জার্মানির সবচেয়ে প্রিয় ইস্টার ঐতিহ্য
ফোয়ারা, কুশপুতুলে আগুন, জ্বলন্ত চাকা এবং লুকিয়ে রাখা ডিম, বাভেরিয়া থেকে হামবুর্গ পর্যন্ত জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি ইস্টার ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিঘরে।
ইস্টারের রঙিন ডিম
জার্মানরা ইস্টারের ডিম নানা রঙে রাঙিয়ে তুলতে পছন্দ করেন। ব্রান্ডেনবুর্গের লোয়ার লুসাটিয়া অঞ্চলের একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দ্য সোর্ব মোম দিয়ে ডিমকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলার শিল্পের জন্য বিখ্যাত। স্লাভিক এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং তাদের রীতিনীতি সম্পর্কে আরও জানতে পারবেনল ল্যোবেনাউ-এর স্প্রিভাল্ড এর জাদুঘরে।
ইস্টার ডিমের গাছ
ঐতিহ্যগতভাবে জার্মানরা রঙিন ইস্টার ডিম দিয়ে গাছ বা ফুলের তোড়া সাজান। সালফেল্ড এর ইস্টার ডিমের গাছ এই প্রথাকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই গাছ সাজানো হয়েছে ১০ হাজার রঙিন ইস্টার ডিম দিয়ে। থুরিংগিয়ার সালফেল্ডের একটি পরিবার ১৯৬৫ সালে এই ঐতিহ্যের শুরু করে। তখন থেকে শহরটিতে এই ডিমের গাছ সাজানোর প্রথা চালু রয়েছে। প্রতি বছর এই গাছটি দেখতে অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন শহরটিতে।
ইস্টারের শোভাযাত্রা
আপার লুসাটিয়ার ক্যাথলিক অধ্যুষিত অঞ্চলে অন্যতম একটি সোর্বিয়ান প্রথা হচ্ছে ইস্টারের এই শোভাযাত্রা। যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থানের খবর ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সোর্ব সম্প্রদায়ের পুরুষরা উৎসব সুশোভিত ঘোড়ায় চড়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। প্রতি বছর আপার লুসাটিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া এই শোভাযাত্রা দেখতেও দূরদূরান্ত থেকে আসেন অনেক পর্যটক।
ছুটিতে হাঁটতে বের হওয়া
ইস্টারের ছুটিতে অনেক জার্মানই হাঁটতে বের হতে পছন্দ করেন। এই ঐতিহ্যের জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে আংশিকভাবে অবদান রয়েছে ইয়োহান ভুল্ফগাং ফন গোয়েঠে-এর আইকনিক কবিতা ‘আউটসাইড দ্য সিটি গেট’-এর। এই কবিতায় ইস্টারের রোববার বিকেলে হাঁটার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
ইস্টার ডিমের সন্ধানে
শিশুদের জন্য ইস্টারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, ইস্টারের খরগোশের লুকিয়ে রাখা মিষ্টি এবং ডিমের সন্ধানে অভিযান। ভাইমার নামের একটি শহরে প্রতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই শিশুদের জন্য এই ইস্টার অভিযানের আয়োজন করা হয়।
ইস্টারের খরগোশ
জার্মানিতে আনুমানিক ১৭শ শতক থেকেই ইস্টারের খরগোশের ঐতিহ্য রয়েছে। এই খরগোশ বিভিন্ন স্থানে ইস্টারের রঙিন ডিম এবং ছোট ছোট উপহার লুকিয়ে রাখে, এমন উপকথা চালু রয়েছে। খরগোশের আকৃতির এইসব উপহারের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয় মিষ্টি এবং চকলেট।
ইস্টারের আগুন
ইস্টারে আগুন জ্বালানোর ঐতিহ্য বলতে গেলে পুরো জার্মানি জুড়েই চালু রয়েছে। এটি একটি পৌত্তলিক প্রথা, যা বসন্তের আগমনের উদযাপন করতো। পরবর্তীতে খ্রিস্টানরা এই প্রথা গ্রহণ করে এবং একে যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থানের প্রতীক হিসাবে উদযাপন করে। জার্মানিতে সবচেয়ে বড় ইস্টার আগুনগুলোর একটি জ্বালানো হয় হামবুর্গের এলবে নদীর তীরে।
চাকায় আগুন
এটিও একটি পৌত্তলিক প্রথা। বসন্তকে স্বাগত জানানোর জন্য চাকায় আগুন জ্বালিয়ে পাহাড়ের নীচের দিকে সেটিকে গড়িয়ে দেয়া হতো। নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের ল্যুগডে শহরে এখনও ইস্টার রোববারের এই ঐতিহ্যটি অব্যাহত রয়েছে। ওক কাঠ দিয়ে তৈরি এই ইস্টার চাকা ভেতরে খড় দিয়ে ভরা থাকে।
গুড ফ্রাইডের শোভাযাত্রা
জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর বেনশাইমে শোভাযাত্রা দেখার জন্য জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। এই শোভাযাত্রায় যিশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কাহিনি চিত্রায়িত করা হয়। দক্ষিণ ইটালি থেকে জার্মানিতে আসা অভিবাসী শ্রমিকেরা এই ঐতিহ্য শুরু করেছিলেন।
ইস্টারের ফোয়ারা
ইস্টারের ডিম দিয়ে ফোয়ারা ও কুয়া সাজানোর ঐতিহ্য বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাভারিয়ার ফ্রাংকোনিয়াতে শুরু হয়েছিল। ধারণা করা হয় যে পাহাড়ি, মনোরম এই অঞ্চলের প্রতি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই এই ঐতিহ্য চালু করা হয়। এই উৎসবে জল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জল জীবনের জন্য অপরিহার্য এবং ইস্টারে যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থানের প্রতীক।