জার্মানির গাড়ি শিল্পে দুর্দিনের ইঙ্গিত
জার্মানির অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি গাড়ি শিল্প৷ প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ধাক্কায় গত কয়েক বছর কঠিন সময় পার করছিলেন নির্মাতারা৷ পরিস্থিতি আরো নাজুক করে তুলেছে করোনা৷
অর্থনীতির ইঞ্জিন
জার্মানির জিডিপিতে ১০ ভাগ অবদান গাড়ি শিল্পের৷ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খাতটি নয় লাখ ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের জোগান দেয়৷ দেশটির গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) ব্যয়ের ৪০ ভাগও আসে অটো শিল্প থেকে৷
সুদিন শেষ!
দেশটির অটো শিল্পের এই সুদিন শেষ হতে চলেছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলছে গত কয়েক বছর ধরে৷ জার্মান ইকোনমিক ইন্সটিটিউট (আইডব্লিউ)-র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, দেশটির গাড়ি নির্মাতারা তাদের সেরা সময় পার করে ফেলেছেন৷ করোনা মহামারির কারণে এই খাত আর প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হিসেবে টিকে থাকছে না৷
সরকারি সহায়তা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাড়ি শিল্পে প্রণোদনা একটি আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে৷ বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি নির্মাণে ভর্তুকি, গবেষণা ও উন্নয়নে কর ছাড়াও বিভিন্ন সুবিধার জন্য রাজনীতিবিদদের উপর চাপ দিয়ে আসছিল নির্মাতারা৷ কিন্তু ঢালাও ভর্তুকি দিতে আর আগ্রহী নন সরকারি কর্মকর্তারা, কেননা, শুধু প্রণোদনা বহুমুখী এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়৷
সমস্যা বহুমুখী
ফোল্কসভাগেন আর ডাইমলারে মতো বড়দের জন্য প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের খরচ বহন আর বাজারে চাহিদা হ্রাস প্রধান সংকট৷ ফোল্কসভাগেন এর গল্ফ মডেল ৪৫ বছর ধরে ইউরোপের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গাড়ির তালিকায় ছিল শীর্ষে৷ গল্ফ এইট সেই অবস্থানটি হারিয়েছে ফরাসী রেনোর ক্লিও মডেলের কাছে৷ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের টেসলা, চীনের বিওয়াইডি এর মতো প্রতিষ্ঠানও জার্মানির কোম্পানিগুলোকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছে৷
যন্ত্রাংশ নির্মাতাদের টিকে থাকার লড়াই
বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি তৈরির হিড়িকে যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে আরো বিপদে৷ ব্যাটারি চালিত গাড়িতে লোহার মোটর ব্লকের আর প্রয়োজন হচ্ছে না৷ তাই চলতি বছর জারব্রুকেন নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্যের ঘোষণা দিয়েছে৷
ভবিষ্যত কী
এই শিল্পের ভবিষ্যত যে বিদ্যুত চালিত গাড়ি তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ যেমন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিঅ্যান্ড বলছে, বৈদ্যুতিক গাড়ির বর্তমান ১২০০ কোটি ইউরোর বাজার সাতগুণ বেড়ে আট হাজার ৪০০ কোটি হবে ২০৩০ সালে৷ এর মধ্যে প্রচলিত ইঞ্জিনের গাড়ি বিক্রি করেই এই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারবে কোম্পানিগুলো৷ কিন্তু সমস্যা হলো করোনা সেখানে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে৷
করোনার ধাক্কা
মহামারির আঘাতে শুধু জার্মানি নয়, গোটা ইউরোপের গাড়ি শিল্পই বড় ধাক্কা খেয়েছে৷ এপ্রিলে বিক্রি কমেছে ৭৬ ভাগ, আগস্টে ২০ ভাগ৷ জার্মান ইকোনমিক ইনস্টিটিউট বলছে, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াটি হবে ধীর গতির৷ এমন বাস্তবতায় জীবাস্ম জ্বালানিনির্ভর গাড়ি বিক্রি বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে নতুন স্কিম চালুর আবেদন জানিয়েছিল নির্মাতারা৷ এ নিয়ে সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে শিল্পের প্রতিনিধিদের বৈঠক হলেও নতুন সিদ্ধান্ত আসেনি৷