1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির ডানপন্থি রাইখসব্যুর্গার কতটা বিপজ্জনক?

৮ ডিসেম্বর ২০২২

জার্মানির অতি ডানপন্থিদের কয়েকজন বড়সড় অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। এই ব্যক্তিদের 'টার্গেট' করে একটি বড় মাপের অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এটা কোন ধরনের আন্দোলন? এই আন্দোলন কি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি?

https://p.dw.com/p/4KdsD
ক্রয়োদশ হাইনরিখকে পরিকল্পিত রাইখসব্যুর্গার অভ্যুত্থানের পরে একটি জার্মান সরকারের প্রধান হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে
ক্রয়োদশ হাইনরিখকে পরিকল্পিত রাইখসব্যুর্গার অভ্যুত্থানের পরে একটি জার্মান সরকারের প্রধান হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছেছবি: Boris Roessler/picture alliance/dpa

"রাইখসব্যুর্গার"-এর একটি দল 'একটি দিন'-এর প্রস্তুতি নিতে কয়েক মাস ব্যয় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই দিনে তারা সরকার ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সকালে একটি বড় আকারের অভিযানে সাবেক সেনা এবং বুন্ডেসটাগের সাবেক সদস্য সহ বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেলের মতে, ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে, তারা গোপন বৈঠক করছে। একটি অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিতে গুলি চালানোর অনুশীলন করেছে। তার ধারণা,সন্দেহভাজনেরা সামরিক শক্তি ব্যবহার করার কথা ভেবেছে, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাও করেছে।

আমাদেউ আন্তোনিও ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সমাজবিজ্ঞানী টিমো রাইনফ্রাঙ্ক ডিডাব্লিউকে বলেন, "গ্রেপ্তার এবং তল্লাশির সংখ্যা আমাকে হতবাক করেছে।" জার্মানির অন্যতম প্রধান এই এনজিও ডানপন্থি চরমপন্থা, বর্ণবাদ এবং ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কাজ করে।

তার কথায়, "জার্মানিতে সত্যিকারের অভ্যুত্থানের সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ রাষ্ট্রীয় আদেশ এবং সংবিধান খুব কঠোর। কিন্তু এইসব লোকেরা বিশ্বাস করে এটা সম্ভব।এটাই প্রমাণ, তারা বিভ্রান্তির মধ্য়ে আটকা পড়েছে।"

অবশ্য রাইনফ্রাঙ্ক আশঙ্কা করছেন, ২০২০১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনের কাপিটলের মতো হামলা জার্মানিতেও সম্ভব হবে।

আন্দোলনকারীরা কী বিশ্বাস করে?

রাইখসব্যুর্গার জার্মান আইনি ব্যবস্থা এবং দেশের সংসদ ব্যবস্থা মানে না। তাদের বেশিরভাগই ১৮৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত 'জার্মান সাম্রাজ্য' নতুন করে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তা নিয়ে প্রচার করে। রাইখসব্যুর্গার বিশ্বাস করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী পশ্চিমি মিত্ররা, যারা নাৎসি জার্মানিকে পরাজিত করেছিল, তারা নাকি এখনও গোপনে শাসন করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, রাইখসব্যুর্গারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেখে দেশের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ চিন্তিত। ২০২২ সালের জুন মাসের রিপোর্টে দেশের গোয়েন্দা বিভাগ অনুমান করেছে, প্রায় ২১ হাজার ব্যক্তি এতে রয়েছেন। তাদের সংখ্যা বাড়ছে।

স্ব-ঘোষিত রাইখসব্যুর্গারের মধ্যে সহিংসতার সম্ভাবনা যথেষ্ট পরিমাণে বেশি। সেটি বিশেষ উদ্বেগজনক বলা হয়েছিল ওই রিপোর্টে। সেখানে জানানো হয়েছিল, রাইখসব্যুর্গারদের প্রায় ৫০০ জনের কাছে এখনো অন্তত একটি অস্ত্র রাখার অনুমতি রয়েছে।

আমাদেউ আন্তোনিও ফাউন্ডেশনের ২০১৮ সালের সমীক্ষা বলছে, রাইখসব্যুর্গার কিন্তু সমজাতীয় গোষ্ঠী নয়। এই শব্দটি "মতাদর্শবাদীদের একটি বৃহৎ, অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় পরিমণ্ডল" বোঝায়। সহিংসতা এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে তাদের প্রবণতা ভিন্ন। কিন্তু তারা সকলে বিশ্বাস করে, ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র নয়। তারা সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যাখ্যান করে।

