙ্ক কম-বেশি ১১ কোটি ডলার৷ তার চেয়েও বড় বিষয় হলো জার্মানির রেল পরিবহণ ব্যবস্থার দুর্নাম এতে আরো পাকাপোক্ত হলো৷ ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার পণ্য পরিবহণে রেলের অবদান ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায়, যা বর্তমানে ১৯ শতাংশ৷ এমন পরিস্থিতি হলে সেই লক্ষ্য যে পূরণ হবে না তা বলা বাহুল্য৷
কেন ধর্মঘট
কর্মীদের ইউনিয়ন জিডিএল কর্তৃপক্ষের কাছে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৩৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৫ ঘণ্টা করার দাবি জানিয়েছে৷ তাদের দাবি অনুযায়ী, এজন্য মজুরি কাটছাট করা চলবে না এবং মাসিক বেতন ৬০০ ডলারের বেশি বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয় করে বোনাস দিতে হবে৷ কিন্তু কর্মী সংকট থাকায় কর্মঘণ্টা হ্রাসের দাবি মেনে নিতে রাজি নয় ডয়চে বান৷ তবে ৩২ মাসের জন্য মজুরি ১১ শতাংশ বাড়াতে রাজি তারা, যা প্রত্যাখ্যান করেছে জিডিএল৷