জার্মানীর সামাজিক গণতন্ত্রী দলে প্রাসাদ বিপ্লব
৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮সামাজিক গণতন্ত্রীদের এমনিতেই দিন ভালো যাচ্ছিল না৷ প্রথমতঃ বার্লিনের বৃহত্ জোটে রক্ষণশীল সি.ডি.ইউ.-সি.এস.ইউ.-এর সঙ্গে ঘর করা৷ দ্বিতীয়তঃ, ঐ একই বৃহত্ জোট থেকে দৃশ্যতঃ চ্যান্সেলর আঙ্গেলো মের্কেলের ছছল-বছল৷ তাঁর সুনাম এবং জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে৷ জনমত সমীক্ষায় রক্ষণশীলরা সামাজিক গণতন্ত্রীদের চেয়ে দশ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে৷ জোট সরকারের অসুখী দাম্পত্য থেকে যদি কোনো এস.পি.ডি. রাজনীতিক কিছুটা নাম করে থাকতে পারেন, তো তিনি হলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এবং কালে যে তিনিই এস.পি.ডি.-র চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হবেন এবং ২০০৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে আঙ্গেলা মের্কেলের সঙ্গে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হবেন, সেটাও আন্দাজ করা যাচ্ছিল৷
সর্ষের মধ্যে ভূত
কিন্তু এস.পি.ডি.-র অভ্যন্তর থেকেই কে বা কারা ব্যাপারটাকে ফাঁস করে দেয়, বিশেষ করে মিডিয়ার কাছে৷ এর লক্ষ্য অবশ্যই দলীয় সভাপতি কুর্ট বেক-এর কর্ত্তৃত্বকে ক্ষুণ্ণ করা, যে বেক না পেরেছেন তাঁর নিজের, না দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে৷ উপরন্তু আবার হেসেন রাজ্যে আন্দ্রিয়া উপসিলান্তিকে বামদলের সঙ্গে দহরম-মহরম করার অনুমতি দিয়েছেন৷ কাজেই গতকালের পুরো নাটকটা স্টাইনমায়ারের অভিষেক, না বেক-এর বনবাস, কিসের কল্যাণে, তা বলা শক্ত৷
মুন্টের প্রত্যাবর্তন
ফ্রান্ত্স্ মুইন্টফেয়ারিং-এর প্রত্যাবর্তনও সেরকম একটা চমকপ্রদ ব্যাপার৷ স্ত্রী মরণাপন্ন বলে হঠাত্ এস.পি.ডি.-র সভাপতিত্ব থেকে বিদায় নেন৷ এবার পত্নীবিয়োগের পরে সেরকমই হঠাত্ ফিরে আসছেন৷ তিনি স্টাইনমায়ারের মতো শ্রোয়েডারের সংস্কারপন্থীদের দলে হলেও, দলের সদস্য এবং সমর্থকদের কাছে তাঁর আদর ও কদর সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না৷ ওদিকে স্টাইনমায়ারকে কখনো ইলেকশানে নামতে হয়নি৷ কাজেই স্টাইনমায়ার-মুইন্টেফেয়ারিং জুটিতে কাজ হতে পারে বলেই পন্ডিতরা মনে করছেন৷
স্নাইপার
যে কোনো রাজনৈতিক দলের আসল বিপদ আসে সাধারণতঃ দলের ভিতর থেকে৷ কাজেই এস.পি.ডি.-র এই প্রাসাদ বিপ্লবে কারা খুশী নয়, তাদের কথাটাও ভাবতে হয়৷ যেমন দলের সংসদীয় গোষ্ঠীর নেতা পেটার স্ট্রুক, যিনি পরোক্ষভাবে বেক-এর বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে ফুস-ফুস, গুজ-গুজের কথা বলে আসছেন, বেক নিজে তাঁর একমাত্র লিখিত বিবৃতিতে যে অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেছেন৷ দলের বামঘেঁষা অংশের এক নেত্রী আন্দ্রিয়া নালেস, যিনি আবার এক উপসভাপতিও বটে, তিনিও বলেছেন স্নাইপিং, অর্থাত্ দলের মধ্যে গোপন তীরন্দাজির কথা৷ এবং যাকে নিয়ে বেক-এর এ্যাতোদিনের মাথাব্যাথা, সেই আন্দ্রিয়া উপসিলান্তি নাকি মুইন্টোফেয়ারিং-কে সভাপতি করার সপক্ষে ভোট দেননি৷
অর্থাত্ এই প্রাসাদ বিপ্লব দিয়েই এস.পি.ডি.-র অন্তর্দ্বন্দ্বের সমাপ্তি ঘটল, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই৷