২০২১ সালে প্রায় এগারোশ ৫০ জনকে রাইখসব্যুর্গার (বা মাত্র পাঁচ শতাংশের বেশি ব্যক্তিকে) চরম ডানপন্থি বলা হয়৷ কিন্তু আরো অনেকে চরম ডানপন্থি মতাদর্শের নানা উপাদান ব্যবহার করে কিংবা ইহুদিবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথগুলো বিশ্বাস করে৷

১৯৪৫ সালে শেষ হয় নাৎসি শাসন। সেই নাৎসিদের অধীনে দখলকৃত পূর্ব ইউরোপের অঞ্চলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে জার্মানির সীমানা বাড়ানো উচিত বলে মনে করে তারা।

রাইখসব্যুর্গার কতটা বিপজ্জনক?

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে রাইখসব্যুর্গারকে। হত্যা বা খুনের চেষ্টার দায়ে বেশ কয়েকজনের বিচার হয়েছে। ২০২০ এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশের গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে নথিভুক্ত অপরাধ মারাত্মক ভাবে বেড়েছে।

রাইনফ্রাঙ্ক বলেছেন, "রাইখসব্যুর্গার্সদের আদর্শের বীজে রয়েছে জঙ্গিবাদ। যেহেতু রাইখসব্যুর্গার সংবিধান এবং নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের বৈধতা স্বীকার করেন না। তাই সহিংসতার সঙ্গে কাজ করাকে বৈধ বলে মনে করে। এটাই তাদের আদর্শ।"

তিনি বলেন, "এরা এলোমেলো হামলা করার লোক নয়। তারা বিশেষভাবে নির্বাচিত স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মতো মৌলিক রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলাকে আক্রমণ করতে চায়।"

কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে রাইখসব্যুর্গের ব্যানার
কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে রাইখসব্যুর্গের ব্যানারছবি: Berlin gegen Nazis

কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিগত তিন বছরের বিক্ষোভের ফলে র‍্যাডিক্যালাইজেশন এবং রাইখসব্যুর্গার মতাদর্শের সমর্থকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন, 'ফ্রি গাইস্তা' (মুক্ত আত্মা) গোষ্ঠীর একটি বিক্ষোভে, বিক্ষোভকারীদের হাতের ব্যানারে লেখা ছিল: "সার্বভৌমত্ব। আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য।"

রাইনফ্রাঙ্ক বলেন, "বিষয়টি *যেন উগ্রপন্থা হয়ে উঠেছে।রাইখসব্যুর্গারের মূল ধারণা জনগণের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে। তারাও কেউ কেউ ভাবছে জার্মানি স্বাধীন নয় এবং নির্বাচিত সরকার সার্বভৌম নয়।"

একটি সাংগঠনিক ঘনিষ্ঠ নেটওয়ার্ক?

ফেডারেল পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের তদন্তে চিহ্নিত সন্দেহভাজনদের মধ্যে রয়েছেন জার্মান সশস্ত্র বাহিনীর স্পেশাল ফোর্সেস কমান্ড (কেএসকে)-এর একজন সেনা, বেশ কয়েকজন বুন্দেসভার রক্ষণশীলও।

চরম-ডানপন্থি পপুলিস্ট অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) পার্টির বুন্ডেসটাগের একজন সাবেক সদস্যও সন্দেহভাজনদের মধ্যে রয়েছে। একজন সাবেক পুলিশ অফিসার যিনি বরখাস্ত হওয়ার আগে লোয়ার স্যাক্সনির ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনিও সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন।

নিরাপত্তা সংস্থা এবং বুন্দেসভারের মধ্যে সক্রিয় ডানপন্থি নেটওয়ার্কগুলির বিষয়ে কয়েক বছর ধরে সতর্ক করেছেন পর্যবেক্ষকরা। ২০২০ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অ্যানেগ্রেট ক্র্যাম্প-কারেনবাউয়ার কেএসকে-এর একটি সম্পূর্ণ কোম্পানি বন্ধ করে দেন। যেখানে নিষিদ্ধ হিটলারি স্যালুট ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেখানে পার্টিতে ডানপন্থি সংগীত বাজানো হয়েছিল।স্যাক্সনির পুলিশ কোম্পানির এক সেনার বাড়িতে গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরকসহ একটি অস্ত্রের মজুদও খুঁজে পেয়েছে।

রাইনফ্রাঙ্ক বলেন, "নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের মধ্যে এসব রয়েছে। আমি অবাক। এই গ্রেপ্তারির ঘটনাগুলিকে খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এই সমস্যা যা বুন্দেসভার অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান করতে পারে না।"

লিসা হ্যানেল/আরকেসি